‘আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জ খাইনা’ বলে ফ্রাঞ্চাইজি কেনার গুজব ওড়ালেন শিব কুমার

কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার (shiv-kumar) বৃহস্পতিবার (১২ জুন, ২০২৫) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) ফ্র্যাঞ্চাইজি কেনার গুজব দৃঢ়ভাবে খারিজ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি কোনো ‘পাগল’…

shiv-kumar refuses to buy franchisee

কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার (shiv-kumar) বৃহস্পতিবার (১২ জুন, ২০২৫) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) ফ্র্যাঞ্চাইজি কেনার গুজব দৃঢ়ভাবে খারিজ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি কোনো ‘পাগল’ নন এবং এই ধরনের কাজের জন্য তার সময় নেই। এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শিবকুমার জানান, তাকে আরসিবি’র ব্যবস্থাপনায় যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।

তিনি (shiv-kumar) হাস্যরসের সঙ্গে বলেন, “আমি পাগল নই। আমি কেবল ছেলেবেলায় কর্ণাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলাম, এটুকুই। আমার এসবের জন্য সময় নেই, যদিও আমাকে ব্যবস্থাপনায় যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমার আরসিবি কেন দরকার? আমি তো রয়্যাল চ্যালেঞ্জ (হুইস্কি)ও খাই না!”

   

এই গুজবের পাশাপাশি, বেঙ্গালুরুর (shiv-kumar)এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে গত ৪ জুন আরসিবি’র আইপিএল বিজয় উদযাপনের সময় সংঘটিত একটি মর্মান্তিক ভিড়ের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার পর কর্ণাটক সরকার ৫ জুন কাব্বন পার্ক থানার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সাসপেন্ড করে এবং ঘটনার তদন্তের জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্ট বিচারপতির নেতৃত্বে একটি এক সদস্যের কমিশন গঠন করে। এই ঘটনার জেরে রাজনৈতিক তরজাও তীব্র হয়েছে।

বেঙ্গালুরু ভিড়ের ঘটনা: কী ঘটেছিল? (shiv-kumar)

২০২৫ সালের ৩ জুন আইপিএল ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে ১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো আইপিএল শিরোপা জিতে আরসিবি। এই ঐতিহাসিক জয় উদযাপনের জন্য ৪ জুন বেঙ্গালুরুতে একটি বিজয় মিছিল এবং চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে উৎসবের ঘোষণা করা হয়।

তবে, বেঙ্গালুরু (shiv-kumar) ট্রাফিক পুলিশ প্রাথমিকভাবে ট্রাফিক জটিলতার কারণে এই মিছিলের অনুমতি দেয়নি। এরপরেও আরসিবি সোশ্যাল মিডিয়ায় মিছিলের ঘোষণা করে এবং পরে এটিকে স্টেডিয়ামে একটি ফ্রি অনলাইন টিকিটেড ইভেন্টে রূপান্তরিত করে।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামের কাছে একটি নর্দমার উপর স্থাপিত অস্থায়ী স্ল্যাব ভিড়ের চাপে ভেঙে পড়ে, যা এই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। প্রায় ২-৩ লক্ষ মানুষ এই ইভেন্টে জড়ো হয়েছিল, যা স্টেডিয়ামের ৩৫,০০০ ধারণক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি। পুলিশের সীমিত উপস্থিতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবও এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ

এই ঘটনার পর কর্ণাটক সরকার তিনটি তদন্ত শুরু করে: একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত, একটি ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত এবং রাজ্যের সিআইডি তদন্ত। সিআইডি ইতিমধ্যে আরসিবি এবং কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (কেএসসিএ) কর্মকর্তাদের নোটিস জারি করেছে। ৬ জুন আরসিবি’র (shiv-kumar) মার্কেটিং প্রধান নিখিল সোসালেকে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে, তিনি এই গ্রেপ্তারকে অবৈধ বলে দাবি করে কর্ণাটক হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। হাইকোর্ট ১২ জুন দুপুর ২:৩০-এ এই আবেদনের রায় ঘোষণার জন্য আদেশ সংরক্ষণ করেছে।

