কংগ্রেস ‘বন্ধু’ পিত্রোদার চিন প্রীতিতে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল

ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ (China India border dispute) একটি দীর্ঘকালীন সমস্যা৷ যা অতীতে ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধ, ১৯৫২ ও ২০২০ সালে সেনাবাহিনীর মধ্যে…

Sam Pitroda Controversial China Remarks Spark Political Debate in India

ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ (China India border dispute) একটি দীর্ঘকালীন সমস্যা৷ যা অতীতে ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধ, ১৯৫২ ও ২০২০ সালে সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা সৃষ্টি করেছে।  সর্বশেষ ২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ও চিনা সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সৈন্য প্রাণ হারান, যার মধ্যে ছিলেন কমান্ডিং অফিসার কর্নেল সন্তোষ বাবুও। এই সংঘর্ষের পর চিনের প্রতি ভারতীয় জনতার মনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল।

এদিকে, চিন সীমান্তের কাছে অবকাঠামো নির্মাণে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সড়ক, হেলিপ্যাড, ব্রিজ সহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে চিন ভারতীয় সীমান্তের কাছে আরও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করছে। বিশেষ করে, চিন বর্তমানে লিপুলেখ পাসে কাইলাশ মণসরোভরের কাছে একটি

   

স্যাটেলাইট সাইট তৈরি করছে, যা ভারতের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। এমন পরিস্থিতিতে, ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের মতামত উঠে আসছে।

এই বিষয়ে সাম পিত্রোদা, প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা এবং ভারতীয় অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা, সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন যে ভারত ও চিনের সীমান্ত বিরোধ “অত্যধিক বাড়ানো হয়েছে”। তিনি বলেন, “আমি চিনের প্রতি কোন হুমকি দেখতে পাচ্ছি না। এটি বেশিরভাগ সময় অতিরঞ্জিত হয়ে থাকে, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শত্রু নির্ধারণের একটি অভ্যেস রয়েছে। আমি মনে করি, এখন সময় এসেছে সমস্ত দেশগুলির জন্য সহযোগিতা করার, সংঘর্ষ না করে।”

এই মন্তব্যটি ভারতীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। পিত্রোদার এই মন্তব্যকে, বিশেষ করে ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকায় ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর প্রেক্ষিতে, অনেকেই অসংবেদনশীল ও অবমাননাকর হিসেবে দেখেছেন। ভারতীয় জনতা এবং রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন, এমন মন্তব্য দেশপ্রেমী সেনাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান। বিজেপি নেতা সুধাংশু ত্রিবেদি এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন এবং বলেন যে পিত্রোদার মন্তব্য “গালওয়ান সংঘর্ষে শহীদ হওয়া ২০ জন জওয়ানের প্রতি অসম্মান”।

এমন পরিস্থিতিতে, কংগ্রেসও পিত্রোদার এই মন্তব্য থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “পিত্রোদার মতামত ব্যক্তিগত এবং কংগ্রেসের মতামত নয়। চিন আমাদের বৃহত্তম বৈদেশিক নীতি, বাহ্যিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে কংগ্রেস পিত্রোদার মন্তব্যকে দলের অবস্থানের প্রতিফলন হিসেবে নাকচ করেছে।

পিত্রোদার অন্যান্য বিতর্কিত মন্তব্য
এটা অবশ্য প্রথম নয় যে পিত্রোদা কংগ্রেসের জন্য অস্বস্তিকর মন্তব্য করেছেন। ২০১৯ সালে, তিনি ১৯৮৪ সালের সিখ বিদ্রোহের সময় কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে “হুয়া তো হুয়া” মন্তব্য করেন, যা দেশব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি করে। একই বছর, তিনি আবার বলেন যে “মধ্যবিত্তের উচিত স্বার্থপর না হওয়া” এবং “যদি কর বাড়ানো হয় তবে তাদের হৃদয় থাকার উচিত”, যা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

এছাড়াও, গত বছর অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধনের সময় পিত্রোদা প্রশ্ন করেন, “রাম মন্দির কি আসল সমস্যা?” যা অনেক হিন্দু সমাজের অনুভূতিতে আঘাত করে। বিজেপি এই মন্তব্যকে কংগ্রেসের “হিন্দু বিরোধী” মনোভাব হিসেবে প্রচার করে।

ভারতীয় বিদেশনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
পিত্রোদার মন্তব্যের পর, দেশব্যাপী আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বিদেশ নীতি এবং সীমান্ত সমস্যা নিয়ে এমন মন্তব্য করা কি সঠিক? ভারতীয় সরকার কখনোই চিনের সাথে সম্পর্কের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি চাননি, কিন্তু সীমান্তে চিনের প্রতিক্রিয়া এবং ক্রমবর্ধমান আধিকারিকতা দেশটির জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত তার সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে চিনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করছে।

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন সম্পর্ক নিয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যা একে অপরের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য শক্তির যুদ্ধের সৃষ্টি করতে পারে। তবে, পিত্রোদার মতামত যে ভারত ও চিনকে সহযোগিতা করতে হবে, সেটা ভারতের পক্ষে সঠিক হতে পারে না, কারণ ভারত তার নিজস্ব নিরাপত্তা এবং সীমান্ত সুরক্ষার জন্য অনেকটাই নির্ভরশীল।

এটি স্পষ্ট যে, ভারতের বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শান্তি ও সহযোগিতার কথা বলা হলেই চলবে না, বরং সীমান্ত নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। পিত্রোদার মন্তব্য অনেকেরই মনোযোগ আকর্ষণ করলেও, তা ভারতের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ও সামরিক কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ভারতীয় রাজনৈতিক মহলে এ ধরনের মন্তব্যের প্রভাব, বিশেষ করে সীমান্ত পরিস্থিতি এবং সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগের বিষয়টি মাথায় রেখে, অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।