উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক (Sambhal Violence Case) সংঘর্ষের তদন্তে নয়া মোড়। পুলিশের সাথে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের যৌথ তদন্তে ঘটনাস্থল থেকে একাধিক কার্তুজের খোল উদ্ধার হয়েছে, যার মধ্যে কিছুতে লেখা আছে ‘মেড ইন পাকিস্তান’। এই উদ্ঘাটন অস্ত্রের উৎস নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
পাকিস্তানি কার্তুজের উপস্থিতি
২৪ নভেম্বর ঘটে যাওয়া হিংসার ঘটনায় ফরেনসিক দলের অনুসন্ধানে বিভিন্ন ধরণের কার্তুজের খোল উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ৯ মিলিমিটার একটি অকার্যকর শেল এবং একটি শেলের গায়ে ‘পিওএফ’ (Pakistan Ordnance Factories) চিহ্নিত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এটি স্পষ্ট করে যে সংঘর্ষে ব্যবহৃত কিছু গুলি পাকিস্তান থেকে এসেছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে দুটি ১২-বোর শেল এবং দুটি ৩২-বোর শেলও উদ্ধার হয়েছে। মোট ৬টি কার্তুজের খোল পাওয়া গেছে, যার মধ্যে একটি আমেরিকান এবং অন্যটি ‘এফএন স্টার’ চিহ্নিত। শেষের চিহ্নিত কার্তুজটি এখনও তদন্তাধীন।
সম্ভল হিংসার প্রেক্ষাপট
২৪ নভেম্বর শাহী জামা মসজিদের নীচে মন্দিরের অস্তিত্ব দাবি করে দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদের দ্বিতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা শুরু হয়। বারাণসী এবং মথুরার মতো ধর্মীয় স্থানগুলোর ঘটনাকে মাথায় রেখে এই দাবি সম্ভলে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভয় এবং ক্ষোভ তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, যখন বিক্ষোভকারীরা পাথর ছোঁড়া এবং গুলি চালানো শুরু করে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়।
এই হিংসায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৮ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনার পর মসজিদ সংলগ্ন এলাকা সিল করে তদন্ত শুরু করা হয়।
পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের দাবি
উত্তরপ্রদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি হিংসার কারণ এবং প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করছে। কমিটির প্রধান, এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবেন্দ্র কুমার অরোরা, ঘটনার তাৎক্ষণিক কারণ না কি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল, তা বিশ্লেষণ করছেন।
এই কমিটিতে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস কর্মকর্তা অমিত মোহন প্রসাদ এবং অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস কর্মকর্তা অরবিন্দ কুমার জৈনও রয়েছেন। তদন্তকারীরা ঘটনার সময়কার পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা পর্যালোচনা করছেন।
তদন্তের প্রাথমিক ফলাফল
পাকিস্তানি কার্তুজের উপস্থিতি হিংসার পূর্বপরিকল্পনার তত্ত্বকে জোরদার করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সমীক্ষার আগে থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। কেউ কেউ দাবি করছেন, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে বাইরে থেকে আনা হয়েছিল, যারা সংঘর্ষে ইন্ধন জুগিয়েছিল।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি রাজনীতির ক্ষেত্রেও আলোড়ন তুলেছে। বিজেপি দাবি করেছে, এই ঘটনা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের অংশ, যা পাকিস্তানের মদতপুষ্ট। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং হিংসা রোধে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছে।
সম্ভল হিংসার গুরুত্ব
সম্ভল হিংসার ঘটনা শুধু ধর্মীয় সমীক্ষার প্রেক্ষাপটেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানি গুলির উপস্থিতি এবং বিদেশি হাতের সম্ভাব্য যোগাযোগ ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রতি নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
যেহেতু তদন্ত চলছে, পাকিস্তানি কার্তুজের উদ্ঘাটন এবং হিংসার সাথে এর সম্ভাব্য যোগসূত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে। বিচার বিভাগীয় প্যানেলের তদন্ত এবং পুলিশের ক্রমাগত অনুসন্ধান ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করবে। তবে এই ঘটনায় সম্ভলবাসীর মনে যে আতঙ্ক এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যেতে পারে।