দিল্লি, ৩১ অক্টোবরঃ দেশের ঐক্যের প্রতীক সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর মেজর ধ্যানচাঁদ ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হল ‘রান ফর ইউনিটি ২০২৫’। শুক্রবার সকালে এই দৌড় প্রতিযোগিতার সূচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ( Amit Shah) । অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের মাধ্যমে সর্দার প্যাটেলের ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছেন।”
অমিত শাহ স্মরণ করেন স্বাধীনতার সময় সর্দার প্যাটেলের সামনে থাকা কঠিন চ্যালেঞ্জগুলির কথা। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে যখন দেশ বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল, তখন গোটা বিশ্ব বিশ্বাস করেছিল যে ৫৬২টি দেশীয় রাজ্যকে একত্র করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সর্দার প্যাটেল তাঁর অসাধারণ কূটনৈতিক দক্ষতা ও দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে এই রাজ্যগুলিকে একত্রিত করে এক নতুন ভারতের মানচিত্র তৈরি করেছিলেন।
অমিত শাহ বলেন, “সেই সময়ে অনেক রাজ্য একত্র হতে দ্বিধা করেছিল। কিন্তু সর্দার প্যাটেল সাহস, ধৈর্য ও বাস্তব বুদ্ধি দিয়ে প্রতিটি সমস্যার সমাধান করেছিলেন। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্বেই ভারতের রাজনৈতিক ঐক্যের ভিত স্থাপন হয়।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যদিও সর্দার প্যাটেল অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যকে একত্র করেছিলেন, তবুও অনুচ্ছেদ ৩৭০ থাকার কারণে জম্মু ও কাশ্মীর পুরোপুরি ভারতের সঙ্গে একীভূত হতে পারেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই অসম্পূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করেছেন। অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের মাধ্যমে তিনি সর্দার প্যাটেলের স্বপ্ন পূরণ করেছেন, আজ আমরা ‘অখণ্ড ভারত’-এর বাস্তব চিত্র দেখতে পাচ্ছি।”
অমিত শাহ দাবি করেন, দেশের ইতিহাসে এটি এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ যা ভারতের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তাঁর মতে, জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণ একীকরণ শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থকে সম্পূর্ণ করেছে।এই উপলক্ষে তিনি কংগ্রেসের পূর্ববর্তী সরকারগুলিকেও কটাক্ষ করেন। অমিত শাহ বলেন, “স্বাধীনতার পরে কংগ্রেস সরকার সর্দার প্যাটেলকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীন ভারতের প্রথম গৃহমন্ত্রী হয়েও তাঁকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়নি। তাঁর ভারতরত্ন পুরস্কার পেতে লেগেছিল ৪১ বছর।”
তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘকাল ধরে দেশে সর্দার প্যাটেলের নামে কোনও বড় স্মৃতিসৌধ ছিল না। এটি কেবল তখনই সম্ভব হয়েছিল, যখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তখনই তিনি ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’-র ভাবনা প্রকাশ করেন এবং সেই ভাবনাকেই বাস্তবে রূপ দেন।” অমিত শাহ উল্লেখ করেন, “২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর সর্দার প্যাটেলের জন্মজয়ন্তীতেই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি-র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। আজ সেই স্মৃতিসৌধ বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি হিসেবে ভারতের গৌরব বহন করছে।”
অনুষ্ঠানে অমিত শাহ সর্দার প্যাটেলের অবদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, “যদি সর্দার প্যাটেল না থাকতেন, তবে আজকের ভারতের মানচিত্র আমরা দেখতে পেতাম না। তিনি ছিলেন ভারতের প্রকৃত সংহতির স্থপতি। তাঁর দেশপ্রেম, কঠোর পরিশ্রম এবং বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিই ভারতের ভিত্তি মজবুত করেছে।”
অমিত শাহের বক্তব্যে প্রতিফলিত হয় যে ‘রান ফর ইউনিটি’ শুধুমাত্র একটি প্রতীকী দৌড় নয়, বরং এটি একতা, দেশপ্রেম এবং আত্মনিবেদনের বহন করে। অনুষ্ঠান শেষে তিনি সকল নাগরিককে আহ্বান জানান—সর্দার প্যাটেলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভারতের নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য।



