Sachin Pilot’s Explosive Statement on Employment Crisis in Bihar
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এবং রাজস্থানের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট (sachin pilot) শুক্রবার বিহারের নীতীশ কুমার নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, রাজ্যে শ্রমিকদের অভিবাসন রোধ এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। পাটনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পাইলট বলেন, “নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন সরকার বিহার থেকে শ্রমিকদের দেশের অন্যান্য অংশে অভিবাসন বন্ধ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে এই সরকার ব্যর্থ
এছাড়াও, তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতেও এই সরকার ব্যর্থ। বহু বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী থাকা নীতীশ কুমারকে রাজ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের দায় নিতে হবে।” পাইলট (sachin pilot) আরও অভিযোগ করেছেন যে বিহারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এই সমালোচনা বিহারে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে এসেছে, যেখানে অভিবাসন, বেকারত্ব এবং শাসনব্যবস্থা আসন্ন নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মায়ানমারে ত্রাণ এবং সমস্যা সমাধানে ভারতীয় সেনার নতুন শক্তি রোবট
সমালোচনার পটভূমি
পাইলটের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিহারে কংগ্রেস নেতা কানহাইয়া কুমারের নেতৃত্বে ‘পলায়ন রোকো, নৌকরি দো যাত্রা’ নামে একটি বৃহৎ প্রচারণা চলছে। এই যাত্রার লক্ষ্য রাজ্যে বেকারত্ব এবং সরকারের তরুণদের প্রতি উদাসীনতার বিষয়টি তুলে ধরা।
পাটনায় এই যাত্রার সমাপ্তি পর্বে অংশ নিতে এসে পাইলট (sachin pilot) রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উপর তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নীতীশ সরকার এবং কেন্দ্রের মোদী সরকার তরুণদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমরা তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং উত্তর দাবি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।” বিহারে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের অভিবাসন এবং বেকারত্ব একটি জটিল সমস্যা।
রাজ্যের তরুণরা কর্মসংস্থানের অভাবে দিল্লি, মুম্বই, পাঞ্জাব এবং গুজরাটের মতো শহরগুলিতে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে। এই অভিবাসন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সমস্যাই নয়, বরং সামাজিক এবং পারিবারিক বিচ্ছেদের কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাইলটের মতে, নীতীশ কুমারের সরকার এই সমস্যার সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব
পাইলট বিহারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “বিহারে এমন কোনো পরীক্ষা হয় না যা ন্যায্যভাবে এবং বিতর্ক ছাড়াই সম্পন্ন হয়। এই সরকার তরুণদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করতে অক্ষম। রাজ্যের এনডিএ সরকার গরিববিরোধী এবং তরুণবিরোধী।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, নিয়োগ পরীক্ষাগুলিতে পেপার ফাঁস এবং অনিয়মের ঘটনা সাধারণ হয়ে উঠেছে, যা তরুণদের মধ্যে হতাশা এবং অবিশ্বাস সৃষ্টি করছে।
বিহারে সরকারি চাকরির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলি প্রায়ই বিতর্কের মুখে পড়ে। গত কয়েক বছরে একাধিক পরীক্ষায় পেপার ফাঁস এবং অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। পাইলটের এই মন্তব্য এই সমস্যাগুলিকে আরও উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরেছে এবং সরকারের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলেছে।
পলায়ন রোকো, নৌকরি দো যাত্রা (sachin pilot)
পাইলট পাটনায় এসেছিলেন কানহাইয়া কুমারের নেতৃত্বাধীন ‘পলায়ন রোকো, নৌকরি দো যাত্রা’র সমাপ্তি পর্বে অংশ নিতে। এই যাত্রা গত ২৬ দিন ধরে বিহারের একাধিক জেলা অতিক্রম করেছে এবং শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানী পাটনায় এর সমাপ্তি হয়। এই প্রচারণায় প্রায় ৫,০০০ কংগ্রেস কর্মী অংশ নিয়েছেন, যারা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাসভবনের দিকে একটি গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছেন। এই যাত্রার মাধ্যমে কংগ্রেস তরুণদের সমস্যা এবং সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছে।
পাইলট বলেন, “এই যাত্রা আমাদের তরুণদের জন্য একটি ডাক। বিহারে যে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা এবং তরুণদের প্রতি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য।” তিনি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করে বলেন, “কংগ্রেস দল তরুণদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করবে এবং তাদের হারানো সুযোগের জন্য ন্যায় দাবি করবে।”
বিহারের পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা
বিহার থেকে শ্রমিকদের অভিবাসন দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুতর সমস্যা। রাজ্যের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হলেও শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাবে তরুণরা অন্য রাজ্যে কাজের সন্ধানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এই অভিবাসন শুধুমাত্র বেকারত্বের ফল নয়, বরং রাজ্যের অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব এবং শিক্ষার মানের ঘাটতিরও ফল। পাইলটের মতে, নীতীশ কুমারের সরকার এই সমস্যার সমাধানে কোনো কার্যকর নীতি গ্রহণ করেনি।
তিনি আরও বলেন, “বিহারের মানুষ দারিদ্র্য, অসহায়তা এবং অবিশ্বাসের কারণে জীবিকার জন্য অন্য রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। এই অবস্থার জন্য সরকার দায়ী।” তিনি অভিযোগ করেন যে, নীতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমর্থনের বিনিময়ে বিহারের তরুণদের জন্য ১০-২০ লাখ চাকরির দাবি করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
পাইলটের এই সমালোচনা এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিহারে ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ইউনাইটেড) এবং বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) তীব্র প্রচারণা চালাচ্ছে।
বেকারত্ব এবং অভিবাসনের মতো ইস্যুগুলি নির্বাচনের প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস এই যাত্রার মাধ্যমে তরুণ ভোটারদের মধ্যে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। কানহাইয়া কুমারকে তরুণ নেতা হিসেবে সামনে আনার মাধ্যমে দলটি তৃণমূল পর্যায়ে সমর্থন বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে। পাইলটের উপস্থিতি এই প্রচারণায় আরও গতি সঞ্চার করেছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
নীতীশ কুমারের সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পাইলটের এই সমালোচনার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, সরকার দাবি করে আসছে যে তারা ‘সাত নিশ্চয়’ পরিকল্পনার মাধ্যমে ১২ লাখ সরকারি চাকরি প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সরকারের এই দাবি বিরোধী দলগুলির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যারা বলছে যে এই প্রতিশ্রুতি কেবল নির্বাচনী প্রচারণার অংশ।
সচিন পাইলটের সমালোচনা বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার মন্তব্য নীতীশ কুমার সরকারের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলেছে এবং তরুণদের মধ্যে ক্ষোভকে আরও প্রকট করেছে। ‘পলায়ন রোকো, নৌকরি দো যাত্রা’র মতো প্রচারণার মাধ্যমে কংগ্রেস বিহারের তরুণ ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে। আগামী দিনে এই ইস্যুগুলি কীভাবে নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়। বিহারের রাজনীতিতে বেকারত্ব এবং অভিবাসনের সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।