মোদীর ভাষণে RSS! ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ কংগ্রেসের

৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্যেশে ভাষণ দিয়েছেন (Modi Speech)। এই ভাষণে তিনি RSS এর নাম নিয়েছেন। এই বক্তৃতাকে কেন্দ্র…

Modi Speech controversy

৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্যেশে ভাষণ দিয়েছেন (Modi Speech)। এই ভাষণে তিনি RSS এর নাম নিয়েছেন। এই বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক তৈরী করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাথ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তিনি অভিযোগ করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে লাল কেল্লার মঞ্চ থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) নাম উল্লেখ করে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি অবমাননা করেছেন।

   

শ্রীনাথ বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে দেশের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লার মতো মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চ থেকে এমন একটি সংগঠনের নাম উল্লেখ করেছেন, যে সংগঠনকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল নিষিদ্ধ করেছিলেন। এই সংগঠনই সেই সংগঠন, যেখান থেকে নাথুরাম গডসে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার প্রেরণা পেয়েছিলেন।”

সুপ্রিয়া শ্রীনাথ আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তুলনায় আরএসএস-কে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা শুধুমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি অবমাননা নয়, বরং দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি অসম্মান।” তিনি দাবি করেন যে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের শহিদদের অবদানকে খাটো করার প্রচেষ্টা।

সুপ্রিয়া শ্রীনাথ তাঁর বক্তব্যে আরএসএস-এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পর সর্দার প্যাটেল, যিনি তৎকালীন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, আরএসএস-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। শ্রীনাথের মতে, এই সংগঠনের আদর্শ ও কার্যকলাপ স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।

তিনি বলেন, “যে সংগঠনের ইতিহাস স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা ও বিভাজনের সঙ্গে জড়িত, সেই সংগঠনকে লাল কেল্লার মতো পবিত্র মঞ্চ থেকে প্রশংসা করা গ্রহণযোগ্য নয়।”

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে আরএসএস-এর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন বলে শ্রীনাথের অভিযোগ। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর ভাষণে আরএসএস-এর উল্লেখ অপ্রত্যাশিত ছিল। এটা এমন একটি সংগঠন, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেনি।”

Advertisements

শ্রীনাথের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ইতিহাসের তথ্য বিকৃত করার একটি প্রচেষ্টা।কংগ্রেসের অবস্থানকংগ্রেস দল এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। শ্রীনাথ বলেন, “লাল কেল্লা শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়, এটি দেশের স্বাধীনতা ও ঐক্যের প্রতীক। এই মঞ্চ থেকে এমন একটি সংগঠনের প্রশংসা করা, যার ইতিহাস বিতর্কিত, তা দেশের জনগণের জন্য অপমানজনক।”

তিনি আরও বলেন যে কংগ্রেস দল এই বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবে।কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারাও এই বক্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। দলের মুখপাত্ররা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্য দেশের ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তারা দাবি করেছেন যে প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদানের উপর বেশি জোর দেওয়া।

সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে যেখানে কিছু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সমর্থন করছেন, সেখানে অনেকেই শ্রীনাথের মতামতের সঙ্গে একমত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন যে লাল কেল্লার মতো মঞ্চে রাজনৈতিক সংগঠনের উল্লেখ এড়ানো উচিত ছিল।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আরএসএস-এর পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে সংগঠনের সমর্থকরা বলছেন যে আরএসএস দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে তাদের উল্লেখ স্বাভাবিক।সুপ্রিয়া শ্রীনাথের এই বক্তব্য ভারতের রাজনৈতিক মহলে এক নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে।

বাঙালি সুরক্ষায় রাজ্যপালের বার্তা, আস্থা রাখতে পারলেন না পার্থ

লাল কেল্লার মতো পবিত্র মঞ্চ থেকে আরএসএস-এর উল্লেখ কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে আলোচনা তীব্র হয়েছে। কংগ্রেস দল এই বিষয়ে তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কোন দিকে যায়, তা দেখার বিষয়।