শিবসেনা (Shiv Sena) সাংসদ সঞ্জয় রাউতের একটি বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে ভারতের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, “শিক্ষার অভাব, খাদ্যের অভাব এবং কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে মানুষ জঙ্গি হয়ে ওঠে।”
এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে এবং সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে, যার ফলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র সরকার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই বক্তব্যকে অনেকে সন্ত্রাসবাদের জন্য একটি অজুহাত হিসেবে দেখছেন, যা জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অপমানজনক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
মন্তব্যের প্রেক্ষাপট
সঞ্জয় রাউতের এই মন্তব্য এসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “একজন হিন্দু কখনো জঙ্গি হতে পারে না।” রাউত এই বক্তব্যের জবাবে বলেন, “জঙ্গির কোনো জাত বা ধর্ম থাকে না। পাকিস্তান কুলভূষণ যাদবকে হিন্দু জঙ্গি বলে অভিহিত করে, কিন্তু আমরা তা মেনে নিতে প্রস্তুত নই।”
তিনি আরও যোগ করেন যে, শিক্ষা, খাদ্য এবং চাকরির অভাব মানুষকে সন্ত্রাসবাদের পথে ঠেলে দেয়। এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে, যেখানে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে, তাহলে কি ২৬/১১ মুম্বাই হামলার জন্য কসাবের ক্ষুধা দায়ী ছিল?
বিজেপির তীব্র প্রতিক্রিয়া
বিজেপি নেতা রাম কদম রাউতের মন্তব্যকে “অত্যন্ত হাস্যকর” এবং “ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি অপমান” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের মন্তব্য জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অপমানজনক এবং সন্ত্রাসবাদকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা।”
এমনকি শিবসেনারই একাংশের নেতা সঞ্জয় নিরুপমও রাউতের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “এই ধরনের বক্তব্য হতাশা থেকে উৎসারিত।” বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন যে রাউতের এই মন্তব্য সন্ত্রাসবাদের প্রকৃত কারণগুলিকে উপেক্ষা করে এবং এটি একটি বিপজ্জনক মানসিকতার প্রতিফলন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে এক্স-এ রাউতের মন্তব্য ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “লক্ষ লক্ষ ভারতীয় দরিদ্রতার মধ্যে বড় হয়, কিন্তু তারা ডাক্তার, কৃষক বা সৈনিক হয়, জঙ্গি নয়।” আরেকজন লিখেছেন, “রাউতের মতে কি ওসামা বিন লাদেন বেকার ছিলেন?” এই ধরনের মন্তব্যে অনেকে রাউতের বক্তব্যকে “লজ্জাজনক” এবং “সন্ত্রাসবাদের পক্ষে ওকালতি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রাউতের পূর্বের বিতর্ক
সঞ্জয় রাউত এর আগেও তার বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য শিরোনামে এসেছেন। ২০২০ সালে তিনি কৃষক আন্দোলনের সময় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছিলেন, “কৃষকদের জঙ্গি এবং খালিস্তানি বলে অপমান করা হচ্ছে।” এছাড়া, তিনি পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গে অভিযোগ করেছিলেন যে, হামলাকারীরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছে বলে ধরা পড়ছে না। এই ধরনের মন্তব্য তাকে বারবার বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
রাউতের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারত সাম্প্রতিক পহেলগাঁও হামলা এবং অপারেশন সিঁদুরের পরে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে সংবেদনশীল। তিনি অপারেশন সিঁদুরকে “ব্যর্থ” বলে সমালোচনা করে বলেছেন, “জাতীয় স্বার্থে আমরা এই বিষয়ে কথা বলছি না।”
তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেছেন, অভিযোগ করে যে পহেলগাঁও হামলার জন্য তিনি দায়ী। এই বক্তব্য বিজেপি এবং শিবসেনা (ইউবিটি)-এর মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
রাফায়েলের চেয়ে Su-30MKI-এর আপগ্রেড কেন ভাল?
সমাজের প্রতি প্রভাব
রাউতের মন্তব্য সন্ত্রাসবাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ নিয়ে একটি গুরুতর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যদিও দারিদ্র্য এবং শিক্ষার অভাব সামাজিক সমস্যার কারণ হতে পারে, তবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে এটিকে সরাসরি যুক্ত করা অনেকের কাছে অগ্রহণযোগ্য। সন্ত্রাসবাদের মূল কারণ হিসেবে ধর্মীয় মৌলবাদ, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনকে চিহ্নিত করা হয়, যা রাউতের মন্তব্যে উপেক্ষিত হয়েছে।
সঞ্জয় রাউতের “ভুখা মানুষই জঙ্গি হয়” মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই মন্তব্যকে বিজেপি এবং সামাজিক মাধ্যমে অনেকে সন্ত্রাসবাদের জন্য অজুহাত হিসেবে দেখছেন, যা জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অপমানজনক।
রাউতের এই বক্তব্য শিবসেনা (ইউবিটি) এবং বিজেপির মধ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও জটিল করেছে। এই ঘটনা জাতীয় নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদের কারণ নিয়ে একটি গভীর আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।