তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সায়নী ঘোষ (Sayani) দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। করে সংসদ ভবনের মকর দ্বার থেকে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের দিকে বিরোধী সাংসদদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশি আটককে “রাজনৈতিক অপহরণ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে “ভোট চুরি” এবং বিহারে চলতে থাকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত বিরোধী সাংসদদের “প্রতারিত, বিভ্রান্ত এবং হঠাৎ আক্রমণ” করা হয়েছে।
সায়নী দাবি করেছেন, সাংসদদের বলা হয়েছিল তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গিয়ে দুপুর ২:১০ পর্যন্ত আটক রাখা হয়, যখন সংসদ অধিবেশন চলছিল। তিনি এই ঘটনাকে “গণতন্ত্রের উপর পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ” বলে বর্ণনা করে বলেছেন, এটি বিরোধী মত দমন এবং সংসদীয় বিতর্ক বানচাল করার একটি ষড়যন্ত্র।
সোমবার, ইন্ডিয়া ব্লকের সাংসদরা, যার মধ্যে ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র, সাগরিকা ঘোষ, দোলা সেন, মমতাবালা ঠাকুর, প্রতিমা মণ্ডল, শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, ডিএমকে’র টি আর বালু এবং অন্যান্যরা, সংসদের মকর দ্বার থেকে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের দিকে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করেন।
এই মিছিলের উদ্দেশ্য ছিল ভোটার তালিকায় কথিত কারচুপি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। কিন্তু ট্রান্সপোর্ট ভবনের কাছে দিল্লি পুলিশ ব্যারিকেড স্থাপন করে মিছিলটি আটকে দেয় এবং সাংসদদের পার্লামেন্ট স্ট্রিট পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায়। সায়নী ঘোষ অভিযোগ করেছেন, এই আটক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে পরিচালিত হয়েছে, যিনি দিল্লি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন।
ইন্ডিয়া ব্লকের নেতারা এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। রাহুল গান্ধী বলেন, “এটি গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষার লড়াই। আমরা ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা এবং ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’ নীতির জন্য লড়ছি।” তিনি অভিযোগ করেন, কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ১ লক্ষ ভোট জাল হিসেবে পাওয়া গেছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের দোলা সেন এক্স-এ লিখেছেন, “না গেট বন্ধ হয়েছে, না ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন হয়েছে। তবুও আমাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। বিজেপি ভাবছে, বিরোধীদের ভয় দেখিয়ে পার পেয়ে যাবে।” নয়নিকা রায় বলেন, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে দিল্লি পুলিশ জোর করে সাংসদদের আটক করেছে। এটি গণতান্ত্রিক অধিকারের লঙ্ঘন।”
এই ঘটনার জেরে লোকসভা ও রাজ্যসভা দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়। সাংসদরা সাদা টুপি পরেছিলেন, যাতে লাল ক্রস দিয়ে “এসআইআর” এবং “ভোট চুরি” লেখা ছিল। তাঁরা প্ল্যাকার্ডে লিখেছিলেন, “এসআইআর + ভোট চুরি = গণতন্ত্রের হত্যা”।
এই ঘটনা সংসদীয় বিতর্ককে বাধাগ্রস্ত করেছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন। কংগ্রেস নেতা কেসি ভেনুগোপাল বলেন, “দেশে গণতন্ত্র আর অবশিষ্ট নেই। সাংসদদের নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।”
নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে “ভুল” বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং তাঁকে জাল ভোটারদের তথ্য শপথপূর্বক জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে, কমিশন ৩০ জন সাংসদের সঙ্গে দুপুর ১২টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিল, কিন্তু পুলিশি বাধার কারণে সাংসদরা সেখানে পৌঁছাতে পারেননি।
মার্কিন মুলুকে মুনিরের পারমাণবিক হুমকির তীব্র নিন্দা বিদেশ মন্ত্রকের
সায়নী ঘোষের “রাজনৈতিক অপহরণ” মন্তব্য এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ হিসেবে তুলে ধরেছে। দিল্লি পুলিশের পদক্ষেপ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং সাংসদদের প্রতিবাদের অধিকার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনা ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার উপর নতুন আলোকপাত করতে পারে।