ভারতের পূর্ব উপকূলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা (Cyclone Dana) দুর্বার গতিতে এগিয়ে আসছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের (IMD) কর্মকর্তাদের মতে, দানা আজ ভোরের মধ্যে আছড়ে পড়বে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ১২০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এটি ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এবং শহরে প্রস্তুতি চলছে, যাতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া
অবশেষে ঘূর্ণিঝড় দানা ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু করেছে। IMD জানিয়েছে, এটি বর্তমানে পারাদীপ (ওড়িশা) থেকে প্রায় ৫০ কিমি পূর্ব-উত্তর, ধামরার (ওড়িশা) ৪০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং সাগর দ্বীপ (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে ১৬০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। IMD’র মুখপাত্র উমাশঙ্কর দাস জানান, ল্যান্ডফলের সময় বাতাসের গতিবেগ ১০০-১১০ কিমি/ঘণ্টা হবে, মাঝে মাঝে ১২০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে। ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা স্থায়ী হবে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তুতি
ওড়িশার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপকূলীয় এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সতর্কতা জারি করছেন। বিভিন্ন জেলা প্রশাসনও প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সরকারি প্রস্তুতি
ওড়িশা সরকার ইতিমধ্যে ৩.৫ লাখ লোককে সাইক্লোন শেল্টারে সরিয়ে নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাজি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজ্যের প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। মাজি জানিয়েছেন, রাজ্য পুরোপুরি প্রস্তুত, এবং NDRF, ODRAF, এবং ফায়ার সার্ভিস দলের সদস্যরা ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রাথমিক ক্ষতির রিপোর্ট
এখনো পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে, কন্দ্রপাড়া ও ভদ্রক জেলায় ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু গাছ উপড়ে পড়েছে এবং সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস দ্রুত গাছগুলিকে সরানোর কাজ শুরু করেছে।
নাগরিকদের নিরাপত্তা
নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারে স্থানান্তরিত মানুষদের জন্য খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও সহায়তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এনডিআরএফের প্রস্তুতি
ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (NDRF) ইতিমধ্যেই বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের দলকে মোতায়েন করেছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনগণকে সচেতন করছে এবং নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পরামর্শ দিচ্ছে। NDRF এবং অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
IMD রিপোর্ট করেছে যে, ঘূর্ণিঝড়ের স্থায়ী বেগ ১০৫-১১৫ কিমি/ঘণ্টা, যা ১২৫ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে। সংলগ্ন অঞ্চলে সম্ভাব্য বন্যা ও প্রবল জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে যে, ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর জলস্তর বাড়তে পারে, যা বন্যার কারণ হতে পারে।
স্থানীয় জনগণের অবস্থা
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে স্থানীয় মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অনেকেই নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন, তবে কিছু মানুষ এখনো তাদের বাড়িতে রয়েছেন। প্রশাসন তাদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে এবং শিগগিরই নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি এবং জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দানা সাইক্লোনের ফলে যে বিপর্যয় আসতে পারে, তা মোকাবিলা করার জন্য রাজ্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। সবশেষে, সকলকে সতর্ক ও নিরাপদে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। সহযোগিতা ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এই বিপর্যয় মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।