কেরালার চোয়ান্নুরে যুব কংগ্রেস মণ্ডল সভাপতি ভি এস সুজিতের উপর দুই বছর আগের একটি হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা ফের সামনে এসেছে, যা নিয়ে প্রবল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর (Shashi Tharoor) । সম্প্রতি একটি সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর এই ঘটনা ফের চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার সময় একাধিক পুলিশ কর্মী সুজিতকে বারবার থাপ্পড় ও ঘুষি মারছে।
এই ঘটনাকে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” বলে অভিহিত করেছেন তিরুবনন্তপুরমের সংসদ সদস্য থারুর। শুক্রবার, একটি পোস্টে তিনি লেখেন, “একজন নাগরিককে শুধুমাত্র পুলিশি হুমকি নিয়ে প্রশ্ন করায় তার উপর আক্রমণ চালানো শুধু বেআইনি নয়, অমানবিকও।” তিনি আরও বলেন, “যে পুলিশ আধিকারিকরা ন্যায়বিচার ও মর্যাদার মূলনীতি লঙ্ঘন করেন, তাঁদের পুলিশের মতো একটি সম্মানজনক বাহিনীতে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।”
থারুর(Shashi Tharoor) কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “এই ধরনের নিষ্ঠুরতার জন্য নীরবতা কখনোই ঢাল হতে পারে না।” থারুরের এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে প্রবল সাড়া ফেলে দিয়েছে।
ঘটনার জেরে কংগ্রেস দলও নিজেদের আন্দোলন জোরদার করেছে। কেরালা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ভি ডি সাথীশন মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের বরখাস্ত করার দাবি জানান। তাঁর অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় থাকা সত্ত্বেও হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা বারবার ঘটছে এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা অভিযুক্তদের বাঁচাতে সচেষ্ট। চার্জশিট থেকে মূল অভিযুক্তদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এবং রিপোর্ট গোপন রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাথীশন জানান, “এই ঘটনার সত্যতা প্রকাশ্যে আসে শুধুমাত্র তথ্য জানার অধিকার আইনের (RTI) মাধ্যমে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার পর।” তাঁর দাবি, অভিযুক্ত অফিসারদের শুধুমাত্র বরখাস্ত নয়, তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এই ঘটনায় কেরালার রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বহু মানবাধিকার কর্মীও সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কংগ্রেস নেতাদের দাবি, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং কেরালায় পুলিশের মধ্যে একটি প্রাতিষ্ঠানিক দমননীতি গড়ে উঠছে, যা অবিলম্বে রোধ করা প্রয়োজন।
মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শ্রদ্ধা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই ঘটনাটি দেখিয়ে দিল, সেই ন্যূনতম মানবিক ও সাংবিধানিক মূল্যবোধও কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের মধ্যে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সুজিতের মতো বহু সাধারণ মানুষ পুলিশি হেফাজতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এখন দেখার বিষয়, মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসন কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলোর দাবি, কেবল তদন্ত নয়, অপরাধ প্রমাণ হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই একমাত্র উপযুক্ত প্রতিকার হতে পারে।