ভারতীয় রেলওয়ে এবং (Railway Employees) স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI ) গত সোমবার একটি ঐতিহাসিক সমঝোতা স্মারক (MOU) স্বাক্ষর করেছে, যা রেল কর্মীদের এবং তাঁদের পরিবারের জন্য উল্লেখযোগ্য বীমা সুবিধা প্রদান করবে। এই চুক্তি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান সতীশ কুমার এবং এসবিআই-এর চেয়ারম্যান সি.এস. সেট্টির উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এই নতুন বীমা স্কিমটি রেল কর্মীদের কল্যাণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই এমওইউ-এর অধীনে, যে সমস্ত রেল কর্মীদের বেতন অ্যাকাউন্ট এসবিআই-এ রয়েছে, তাঁরা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বীমা সুবিধা পাবেন।
এই স্কিমের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে ১ কোটি টাকার বীমা কভারেজ। এটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স স্কিম (CGEGIS)-এর অধীনে পূর্ববর্তী কভারেজের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, যেখানে গ্রুপ এ কর্মীদের জন্য ১.২০ লক্ষ টাকা, গ্রুপ বি-র জন্য ৬০,০০০ টাকা এবং গ্রুপ সি-র জন্য ৩০,০০০ টাকা বীমা কভারেজ ছিল।
এছাড়া, এসবিআই বেতন অ্যাকাউন্টধারী সমস্ত কর্মীদের জন্য ১০ লক্ষ টাকার প্রাকৃতিক মৃত্যু বীমা কভারেজ প্রদান করা হবে, যার জন্য কোনও প্রিমিয়াম বা মেডিকেল পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না।
এই চুক্তির আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ১.৬ কোটি টাকার বীমা কভারেজ এবং রুপে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অতিরিক্ত ১ কোটি টাকার কভারেজ। এছাড়া, দুর্ঘটনার কারণে স্থায়ী পূর্ণাঙ্গ অক্ষমতার জন্য ১ কোটি টাকা এবং স্থায়ী আংশিক অক্ষমতার জন্য ৮০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে বীমা কভারেজ দেওয়া হবে।
এই সুবিধাগুলি বিশেষ করে গ্রুপ সি-র ফ্রন্টলাইন রেল কর্মীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী, যাঁরা ভারতের বিশাল রেল নেটওয়ার্ক পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বর্তমানে প্রায় ৭ লক্ষ রেল কর্মীর বেতন অ্যাকাউন্ট এসবিআই-এ রয়েছে, যার ফলে এই চুক্তির মাধ্যমে রেলওয়ের একটি বড় অংশের কর্মীরা উপকৃত হবেন। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ ভারতীয় রেলওয়ে এবং এসবিআই-এর সহানুভূতিশীল এবং কর্মীকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
এই স্কিমের সুবিধা গ্রহণের জন্য কর্মীদের তাঁদের বেতন অ্যাকাউন্টকে ‘স্যালারি প্যাকেজ অ্যাকাউন্ট’ হিসেবে রূপান্তরিত করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় কোনও প্রিমিয়াম, বার্ষিক নবায়ন বা জটিল কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই, যা এটিকে একটি সহজ এবং ঝামেলামুক্ত স্কিম করে তুলেছে।
এই স্কিমের প্রথম সুবিধাভোগী হিসেবে মোরাদাবাদ রেল বিভাগের লোকো পাইলট সুশীল লালের পরিবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত মার্চ মাসে তাঁর দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী প্রিয়া সিংকে ১ কোটি টাকার চেক প্রদান করা হয়। এসবিআই দ্রুত ক্লেম প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিবারকে কাগজপত্রে সহায়তা করে এই অর্থ প্রদান করেছে। এই ঘটনা এই স্কিমের কার্যকারিতা এবং তাৎপর্য প্রমাণ করেছে।
এই স্কিম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ভারতীয় রেলওয়ে ব্যাপক প্রচার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। রেল স্টেশন, অফিস এবং লোকো শেডে পোস্টার এবং তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হবে। অল ইন্ডিয়া রেলওয়ে মেন’স ফেডারেশন (AIRF) এবং ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান রেলওয়েমেন (NFIR)-এর মতো প্রধান রেল ইউনিয়নগুলি এই স্কিমের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রেলওয়ের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রকৃতি বিবেচনা করে, এই স্কিম কর্মীদের এবং তাঁদের পরিবারের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
শসায় নতুন রোগের হুমকি! বাংলার কৃষকদের জন্য সতর্কতা ও প্রতিরোধ
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, “এই উদ্যোগ রেল কর্মীদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার প্রমাণ। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য আমরা তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের জন্য উন্নত সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই।” এই স্কিমটি রেল কর্মীদের মনোবল বাড়াতে এবং তাঁদের আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।