মোবাইল ফোনে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকার যে নির্দেশ দিয়ে স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলক ভাবে ‘সঞ্চার সাথী’ (Sanchar Saathi) অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করার কথা বলেছিল, সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করল সরকার। সংসদে অ্যাপটির সম্ভাব্য গোপনীয়তা-ঝুঁকি নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলার মাঝেই এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগের পরই বাধ্যতামূলক শর্ত প্রত্যাহার
সম্প্রতি একটি সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছিল, দেশের সব স্মার্টফোন নির্মাতাকে নতুন ডিভাইসে সঞ্চার সাথী অ্যাপ প্রি-লোড করতে হবে এবং পুরনো মডেলগুলোকেও আপডেটের মাধ্যমে অ্যাপটি ইনস্টল করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়েই সংসদে প্রশ্ন ওঠে—অ্যাপটি কি ব্যক্তিগত তথ্যের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করতে পারে? ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া কোনও অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করা কতটা ন্যায্য?
এই বিতর্কের মধ্যেই বুধবার কেন্দ্র জানায়, প্রি-ইনস্টলেশন বাধ্যতামূলক নয়, মোবাইল নির্মাতাদের উপর থেকে সেই চাপ পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সরকারের যুক্তি: অ্যাপ শুধুই সাইবার সুরক্ষার জন্য Sanchar Saathi not Mandatory
সরকারের দাবি, সঞ্চার সাথী অ্যাপটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সাধারণ মানুষের জন্য সাইবার প্রতারণা ঠেকানোই এর মূল উদ্দেশ্য। অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা—
সিম কার্ড সংক্রান্ত প্রতারণা শনাক্ত করতে,
অচেনা নম্বর যাচাই করতে,
সন্দেহজনক লেনদেন বা ফিশিং হামলার রিপোর্ট করতে
—সহজেই সক্ষম হন। সরকারের ভাষায়, এটি নাগরিকদের সাইবার সুরক্ষা নিয়ে ‘জন ভাগিদারি’র মডেলকে শক্তিশালী করে।
ব্যাপক জনপ্রিয়তা—একদিনে ৬ লক্ষ নতুন ডাউনলোড
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই ১.৪ কোটি মানুষ সঞ্চার সাথী অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন এবং প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার সাইবার জালিয়াতির তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে জমা পড়ছে।
বিশেষ করে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ লক্ষ নতুন নিবন্ধন হয়েছে—যা দৈনিক গড় রেজিস্ট্রেশনের তুলনায় দশ গুণ বেশি। সরকার মনে করছে, এই বিপুল গ্রহণযোগ্যতাই প্রমাণ করছে যে অ্যাপটি নিয়ে মানুষের আস্থা বাড়ছে।
“বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন নেই”—সরকারের বিবৃতি
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সঞ্চার সাথীর গ্রহণযোগ্যতা দ্রুত বাড়ছে। তাই মোবাইল নির্মাতাদের জন্য অ্যাপটি প্রি-ইনস্টল বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন নেই।”
অর্থাৎ, নাগরিকরা ইচ্ছে করলে অ্যাপটি নিজেরাই ডাউনলোড করবেন—এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই বাধ্যতামূলক শর্ত সরিয়ে নেওয়া হল।
শেষ কথা
সাইবার সুরক্ষা জোরদার করা সরকারের অগ্রাধিকার হলেও, গোপনীয়তা বনাম নিরাপত্তা—এই চিরন্তন বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে। নির্দেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সেই বিতর্ককেই আরও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার প্রতিফলন বলেই মনে করা হচ্ছে।
