মুসলিম–খ্রিস্টানরাও যোগ দিতে পারেন সংঘে! তবে শর্ত বাধলেন ভগবত

RSS Membership All Faiths

ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে নতুন আলোচনার জন্ম দিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত। রবিবার সংগঠনের একটি অভ্যন্তরীণ আলোচনাসভায় তিনি বলেন, মুসলিম ও খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের মানুষ সংঘে যোগ দিতে পারেন, তবে নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় আলাদা করে রেখে, ঐক্যবদ্ধ হিন্দু সমাজের সদস্য হিসেবে।

Advertisements

মুসলিম-খ্রিস্টান সকলেই যোগ দিতে পারেন আরএসএস-এ

ভাগবত বলেন, “সংঘে কোনও ব্রাহ্মণ, কোনও মুসলিম, কোনও খ্রিস্টান, আলাদা পরিচয়ে কেউই যোগ দেন না। এখানে সবাই হিন্দু সমাজের সন্তান হিসেবে আসেন, ভরত মাতার সন্তান হিসেবে।” তাঁর কথায়, “যে কোনও ধর্মবিশ্বাসের মানুষ, মুসলিম, খ্রিস্টান, সবাই সংঘের অংশ হতে পারেন, তবে আলাদা পরিচয় সঙ্গে আনবেন না। নিজের বিশেষত্ব রাখুন, কিন্তু যখন শাখায় আসবেন, তখন আসবেন হিন্দু সমাজের সদস্য হিসেবে।”

   

আরএসএস প্রধান আরও জানান, সংঘের দৈনন্দিন শাখাগুলিতে অংশগ্রহণকারীদের ধর্ম বা জাতি সম্পর্কে কখনও প্রশ্ন করা হয় না। “শাখায় মুসলিম আসেন, খ্রিস্টানও আসেন। অন্য জাতির মানুষ যেমন আসেন, তেমনই। কিন্তু আমরা গোনাগুনতি রাখি না, কারও পরিচয় জানতে চাই না। সবাই ভরত মাতার সন্তান— এটাই সংঘের দর্শন,” মন্তব্য তাঁর।

কংগ্রেস নেতাদের সমালোচনার জবাব RSS Membership All Faiths

সংঘের নিবন্ধন ও আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে কংগ্রেস নেতাদের সমালোচনার জবাবে ভাগবত বলেন, “সংঘ ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন কি আমরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে গিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতাম? স্বাধীনতার পরও আমাদের জন্য তা বাধ্যতামূলক ছিল না।” তিনি আরও বলেন, “সংঘকে ‘বডি অফ ইন্ডিভিজুয়ালস’ হিসেবে আদালত ও আয়কর বিভাগ স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনবার সংঘের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। যদি আমরা না থাকতাম, সরকার তখন কাদের নিষিদ্ধ করেছিল?”

জাতীয় পতাকা নিয়ে বিতর্কেরও জবাব দেন ভাগবত। তাঁর দাবি, “সংঘ সর্বদা তিরঙ্গার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা তার সুরক্ষা করি, তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। তবে গেরুয়া পতাকা, যা সংঘে ‘গুরু’ রূপে পূজিত, সেটিরও প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে।”

Advertisements

সংঘ কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না

রাজনীতির প্রসঙ্গেও মোহন ভাগবত স্পষ্ট করেন, “সংঘ কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না, বরং এমন নীতি সমর্থন করে যা দেশের মঙ্গলে কাজ করে। আমরা ভোট রাজনীতিতে নেই। সংঘের কাজ সমাজকে একত্রিত করা, আর রাজনীতি প্রকৃতিগতভাবে বিভাজন সৃষ্টি করে।”

বিদেশনীতি প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে ভাগবতের মন্তব্য, “শান্তি সম্ভব, যদি পাকিস্তান ভারতবিরোধী কাজ বন্ধ করে। যতদিন তারা ভারতের ক্ষতিতে আনন্দ পাবে, ততদিন শান্তি আসবে না। তবে যদি এভাবে চলতে থাকে, একদিন শিক্ষা পাবে, যেমন ১৯৭১-এ পেয়েছিল।”

জাতি নিয়ে বিভ্রান্তি

জাতিভেদ প্রসঙ্গে আরএসএস প্রধান বলেন, “এখন আর জাতপাত নেই, আছে জাতি নিয়ে বিভ্রান্তি। ভোট রাজনীতি ও নানা সুবিধার রাজনীতি সেই বিভ্রান্তি টিকিয়ে রাখছে। জাতি নির্মূলের দরকার নেই, জাতি ভুলে যাওয়াই প্রয়োজন।”

‘লাভ জিহাদ’ বিতর্কে তিনি আহ্বান জানান আত্মশক্তি বৃদ্ধির। তাঁর ভাষায়, “অন্যরা কী করছে সে দিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট না করে, নিজেদের ঘরে হিন্দু সংস্কারকে আরও শক্তিশালী করুন।”