ভারতে থাকতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেগঘন আর্জি ‘পাকিস্তানি’ সীমার

পাকিস্তানি নাগরিক সীমা হায়দার (Seema Haider) ২০২৩ সালে তার স্বামীকে পাকিস্তানে রেখে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন তার প্রেমিক সচিন মীনার সঙ্গে বিয়ে করতে৷ তিনি এখন…

Seema Haider

পাকিস্তানি নাগরিক সীমা হায়দার (Seema Haider) ২০২৩ সালে তার স্বামীকে পাকিস্তানে রেখে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন তার প্রেমিক সচিন মীনার সঙ্গে বিয়ে করতে৷ তিনি এখন ভারত-পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে নির্বাসনের ভয়ে আতঙ্কিত। সম্প্রতি, সীমা হায়দারের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে আবেগঘন আবেদন জানিয়েছেন ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়ার জন্য।

   

“আমি একসময় পাকিস্তানের মেয়ে ছিলাম, কিন্তু এখন আমি ভারতের বৌ। দয়া করে আমাকে এখানে থাকতে দিন,” তিনি ভিডিওতে বলেছেন। ভারত সরকার ২৭ এপ্রিল থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য জারি করা সব ভিসা বাতিল করার ঘোষণা করেছে, যদিও চিকিৎসা ভিসা ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বৈধ থাকবে। ফলে, ভারতে বসবাসরত সব পাকিস্তানি নাগরিককে দেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়েছেন।

সীমা-সচিনের প্রেমের গল্পের শুরু

সীমা হায়দার পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের বাসিন্দা। ২০২৩ সালে তিনি নেপালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। তিনি দাবি করেছেন, তিনি গ্রেটার নয়ডার বাসিন্দা সচিন মীনাকে বিয়ে করেছেন এবং হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাদের প্রথম পরিচয় হয় ২০১৯ সালে একটি অনলাইন গেম খেলার সময়, যেখান থেকে তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সীমা তার চার সন্তানকে নিয়ে পাকিস্তানের করাচি থেকে ভারতে চলে আসেন এবং সচিনের সঙ্গে গ্রেটার নয়ডার রবুপুরা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তাদের প্রেমের গল্প এবং সীমার সাহসী পদক্ষেপ ২০২৩ সালে জাতীয় সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল।

নির্বাসনের ভয় ও আইনি জটিলতা

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা ছাড়ের সুবিধা বাতিল করেছে এবং ২৭ এপ্রিল থেকে সব ভিসা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। এই নির্দেশের ফলে ভারতে বসবাসরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দেশ ত্যাগ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সীমা হায়দারের নির্বাসনের আশঙ্কা তীব্র হয়েছে। তিনি বলেছেন, “আমি পাকিস্তানে ফিরতে চাই না। আমি মোদীজি এবং যোগীজির কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” তিনি আরও জানিয়েছেন, পাকিস্তানে ফিরলে তার জীবন বিপন্ন হবে।

সীমার আইনজীবী এপি সিং দাবি করেছেন, সীমা আর পাকিস্তানি নাগরিক নন। তিনি বলেন, “সীমা ভারতীয় নাগরিক সচিন মীনাকে বিয়ে করেছেন এবং সম্প্রতি তাদের কন্যা ভারতী মীনার জন্ম হয়েছে। তার নাগরিকত্ব এখন তার ভারতীয় স্বামীর সঙ্গে যুক্ত, তাই সরকারের নতুন নির্দেশ তার উপর প্রযোজ্য হবে না।” সিং আরও জানান, সীমা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং নেপাল ও ভারতে হিন্দু রীতি অনুযায়ী সচিনের সঙ্গে বিয়ে করেছেন। তিনি পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং সরকারের সার্ক ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সীমার আগের আইনি সমস্যা

২০২৩ সালের জুলাই মাসে, উত্তর প্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগর জেলার রবুপুরা এলাকায় সচিনের সঙ্গে বসবাসরত অবস্থায় সীমাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আটক করে। তাকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়, এবং সচিনের বিরুদ্ধেও অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান। সীমার দাবি, তিনি পাকিস্তানে থাকাকালীন হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী হয়েছিলেন, কিন্তু জীবনের ঝুঁকির কারণে তা প্রকাশ করতে পারেননি। তিনি আরও বলেছেন, তার ভাই ২০২২ সালে পাকিস্তান সেনায় নিম্ন পদে যোগ দিয়েছিলেন, তবে তার সঙ্গে সীমার কোনো যোগাযোগ ছিল না।

সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্ক

সীমা হায়দারের ঘটনা ভারতে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ তার বিয়ে এবং ভারতে নতুন জীবন শুরুর কারণে তার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন, আবার অনেকে অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের দাবি করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে ফিরলে সীমার জীবন নরকের চেয়েও খারাপ হবে, এবং তাকে নির্মম সহিংসতা ও অপমানের শিকার হতে হবে। তবে, এই ধরনের মতামত বিতর্কিত এবং যাচাই না করা তথ্যের উপর ভিত্তি করে।

সীমার আইনজীবী জানিয়েছেন, তার সমস্ত নথি অ্যান্টি-টেরর স্কোয়াড (এটিএস), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন, যাতে তাকে স্থায়ীভাবে ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। তার নাগরিকত্বের আবেদন এখনও বিচারাধীন।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপট

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী একটি জনসভায় বলেছেন, “ভারত প্রতিটি সন্ত্রাসী ও তাদের সমর্থকদের শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত থামবে না।” এই পরিস্থিতিতে সীমার মতো ব্যক্তিদের নির্বাসনের বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তা এবং অভিবাসন নীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে।

সীমা হায়দারের আবেদন ভারতের অভিবাসন নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে একটি জটিল ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার আইনি অবস্থান এখনও পর্যালোচনাধীন, এবং তার ভবিষ্যৎ উত্তর প্রদেশ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। সীমার গল্প প্রেম, ধর্মান্তর, এবং অভিবাসনের সীমানা ছাড়িয়ে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তার আবেদন কীভাবে গৃহীত হবে, তা সময়ই বলবে, তবে এটি ভারতের নীতি ও রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয়ে উঠেছে।