এছাড়া, আরসিবি এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্টের বিরুদ্ধে কাব্বন পার্ক থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। আরসিবি এই এফআইআর বাতিলের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেছে, দাবি করে যে তারা মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার আমন্ত্রণ এবং পুলিশের মৌখিক অনুমোদনের পরই এই ইভেন্টের ঘোষণা করেছিল।

রাজনৈতিক বিতর্ক

এই ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার পদত্যাগ দাবি করেছে, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সিদ্দারামাইয়া পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, “কুম্ভ মেলায় ভিড়ে ৪০-৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তখন কি তারা উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিল? একটি সেতু ভেঙে ১৪০ জন মারা গিয়েছিল। তখন কি তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছিল?” তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে সবকিছুতে রাজনীতি করার অভিযোগ করেন।

Advertisements

উপ-মুখ্যমন্ত্রী শিবকুমারও (shiv-kumar) এই ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বিজেপি ও জেডি(এস)-কে ঘটনাটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জন্য সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “বেঙ্গালুরু তার ভাবমূর্তি হারিয়েছে। এই ঘটনায় কোনো পরিবার এই বেদনা সহ্য করতে পারে না।”

ক্ষতিপূরণ ও প্রতিক্রিয়া

আরসিবি এবং কেএসসিএ প্রতিটি মৃতের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে, যা পরে রাজ্য সরকার ২৫ লক্ষ টাকায় বাড়িয়েছে। আরসিবি একটি ‘আরসিবি কেয়ারস’ তহবিল গঠনের ঘোষণাও দিয়েছে, যা আহত ভক্তদের সহায়তা করবে। তবে, এই ক্ষতিপূরণ শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর ক্ষতি পূরণ করতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ, ২৪ বছর বয়সী সাহানার পরিবার ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করলেও তাদের দুঃখ অপরিমেয়।

প্রাক্তন ক্রিকেটার রাহুল দ্রাবিড় এই ঘটনাকে ‘খুবই হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বেঙ্গালুরুর স্থানীয় হিসেবে এই ট্র্যাজেডিতে গভীরভাবে মর্মাহত বলে জানান। প্রাক্তন আইপিএল চেয়ারম্যান ললিত মোদীও আরসিবি এবং কর্ণাটক সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “এই ট্র্যাজেডি আরসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং খেলোয়াড়দের চিরকাল তাড়া করবে।”

ইংল্যান্ড সফরের আগে দুরন্ত ফর্মে ক্ষুদে কোটিপতি, প্রত্যাশা তুঙ্গে ক্রিকেটপ্রেমীদের

আরসিবি’র ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা

এই ঘটনার পর আরসিবি’র উপর ২০২৬ আইপিএল থেকে নিষেধাজ্ঞার জল্পনা শুরু হয়েছে। আইপিএল ইতিহাসে এর আগে চেন্নাই সুপার কিংস এবং রাজস্থান রয়্যালসকে ২০১৫ সালে স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে, বিসিসিআই জানিয়েছে, এই ঘটনা ফ্র্যাঞ্চাইজি আয়োজিত ছিল এবং তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। তবে, তদন্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করে বিসিসিআই কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।

ডি কে শিবকুমারের (shiv-kumar) আরসিবি কেনার গুজব খারিজ এবং বেঙ্গালুরু ভিড়ের ঘটনা কর্ণাটকের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এই ট্র্যাজেডি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে গুরুতর ত্রুটি তুলে ধরেছে। তদন্ত চলছে এবং হাইকোর্টের রায় এই ঘটনার দায় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ঘটনা ভক্তদের উৎসাহকে কলঙ্কিত করেছে এবং ভবিষ্যতে এমন ট্র্যাজেডি এড়াতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।