ঢাকা থেকে সেই নাটকীয় প্রস্থানের পর কেটে গিয়েছে একটা বছর। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ যখন রাজপথ দখল করে নেয়, তখনই হেলিকপ্টারে চেপে নিজের সরকারি বাসভবন ত্যাগ করেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর থেকে তিনি রয়েছেন দিল্লিতে নীরবে, নিভৃতে, কিন্তু এখনো দেশের রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত মুখ।
লুটিয়েন্স দিল্লিতে নির্বাসিত দিন
ভারত সরকারের ব্যবস্থাপনায় শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লির লুটিয়েন্স জোনের এক সুরক্ষিত বাড়িতে রয়েছেন — যে অঞ্চলে সংসদ সদস্য, আমলা ও প্রাক্তন মন্ত্রীরা বসবাস করেন। দিল্লির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি প্রায় প্রতিদিন সকালে লোধি গার্ডেন-এ হাঁটতে যান; সঙ্গে থাকেন দুইজন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী। সাধারণ মানুষ চিনে ফেললে মাথা নেড়ে সম্ভাষণ জানান, তারপর আবার নীরবে এগিয়ে যান নিজের পথে।
এক সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেন, “আমি দেশে ফিরতে চাই, যদি সেখানে বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, সংবিধান ও আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে। কেবল তখনই আমি ফিরব।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাতে তিনি বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে চেপে হিন্দন এয়ারবেসে পৌঁছান। সেখানে দু’দিন ছিলেন ভারতের তত্ত্বাবধানে। ওই সময় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্তারা। পরে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় আরও সুরক্ষিত স্থানে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বর্জন Sheikh Hasina Dhaka Return Condition
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের বিপুল সংখ্যক সমর্থক এই অবস্থানেই অনড়। লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেন, “শুধু মুক্ত, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই দেশকে পুনরায় গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে পারে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “লক্ষ লক্ষ মানুষ আওয়ামী লীগের সমর্থক। তাঁদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকবে না। জনগণের ইচ্ছাকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র সম্ভব নয়।”
ইউনূস সরকারের সতর্কবার্তা
অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস সতর্কবার্তা দিয়েছেন, নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি শক্তি অশান্তি তৈরির চেষ্টা করতে পারে। তাঁর প্রেসসচিব শফিকুল আলমের উদ্ধৃতি অনুযায়ী ইউনূস বলেছেন, “দেশের ভিতর ও বাইরে বহু শক্তিশালী পক্ষ রয়েছে যারা নির্বাচন বানচাল করতে চাইবে। আকস্মিক হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, “এই নির্বাচন হবে কঠিন। দেশ-বিদেশ থেকে নানা ধরণের প্রোপাগান্ডা চালানো হবে পরিকল্পিতভাবে।”
ইতিহাসের ছায়া
শেখ হাসিনার এই নির্বাসিত জীবন যেন ফের জাগিয়ে তুলেছে ১৯৭৫ সালের সেই অন্ধকার অধ্যায় — যখন সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তিন ভাই। সেই সময়ও হাসিনা ছিলেন বিদেশে, বোন শেখ রেহানার সঙ্গে।
অর্ধশতাব্দী পর, আবারও ইতিহাস যেন ফিরে এসেছে অন্য এক চক্রে- অন্য প্রেক্ষাপটে, কিন্তু একই নিঃসঙ্গতা ও অনিশ্চয়তার ছায়ায় ঢাকা শেখ হাসিনার জীবন।


