ধার নিয়ে কোটি টাকার প্রতারণা! শাস্তির মুখে শিল্পা-রাজ

মুম্বই পুলিশ বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টি এবং তাঁর স্বামী, ব্যবসায়ী রাজ কুন্দ্রার (Shilpa Raj) বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকার প্রতারণার মামলায় লুকআউট সার্কুলার (LOC) জারি করেছে।…

Shilpa Raj fraud

মুম্বই পুলিশ বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টি এবং তাঁর স্বামী, ব্যবসায়ী রাজ কুন্দ্রার (Shilpa Raj) বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকার প্রতারণার মামলায় লুকআউট সার্কুলার (LOC) জারি করেছে। এই ঘটনা মুম্বইয়ের অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা (EOW) দ্বারা তদন্তাধীন, এবং এই দম্পতির ঘন ঘন আন্তর্জাতিক ভ্রমণের কারণে এই সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

মুম্বইয়ের জুহু থানায় ১৪ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন যে শিল্পা শেট্টি এবং রাজ কুন্দ্রা তাঁর কাছ থেকে একটি ঋণ-সহ-বিনিয়োগ চুক্তির মাধ্যমে প্রায় ৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

   

মামলার অভিযোগকারী, জুহু-নিবাসী ব্যবসায়ী দীপক কোঠারি, লোটাস ক্যাপিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক। তিনি দাবি করেছেন যে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি শিল্পা এবং রাজের এখন বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানি ‘বেস্ট ডিল টিভি প্রাইভেট লিমিটেড’-এর জন্য ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ৬০.৪৮ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।

তবে, এই অর্থ ব্যক্তিগত খরচে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ। কোঠারি জানিয়েছেন, তাঁকে রাজেশ আর্যা নামে একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে শিল্পা এবং রাজের সঙ্গে পরিচয় করানো হয়েছিল। তখন এই দম্পতি বেস্ট ডিল টিভি-র পরিচালক ছিলেন এবং কোম্পানির ৮৭.৬ শতাংশ শেয়ার তাঁদের হাতে ছিল।

কোঠারির অভিযোগ অনুযায়ী, শিল্পা এবং রাজ ১২ শতাংশ বার্ষিক সুদে ৭৫ কোটি টাকার ঋণ চেয়েছিলেন। পরে, করের বোঝা কমাতে এই অর্থকে ‘বিনিয়োগ’ হিসেবে দেখানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়, এবং মাসিক রিটার্ন ও মূলধন ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এই আশ্বাসে কোঠারি ২০১৫ সালের এপ্রিলে ৩১.৯৫ কোটি টাকা এবং সেপ্টেম্বরে ২৮.৫৩ কোটি টাকা স্থানান্তর করেন।

তবে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে শিল্পা কোম্পানির পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন, এবং ২০১৭ সালে কোম্পানির বিরুদ্ধে দেউলিয়া কার্যক্রম শুরু হয়। কোঠারি পরে জানতে পারেন যে কোম্পানি অন্য একটি চুক্তিতে ডিফল্ট করেছে।

শিল্পা এবং রাজের আইনজীবী প্রশান্ত পাটিল এই অভিযোগগুলিকে “ভিত্তিহীন এবং ক্ষতিকর” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, এটি একটি বেসামরিক বিষয় এবং মুম্বইয়ের ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল (এনসিএলটি) ৪ অক্টোবর, ২০২৪-এ এই বিষয়ে রায় দিয়েছে। তাঁদের মতে, কোম্পানি আর্থিক সংকটে পড়েছিল, এবং এই বিনিয়োগ ইক্যুইটি বিনিয়োগের আকারে ছিল। তাঁরা পুলিশের কাছে নিয়মিতভাবে নথিপত্র জমা দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন।

Advertisements

মুম্বই পুলিশের ইওডব্লিউ এই মামলার তদন্ত করছে এবং শিল্পা ও রাজের ভ্রমণের তথ্য পরীক্ষা করছে। লুকআউট সার্কুলারের মাধ্যমে এই দম্পতিকে দেশ ছাড়তে বাধা দেওয়া বা তাঁদের গতিবিধি ট্র্যাক করা হবে।

এই মামলাটি ১০ কোটি টাকার বেশি অর্থ জড়িত থাকায় জুহু থানা থেকে ইওডব্লিউ-এ স্থানান্তরিত হয়েছে। মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৩ (অসাধু সম্পত্তি অপব্যবহার), ৪০৬ (আস্থার অপরাধমূলক লঙ্ঘন), এবং ৩৪ (সাধারণ উদ্দেশ্য) ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এই ঘটনা শিল্পা শেট্টি এবং রাজ কুন্দ্রার আইনি সমস্যাকে আরও জটিল করেছে। এর আগে, ২০২৪ সালে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁদের বিরুদ্ধে বিটকয়েন জালিয়াতি এবং পর্নোগ্রাফি মামলায় তদন্ত করেছে। ২০২১ সালে রাজ কুন্দ্রাকে পর্নোগ্রাফি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল, যদিও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এছাড়া, ২০২৪ সালে একটি সোনার স্কিমে প্রতারণার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে শিল্পা এবং রাজের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ ওঠার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলিউডের নীরবতা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “শিল্পা এই সমস্ত অভিযোগ সত্ত্বেও স্বাভাবিকভাবে রেস্তোরাঁ উদ্বোধন করছেন এবং সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, যেন কিছুই হয়নি।”

দুর্গাপুজোয় ছুটি বন্ধ, রাজ্য পুলিশের জন্য বড় নির্দেশিকা জারি ভবানী ভবনের

এই মামলা বলিউডে সেলিব্রিটিদের দায়বদ্ধতা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি এবং অর্থের গতিপ্রকৃতি উদঘাটনের উপর এই মামলার পরবর্তী দিক নির্ভর করবে।