মাওবাদীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে উদ্ধার শক্তিশালী আইইডি

চাইবাসা (ঝাড়খণ্ড), ১৬ মার্চ ২০২৫: ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) পশ্চিম সিংভূম জেলার একটি জঙ্গল এলাকায় রবিবার নিরাপত্তা বাহিনী একটি শক্তিশালী ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) উদ্ধার করেছে। নিষিদ্ধ…

Jharkhand's Maoist-Affected Region

short-samachar

চাইবাসা (ঝাড়খণ্ড), ১৬ মার্চ ২০২৫: ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) পশ্চিম সিংভূম জেলার একটি জঙ্গল এলাকায় রবিবার নিরাপত্তা বাহিনী একটি শক্তিশালী ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) উদ্ধার করেছে। নিষিদ্ধ সিপিআই (মাওবাদী) গোষ্ঠী এই বিস্ফোরকটি নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে বসিয়েছিল বলে জানিয়েছেন একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। এই ঘটনা মাওবাদীদের একটি বড় ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।

   

পশ্চিম সিংভূম জেলার মাওবাদী-আক্রান্ত এলাকায় চলমান একটি তল্লাশি অভিযানের সময় এই আইইডি উদ্ধার করা হয়। সিআরপিএফ, কোবরা, ঝাড়খণ্ড জাগুয়ার এবং জেলা সশস্ত্র পুলিশের সমন্বিত বাহিনী টনটো থানার অধীন হাথিবুরু এবং লেমসাদিহ গ্রামের মধ্যবর্তী জঙ্গলের পথে ১০ কেজি ওজনের এই বিস্ফোরকটি শনাক্ত করে। পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে এই আইইডি নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করে। এরপরও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার অশুতোষ শেখর।

পশ্চিম সিংভূম জেলা দীর্ঘদিন ধরে মাওবাদী কার্যকলাপের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের কোলহান এলাকায় শীর্ষ মাওবাদী নেতাদের উপস্থিতির খবর পেয়ে জানুয়ারি মাস থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযানে মাওবাদীদের পরিকল্পনা বানচাল করতে একাধিক আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার অশুতোষ শেখর জানান, এই ১০ কেজি ওজনের আইইডি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে বসানো হয়েছিল। এটি বিস্ফোরিত হলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত।

মাওবাদীরা প্রায়শই জঙ্গল এলাকায় চাপ-সংবেদী আইইডি ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনীকে আক্রমণ করে। এই ধরনের বিস্ফোরক সাধারণত সন্ধান অভিযানে নিয়োজিত জওয়ানদের আহত বা নিহত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। তবে, অনেক সময় স্থানীয় গ্রামবাসীরাও এই বিস্ফোরকের শিকার হয়েছেন। গত কয়েক মাসে এই জেলায় একাধিক বেসামরিক নাগরিক আইইডি বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন।

টনটো থানার অধীন এই জঙ্গল এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি চালাচ্ছিল। অশুতোষ শেখর জানান, “আমরা গোপন সূত্র থেকে খবর পেয়েছিলাম যে মাওবাদীরা এই এলাকায় বিস্ফোরক স্থাপন করেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সিআরপিএফ, কোবরা এবং ঝাড়খণ্ড জাগুয়ারের সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান শুরু করি।” এই অভিযানে আইইডি শনাক্ত করার পর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল তাৎক্ষণিকভাবে এটি নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর এই সাফল্য মাওবাদীদের পরিকল্পিত আক্রমণকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, “এই ধরনের অভিযান আমাদের এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে। আমরা মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখব।”

পশ্চিম সিংভূমে মাওবাদীদের উপস্থিতি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এই জেলার কোলহান অঞ্চল একসময় মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। শীর্ষ মাওবাদী নেতা মিসির বেসরা, যিনি ১ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষিত পলাতক, এই এলাকায় সক্রিয় বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। তার নেতৃত্বে মাওবাদীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে একাধিক হামলার পরিকল্পনা করেছে।

গত জানুয়ারি থেকে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে। এর ফলে একাধিক আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে এবং কয়েকজন মাওবাদী নেতা গ্রেফতার বা নিহত হয়েছে। তবে, এই অঞ্চলের জঙ্গল এখনও বিস্ফোরক দিয়ে ভরা, যা স্থানীয়দের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই ঘটনার পর স্থানীয়রা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন। একজন গ্রামবাসী বলেন, “আমরা জঙ্গলে যেতে ভয় পাই, কারণ মাওবাদীরা যেকোনো জায়গায় বোমা রাখতে পারে। নিরাপত্তা বাহিনী এই বোমা উদ্ধার করে আমাদের জীবন বাঁচিয়েছে।” তবে, কিছু স্থানীয় বাসিন্দা মনে করেন, মাওবাদী সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য আরও উন্নয়নমূলক কাজ প্রয়োজন।

মাওবাদীদের তরফে এখনও এই ঘটনায় কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে, তারা অতীতে দাবি করেছে যে এই ধরনের আইইডি শুধুমাত্র নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করার জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাস্তবে, এই বিস্ফোরকগুলি অনেক সময় নিরীহ গ্রামবাসীদেরও ক্ষতি করেছে।

পশ্চিম সিংভূমে ১০ কেজি আইইডি উদ্ধারের এই ঘটনা নিরাপত্তা বাহিনীর সতর্কতা এবং দক্ষতার প্রমাণ। এটি মাওবাদীদের পরিকল্পিত হামলা থেকে জওয়ানদের রক্ষা করেছে এবং অঞ্চলের শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। তবে, এই অঞ্চলে মাওবাদী হুমকি এখনও সম্পূর্ণভাবে দূর হয়নি। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান এবং স্থানীয়দের সহযোগিতা এই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।