কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠ (Sanjay-Sheth)ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কারণে জনসংখ্যার পরিবর্তনের অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা সাঁওতাল পরগনায় জনসংখ্যার গঠন বদলে দিয়েছে।
তারা আমাদের বোনদের বিয়ে করে তাদের সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে এবং ক্ষমতা দখল করছে। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় সংকল্প নেওয়ার। আমি ঝাড়খণ্ড সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।” এই মন্তব্য ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে।
সাঁওতাল পরগনায় জনসংখ্যার পরিবর্তন
সাঁওতাল পরগনা, ঝাড়খণ্ডের একটি প্রশাসনিক বিভাগ, (Sanjay-Sheth) যেখানে দেওঘর, দুমকা, গোদ্দা, জামতাড়া, পাকুড় এবং সাহিবগঞ্জ জেলা রয়েছে। এই অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে আদিবাসী-অধ্যুষিত হলেও, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এখানে জনসংখ্যার গঠনে পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের একটি হলফনামায় ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে জানানো হয়েছে যে, ১৯৫১ সালে সাঁওতাল পরগনায় আদিবাসী জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ৪৪.৬৭%, যা ২০১১ সালে কমে ২৮.১১%-এ দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে মুসলিম জনসংখ্যা ৯.৪৩% থেকে বেড়ে ২২.৭৩% এবং খ্রিস্টান জনসংখ্যা ০.১৮% থেকে ৪.২১%-এ উন্নীত হয়েছে।
জাতীয় অনুসূচিত উপজাতি কমিশন (এনসিএসটি) তাদের একটি প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে, (Sanjay-Sheth) সাঁওতাল পরগনায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কারণে জনসংখ্যার পরিবর্তন ঘটেছে। এনসিএসটি সদস্যা আশা লাকড়া অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশিরা আদিবাসী মহিলাদের বিয়ে করে তাদের সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে এবং স্থানীয় পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখল করছে। তিনি আরও বলেন, সাহিবগঞ্জ এবং পাকুড় জেলায় এই ধরনের অনুপ্রবেশ বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
সঞ্জয় শেঠের অভিযোগ
কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠ, (Sanjay-Sheth) যিনি বিজেপির একজন প্রভাবশালী নেতা, সাঁওতাল পরগনায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য এই অনুপ্রবেশকে উৎসাহিত করছে।
শেঠ বলেন, (Sanjay-Sheth) “দুই-আড়াই বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন পুলিশকে গোরু পাচারকারীদের না থামানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশ একটি নির্দিষ্ট ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করার জন্য দেওয়া হয়েছিল, যা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ও অপরাধমূলক কার্যকলাপকে উৎসাহিত করেছে।”
শেঠের এই মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Sanjay-Sheth) এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মতো বিজেপি নেতাদের অভিযোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মোদী গত সেপ্টেম্বরে জামশেদপুরে একটি সমাবেশে বলেছিলেন, “বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীরা সাঁতাল পরগনা এবং কোলহান অঞ্চলের জনসংখ্যার গঠন বদলে দিচ্ছে। আদিবাসী জনসংখ্যা কমছে, এবং তাদের জমি দখল করা হচ্ছে।”
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
জেএমএম নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা দাবি করেছে যে, অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের, (Sanjay-Sheth) এবং বিজেপি এই ইস্যুটিকে নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের জন্য ব্যবহার করছে। জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন বলেন, “বিজেপি ঝাড়খণ্ডের পরিচয় বদলাতে চায়। তারা সাঁতাল পরগনাকে রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবি তুলেছে, যা আদিবাসীদের অধিকারের উপর আঘাত।”
ঝাড়খণ্ড জনাধিকার মহাসভা এবং লোকতন্ত্র বাঁচাও অভিযানের একটি তথ্যানুসন্ধানী দল সাঁওতাল পরগনায় তদন্ত করে জানিয়েছে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা বলেন, সাঁওতাল পরগনায় মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ বা বিহার থেকে আগত, এবং শেরশাবাদিয়া মুসলিম সম্প্রদায় মোগল আমল থেকে গঙ্গার তীরে বসবাস করছে। তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা গেছে, আদিবাসী জনসংখ্যা হ্রাসের মূল কারণ হলো অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে বৃহৎ পরিমাণে অভিবাসন।
সমাজে প্রভাব
সঞ্জয় শেঠের মন্তব্য (Sanjay-Sheth) এবং বিজেপির প্রচারণা সাঁতাল পরগনায় সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বিজেপি নির্বাচনের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করছে।” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “আদিবাসীদের জন্য সরকারের উচিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়া, অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে বিভ্রান্তি ছড়ানো নয়।”
কসবা কলেজে সিট গঠন, বিরোধীর চাপ!
আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ
ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট ২০২২ সালে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সাঁওতাল পরগনায় অনুপ্রবেশের (Sanjay-Sheth) অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি তথ্যানুসন্ধানী কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ২০২১ সালে ঝাড়খণ্ড সরকারকে ১৪৫ জন অবৈধ বিদেশী এবং ২০৫ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তির তালিকা দিয়েছিল, কিন্তু রাজ্য সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশিত মাত্রায় পাওয়া যায়নি।
সঞ্জয় শেঠের (Sanjay-Sheth) মন্তব্য এবং সাঁওতাল পরগনায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের অভিযোগ ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করেছে। বিজেপি এই ইস্যুটিকে নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দু করলেও, জেএমএম এবং অন্যান্য গোষ্ঠী এটিকে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের কৌশল হিসেবে সমালোচনা করছে।
আদিবাসী জনসংখ্যা হ্রাসের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান এবং এর সমাধানে সরকারের পদক্ষেপ এখন গুরুত্বপূর্ণ। সাঁতাল পরগনার সামাজিক সম্প্রীতি এবং আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় স্বচ্ছ তদন্ত ও দায়িত্বশীল রাজনীতির প্রয়োজন।