কলকাতা, ৬ সেপ্টেম্বর: সাহারা ইন্ডিয়া (Sahara) পারিবারের প্রতিষ্ঠাতা সুব্রত রায়ের স্ত্রী স্বপ্না রায় এবং পুত্র সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ১.৭৪ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। এই বিশাল আর্থিক কেলেঙ্কারি, যা কোটি কোটি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে জড়িত, ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক জালিয়াতির ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কলকাতার প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ) আদালতে দাখিল করা এই অভিযোগপত্রে সাহারা গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। সুব্রত রায়ের স্ত্রী এবং পুত্রকে পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে, যা এই মামলার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ইডি-র তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে, সাহারা গ্রুপ উচ্চ রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছিল, কিন্তু প্রতিশ্রুত টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। এই কেলেঙ্কারির মূল অভিযোগ হলো, সাহারা ইন্ডিয়া এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলি অবৈধভাবে ১.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
অভিযোগপত্রে সুব্রত রায়ের স্ত্রী স্বপ্না রায়, পুত্র সুশান্ত রায় এবং গ্রুপের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা, যেমন জেপি বর্মা এবং অনিল আব্রাহামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইডি-র তদন্তে আরও জানা গেছে, সাহারা গ্রুপের হুমারা ইন্ডিয়া কো-অপারেটিভ সোসাইটি থেকে ২৪,০০০ কোটি টাকারও বেশি তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল, যা এই জালিয়াতির বিশালতার প্রমাণ দেয়।
২০২৫ সালের জুলাই এবং আগস্টে ইডি দেশের বিভিন্ন শহরে সাহারা গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির উপর ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানে ৭০৭ একর জমি সহ গ্রুপের উল্লেখযোগ্য সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যা অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
এছাড়া, ইডি পিএমএলএ-র অধীনে সাহারা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ৫০০টিরও বেশি এফআইআর দায়ের করেছে। এই পদক্ষেপগুলি সাহারা গ্রুপের আর্থিক অপকর্মের বিশালতা এবং এর ব্যাপক প্রভাবকে তুলে ধরেছে।
এই মামলার শিকড় ২০১০ সালে, যখন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) সাহারা গ্রুপের দুটি সংস্থা—সাহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট কর্পোরেশন লিমিটেড (এসআইআরইসিএল) এবং সাহারা হাউজিং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এসএইচআইসিএল)—এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অপশনালি ফুলি কনভার্টেবল বন্ড (ওএফসিডি) জারি করে প্রায় ৩ কোটি বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ তুলেছিল।
২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই দুটি সংস্থাকে ২৪,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে, সাহারা গ্রুপ এই নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হয় এবং সুব্রত রায়কে ২০১৪ সালে তিহার জেলে পাঠানো হয়। তিনি ২০১৬ সালে তাঁর মায়ের শেষকৃত্যের জন্য প্যারোলে মুক্তি পান এবং তখন থেকে তিনি জেলের বাইরে ছিলেন। ২০২৩ সালে সুব্রত রায়ের মৃত্যুর পর এই মামলা আবারও আলোচনায় এসেছে।
সুব্রত রায়ের স্ত্রী এবং পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সাহারা গ্রুপের আর্থিক কার্যকলাপে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং অবৈধ তহবিল স্থানান্তরে সহায়তা করেছেন। ইডি-র দাবি, সাহারা গ্রুপ মধ্যপ্রদেশে ৫০০ একরেরও বেশি জমি বিক্রি করে ৭২.৮২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
যা সেবি-সাহারা রিফান্ড অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার পরিবর্তে অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই জমির বাজার মূল্য প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা হলেও, মাত্র ১২০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল।
সাহারা গ্রুপ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে তারা বিনিয়োগকারীদের ৯৫% টাকা ফেরত দিয়েছে। তবে, সেবি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে, বিনিয়োগকারীদের তথ্য যাচাইয়ে ব্যর্থতা এবং অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। ২০২৩ সালে সেবি জানিয়েছিল, তারা মাত্র ১৩৮ কোটি টাকা ফেরত দিতে সক্ষম হয়েছে, যা মোট দায়ের তুলনায় নগণ্য।
PNB এবং রাজস্থান সরকারের মধ্যে ২১ হাজার কোটি টাকার চুক্তি
এই মামলায় সুব্রত রায়ের পরিবারের সদস্যদের পলাতক ঘোষণা এবং বিশাল অঙ্কের অর্থ জড়িত থাকায় এটি জনমনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। সাহারা গ্রুপের এই কেলেঙ্কারি ভারতের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার ঝুঁকি তুলে ধরেছে। আগামী দিনে এই মামলার তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে এগোয়, তা নিয়ে দেশের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে।