নয়াদিল্লি: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তাল পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সাড়া ফেলছে (Shashi Tharoor )। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশি একটি আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার পর থেকেই নানা মহলে আলোচনা তুঙ্গে।
বিশেষ করে রায়টি যেভাবে অনুপস্থিত অবস্থায় (trial in absentia) দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন কংগ্রেস সাংসদ, কূটনীতিক এবং লেখক শশী থারুর।
নিলামে এই পাঁচ তারকাকে দল টানতে মরিয়া সব ফ্র্যাঞ্চাইজি!
সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে থারুর স্পষ্ট মন্তব্য করেন “আমি ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যুদণ্ডে বিশ্বাস করি না দেশের ভিতরে হোক বা দেশের বাইরে।” তিনি বলেন, যে কোনও অপরাধের বিচারেই মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের মানদণ্ড বজায় রাখা জরুরি। কিন্তু কেউ নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ব্যাখ্যা করার সুযোগ না পেলে এবং আদালতে নিজে উপস্থিত না থেকেও তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলে, বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই ন্যায়বিচার সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে।
থারুর আরও বলেন, “Trial in absentia সাধারণত তখনই সামনে আসে যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত বা অস্থিতিশীল। কিন্তু এমন রায়ে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়। এতে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতার ওপর প্রশ্ন ওঠে। কাউকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া—এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, ভারতের অভ্যন্তরে মানবাধিকার–কেন্দ্রিক আলোচনাগুলি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, বৈশ্বিক বিচারব্যবস্থায়ও একই মূল্যবোধ প্রয়োগ হওয়া উচিত।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে যে আলোচনা চলছে, তার ফলেই দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে কূটনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। বিশেষত, তাঁর বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় কার্যকর হবে কি না বা আন্তর্জাতিক মহল কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নিয়েই বিশ্লেষকদের নজর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, trial in absentia আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত হলেও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ, উপস্থিত না থাকা অভিযুক্ত আদালতে সরাসরি আত্মপক্ষ সমর্থন, দলিল পেশ, প্রশ্নোত্তর এসব সুযোগ পান না। ফলে যে কোনও কঠোর সাজা আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে। থারুরের বক্তব্যও ঠিক সেই জায়গাতেই আঘাত করছে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিতে।
ভারতের রাজনৈতিক মহলেও এই রায় নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা এখন ভারতের কূটনৈতিক অগ্রাধিকারের অন্যতম ক্ষেত্র। তাই প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ সংকটেও ভারতের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে ভারতকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া উচিত—এই মতও উঠে আসছে।
শশী থারুরের মন্তব্যে অতিরিক্ত গুরুত্ব আরও একটি কারণে নাগরিক স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। রাষ্ট্রসংঘের প্রাক্তন কূটনীতিক হিসেবে তিনি বিচারব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইন ও রাজনৈতিক বিরোধের জটিলতা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ফলে তাঁর মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন পথে এগোয়, শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ কী হয়, কিংবা আন্তর্জাতিক মহলের চাপ আদৌ কোনও পরিবর্তন আনে কি না—সবকিছুই এখন সময়ের ওপর নির্ভর করছে। তবে থারুরের বক্তব্য একটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে—যে কোনও বিচারই ন্যায়, স্বচ্ছতা ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে হওয়া জরুরি।


