উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের (Samajwadi Supporter) কোদাপুর গ্রামে ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা ড. বিমরাও আম্বেদকরের মূর্তি উপড়ে খালে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তৃণমূল এই ঘটনাকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) “দলিত-বিরোধী” এবং “সংবিধান-লঙ্ঘনকারী” মনোভাবের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে কটাক্ষ করেছে ।
তবে, স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গিয়েছে এই ঘটনায় সমাজবাদী পার্টির সমর্থক মোহাম্মদ ইশতিয়াক, মোহাররম আলি এবং মোহাম্মদ আলমের নাম জড়িয়েছে। এই দ্বন্দ্বমূলক পরিস্থিতি রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস তাদের এক্স পোস্টে বলেছে, “আমাদের সংবিধানের প্রণেতা বাবাসাহেব আম্বেদকর, যিনি নিপীড়িতদের মসিহা ছিলেন, তিনি বাংলার মাটিতে সংবিধান সভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তার উত্তরাধিকার আমাদের কাছে পবিত্র। কিন্তু দলিত-বিরোধী, সংবিধান-লঙ্ঘনকারী বিজেপি বারবার তার অপমান করছে। উত্তর প্রদেশের কোদাপুরে বাবাসাহেবের মূর্তি উপড়ে খালে ফেলে দেওয়া হয়েছে, মাটির মতো অপমান করা হয়েছে।
এটি সেই একই ঘৃণামূলক বিজেপি, যারা কলকাতায় অমিত শাহের সমাবেশের সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করেছিল।” তৃণমূলের এই বক্তব্যে বিজেপির বিরুদ্ধে সমতা ও ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামকারী সংস্কারকদের ইতিহাস মুছে ফেলার রাজনীতির অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার বিবরণ
২১ জুলাই, ২০২৫-এ প্রয়াগরাজের কোদাপুর গ্রামে ড. আম্বেদকরের মূর্তি উপড়ে নিকটবর্তী খালে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মূর্তিটি একটি বিতর্কিত কৃষিজমির পথে স্থাপিত ছিল, যা স্থানীয় বিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (গঙ্গানগর) কুলদীপ সিং গুনাওয়াত জানিয়েছেন, “মূর্তিটি একটি স্থানীয় বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। অজ্ঞাত দুষ্কৃতী এটি সরিয়ে খালে ফেলে দিয়েছে।” এই ঘটনায় মোহাম্মদ ইশতিয়াক, মোহাররম আলি এবং মোহাম্মদ আলমের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, যারা সমাজবাদী পার্টির সমর্থক বলে অভিযোগ উঠেছে।
তৃণমূলের অভিযোগ ও রাজনৈতিক বিতর্ক
তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার জন্য বিজেপিকে দায়ী করলেও, এক্স-এ একাধিক পোস্টে সমাজবাদী পার্টির সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মানুষ দাবি করেছেন যে ইশতিয়াক, মোহাররম আলি এবং মোহাম্মদ আলম এই ঘটনার জন্য দায়ী। সমাজ মাধ্যমের কিছু পোস্টে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব এবং ভীম আর্মির প্রতি কটাক্ষ করা হয়েছে, প্রশ্ন তুলে তাদের নীরবতা নিয়ে।
তবে, এই অভিযোগগুলি এখনও পুলিশের তদন্তে নিশ্চিত হয়নি এবং তথ্য অসম্পূর্ণ রয়েছে।তৃণমূল এই ঘটনার সঙ্গে ২০১৯ সালে কলকাতায় অমিত শাহের সমাবেশের সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনার তুলনা করেছে। তারা দাবি করেছে, বিজেপির রাজনীতি সমতা ও ন্যায়ের জন্য লড়াইকারী সংস্কারকদের অবমাননার উপর নির্ভরশীল। তৃণমূলের বক্তব্যে বলা হয়েছে, “বাংলা কখনও ক্ষমা করবে না, ভারত কখনও ভুলবে না।”
বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টির প্রতিক্রিয়া
বিজেপি এই ঘটনায় এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, অতীতে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আম্বেদকরের প্রতি সম্মান প্রকাশ করেছেন এবং দলিত কল্যাণে বিজেপির প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবও এই ঘটনায় নীরব রয়েছেন, যা এক্স পোস্টে সমালোচনার বিষয় হয়েছে। সমাজবাদী পার্টির সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও, তদন্ত এখনও চলছে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
ড. আম্বেদকর ভারতের দলিত সম্প্রদায়ের জন্য এক প্রতীকী ব্যক্তিত্ব। তিনি সংবিধানের প্রণেতা এবং নিপীড়িতদের অধিকারের জন্য সংগ্রামকারী হিসেবে সম্মানিত। তার মূর্তির অপমান গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সমতার নীতির উপর আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনা দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তৃণমূল এই ঘটনাকে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, বিশেষ করে বাংলায়, যেখানে আম্বেদকরের উত্তরাধিকার গভীরভাবে সম্মানিত।
‘অনেকবার সুযোগ পেয়েছেন’, ধনখড়ের ইস্তফায় মোদীর মন্তব্যে
কোদাপুরে আম্বেদকরের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তৃণমূলের বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং সমাজবাদী সমর্থকদের নাম জড়ানো এই ঘটনাকে জটিল করে তুলেছে। পুলিশ তদন্ত এখনও চলছে, এবং এই ঘটনার প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করা সময়ের দাবি। এই ঘটনা কেবল একটি মূর্তির অপমান নয়, বরং ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকারের প্রশ্ন তুলেছে।