প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (modi) পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে একটি জনসভায় তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তৃণমূল সরকার বাংলার যুব সমাজকে রাস্তায় নামিয়েছে এবং রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
মোদীর অভিযোগ (modi)
প্রসঙ্গত এসএসসি দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি (modi) বলেন এই সরকার অপরাধ করেও তা স্বীকার করেনা। হাজার হাজার ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ আজ সংশয়ের মুখে। তিনি আরও বলেন, কমপক্ষে ৮ লক্ষ চাকরির দরখাস্ত এখনো ঝুলে রয়েছে এবং বাংলার নির্মম সরকার তার উপর বসে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যখন ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের একজন মহিলা, দ্রৌপদী মুর্মু, নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখনও তৃণমূল কংগ্রেস তাঁর বিরোধিতা করেছিল। এই বক্তব্যে তিনি রাজ্যের শাসক দলের নীতি ও আচরণের উপর তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।
“তৃণমূল সরকার বাংলার যুব সমাজকে রাস্তায় নামিয়েছে
আলিপুরদুয়ারে একটি জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী (modi) বলেন, “তৃণমূল সরকার বাংলার যুব সমাজকে রাস্তায় নামিয়েছে। এই নির্মম সরকারের কারণে রাজ্যে হিংসা, অরাজকতা ছড়িয়ে পড়েছে। নারীদের নিরাপত্তা নেই, গরিবদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে, এবং যুব সমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের মুখে।”
তিনি (modi) আরও অভিযোগ করেন যে, তৃণমূল সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প, যেমন আয়ুষ্মান ভারত, পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। এই প্রকল্পগুলো রাজ্যের দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মোদী (modi) তাঁর বক্তৃতায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি তৃণমূল সরকারের উদাসীনতার উপর বিশেষ জোর দেন। তিনি বলেন, “বাংলার আদিবাসী ভাই-বোনেদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। যখন আমরা একজন আদিবাসী মহিলাকে, দ্রৌপদী মুর্মুকে, ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেছিলাম, তখনও তৃণমূল তাঁর বিরোধিতা করেছিল। এটাই তাদের মানসিকতা।” তিনি এই ঘটনার উল্লেখ করে তৃণমূলের আদিবাসী-বিরোধী মনোভাবের সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী (modi) আরও বলেন যে, তৃণমূল সরকার পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ তহবিল, রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার কারণে সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। “রাজনীতি নিজের জায়গায় থাকুক, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া মানুষ, দরিদ্র এবং মহিলাদের সঙ্গে কেন এমন ব্যবহার করছে তৃণমূল সরকার?” তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন।
মোদী(modi) তাঁর বক্তৃতায় বাংলার যুব সমাজের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “বাংলার যুব সমাজ দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের মেধা, সৃজনশীলতা এবং শক্তি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হতে পারে। কিন্তু তৃণমূল সরকার তাদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।” তিনি যুব সমাজকে উৎসাহিত করতে বলেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের জন্য বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে। তবে, রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার কারণে এই প্রকল্পগুলো পশ্চিমবঙ্গে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
এই সভায় প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেন যে, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। তিনি উল্লেখ করেন, “নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে তৃণমূল সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। রাজ্যে হিংসা এবং অরাজকতা বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতি বাংলার জনগণের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।” তিনি আরও বলেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, কিন্তু রাজ্য সরকারের সহযোগিতার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।
জঙ্গিহানার পর আরও মজবুত হয়েছে ভারতের ঐক্য: প্রধানমন্ত্রী
বিজেপির প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান
এই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী (modi) বাংলার জনগণকে বিজেপির প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বাংলায় পরিবর্তনের সময় এসেছে। মোদী বলেন এই নির্মম সরকার আর চাইনা। ভাজপা ই পারে এই অচলায়তন থেকে মুক্তি দিতে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং উন্নত বাংলা গড়তে চাই, যেখানে যুব সমাজ, মহিলা এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মর্যাদা ও সুযোগ নিশ্চিত হবে।” তিনি বিজেপির ‘পরিবর্তন সংকল্প সভা’র মাধ্যমে রাজ্যের জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করার চেষ্টা করেন।
রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া
এই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হয়েছে মোদী এক পরিযায়ী পাখির নাম, যিনি শুধু ভোটের আগে এসে পরিবেশ উত্তপ্ত করেন। তৃণমূল নেতারা দাবি করেছেন যে, তাঁদের সরকার রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের জন্য কাজ করে চলেছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতার কারণেই অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তবে, বিজেপি নেতারা মোদীর এই বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেছেন যে, তৃণমূলের শাসনকালে রাজ্যে উন্নয়নের গতি থমকে গেছে এবং পরিবর্তনের জন্য জনগণ প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর এবং বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। আগামী দিনে এই বক্তব্যের প্রভাব রাজ্যের রাজনীতিতে কীভাবে প্রতিফলিত হবে, তা দেখার বিষয়। তবে, মোদির এই বক্তৃতা রাজ্যের যুব সমাজ এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।