মোদী-শাহের রাজ্যে মঞ্চ দখল সমাজবাদী পার্টির

১৬ ফেব্রুয়ারি গুজরাটে অনুষ্ঠিত পুর নির্বাচন (Gujarat Municipal Election) ছিল রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গুজরাটের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই নির্বাচনে দুর্দান্ত…

Samajwadi Party Takes Center Stage in Modi-Shah's Stronghold

১৬ ফেব্রুয়ারি গুজরাটে অনুষ্ঠিত পুর নির্বাচন (Gujarat Municipal Election) ছিল রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গুজরাটের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই নির্বাচনে দুর্দান্ত জয় লাভ করেছে। গুজরাটে ৬৮টি পুরসভায় ভোট হয়েছিল, যার মধ্যে ৬০টিতেই বিজেপি জয়ী হয়েছে। এই জয় শুধু বিজেপির জন্য নয়, গুজরাটের মানুষের সমর্থন এবং দলের সংগঠন শক্তিরও প্রমাণ। বিজেপি এই নির্বাচনে জুনাগড় মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুরসভা দখল করেছে। 

বিজেপির এই বিপুল জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স (পূর্বে টুইটার) এ একটি পোস্ট করে দলকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এই জয় গুজরাটের মানুষের বিশ্বাস এবং দলের কঠোর পরিশ্রমের ফল। তিনি গুজরাটের সঙ্গে পদ্ম শিবিরের ‘নাড়ির টান’ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গুজরাটের জনগণের সাথে বিজেপির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদী। তার এই বক্তব্য বিজেপির জন্য একটি শক্তিশালী মেসেজ প্রেরণ করে, যা আগামী নির্বাচনে দলের অবস্থান আরও মজবুত করবে।

   

তবে, এই জয়ের (Gujarat Municipal Election) মাঝেই একটি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে। গুজরাটে সমাজবাদী পার্টি দুটি পুরসভা দখল করেছে, যা বিজেপির জন্য একটা বড় ধাক্কা। সমাজবাদী পার্টি গুজরাটের কুটিয়ানা এবং রানাভাভ পুরসভা দখল করেছে। এর মধ্যে কুটিয়ানা পুরসভা আগে বিজেপির দখলে ছিল, আর রানাভাভ ছিল ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (NCP) হাতে। সমাজবাদী পার্টির এই জয়, গুজরাটে তাদের উত্থান এবং দলের নতুন অবস্থান তৈরির দিকে ইঙ্গিত দেয়।

অন্যদিকে, গুজরাটের বিরোধী দল কংগ্রেসের জন্য এই নির্বাচনে বড় ধাক্কা এসেছে। কংগ্রেস মাত্র একটি পুরসভা জিততে পেরেছে। এর মধ্যে তাদের হাতে থাকা ১৪টি পুরসভা বিজেপি দখল করেছে। এর মধ্যে রাধনপুর, মহুধা এবং রাজুলা উল্লেখযোগ্য, যেখানে কংগ্রেসের অবস্থান ছিল শক্তিশালী। তবে, কংগ্রেসের একমাত্র সাফল্য ছিল দেবভূমি দ্বারকা জেলার সালায়া পুরসভা ধরে রাখা। এখানে, আম আদমি পার্টি (AAP) ২৮টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসন জিতেছে, যা তাদের উপস্থিতি এবং শক্তি বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

কংগ্রেসের সোমনাথ বিধানসভা কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক বিমল চুড়াসমা পুরভোটে পরাজিত হয়েছেন। তিনি চোড়ওয়াড় পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কিন্তু বিজেপির প্যানেল সেখানে জয়ী হয়েছে। এটি গুজরাটের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কংগ্রেসের আরও অনেক নেতা ও সদস্য এই পরাজয়ের ফলে হতাশ।

এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ত্রিশঙ্কু ফলাফলও দেখা গেছে। গুজরাটের মাঙ্গরোল, ডাকোর, আঙ্কলভ, ছোটৌদেপুর এবং ভাভলায় ফলাফল বিভাজিত ছিল। এসব এলাকায় কোন দলই নিরঙ্কুশ জয় লাভ করতে পারেনি, ফলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বজায় থাকতে পারে। এমন ত্রিশঙ্কু ফলাফল রাজনৈতিক পরিবেশে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং ভবিষ্যতের নির্বাচনী সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিজেপি এই ফলাফলকে তাদের সাংগঠনিক শক্তি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখছে। গুজরাটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সি আর পাতিল এবং মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল সাংবাদিক সম্মেলনে দলের এই বিপুল জয়কে গুরুত্ব দেন। তারা বলেন, এই জয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিজেপির সংগঠন গুজরাটের প্রতিটি কোণায় শক্তিশালী এবং দলের প্রতি মানুষের আস্থা গভীর।

গুজরাটের এই পুর নির্বাচন (Gujarat Municipal Election) একদিকে বিজেপির শক্তি ও সংগঠনের প্রমাণ দিয়েছে, অন্যদিকে বিরোধী দলগুলির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসের পরাজয়ের পর দলটির রাজ্য সংগঠন সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেস রাজ্যে ক্রমাগত জমি হারাচ্ছে এবং তাদের নেতারা নির্বাচনী প্রচারে সাফল্য পাচ্ছেন না। সমাজবাদী পার্টি ও আম আদমি পার্টি তাদের শক্তি বৃদ্ধি করলেও, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে।

গুজরাটের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বিজেপির অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে। তবে, বিরোধী দলগুলির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ভবিষ্যতে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলিকে নিজেদের সংগঠন পুনর্গঠন করতে হবে। মানুষের কাছে নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে। বিজেপি এই জয়কে একটি সাফল্য হিসেবে দেখছে কিন্তু বিরোধী দলগুলির জন্য এই ফলাফল একটি সতর্কবার্তা। যাতে তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এবং আগামী নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।