অরুণাচল প্রদেশের দিবাং ভ্যালি জেলার রোইং শহরে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা (Rizabul Karim)সাম্প্রতিককালে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। মাউন্ট কর্মেল মিশন স্কুলে কয়েকজন নাবালিক মেয়েদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে জনগণের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ঘটনার পর প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে স্কুলটি স্থায়ীভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশনার মাধ্যমে সমস্ত অভিভাবক ও অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে উত্তোলন করে স্থানীয় সরকারি বা স্বীকৃত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
ঘটনার তথ্য অনুযায়ী, ১১ জুলাই রোইং শহরে একদল ক্রুদ্ধ জনতা মাউন্ট কর্মেল স্কুলে ঘটে যাওয়া কুকর্মের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়ে। অভিযুক্ত ব্যক্তি, ২০ বছরের রিজাউল কুরিম (Riza-ul Kurim)-কে তাদের হাতে তুলে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর শুরু করে।
এই হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর রিজাউল পরে মারা যায়। রিজাউলকে পুলিশ আগে থেকেই এই কুকর্মের অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল, তবে জনতার উগ্র প্রতিবাদে আইনি প্রক্রিয়া ভেঙে পড়ে এবং এই ভয়াবহ লিঞ্চিং ঘটনা ঘটে।
জনগণের রাগ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
এই নৃশংস ঘটনার পর জনগণের মধ্যে উত্তেজনা এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা (CrPC) জারি করে রোইং শহরে কারফু আরোপ করেছে। সংবেদনশীল এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী প্রকাশ্যে নেমেছে এবং পরিস্থিতি নজরদারি করা হচ্ছে।
প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ জনগণকে শান্তি বজায় রাখতে এবং আইনের পথে বিচারের জন্য সময় দিতে আহ্বান জানিয়েছে। এর পাশাপাশি নির্যাতনের অভিযোগ এবং জনতার হিংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের পেছনে থাকা পরিস্থিতি তদন্তের জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে।
স্থানীয় মিশমি সম্প্রদায়ের মানুষ এই ঘটনায় গভীরভাবে জড়িত ছিল, যা স্থানীয় ও বাহিরের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের প্রকাশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। মিশমি সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে দিবাং ভ্যালি অঞ্চলে বসবাস করছে এবং তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
ব্রিটিশ কলোনিয়াল আমল থেকে, বিশেষ করে ১৯৮৫ সাল থেকে চীনের প্রভাব থেকে এই অঞ্চল রক্ষার জন্য ব্রিটিশ প্রশাসনের চেষ্টা চালু ছিল, যা Aiyadurai ও Lee-এর ২০১৮ সালের নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঐতিহাসিক পটভূমি এই ঘটনার গভীরতা বোঝাতে সাহায্য করে।
রিজাউল কুরিম কে?
রিজাউল কুরিম (১৯ বছর বয়সী) একজন অসমের মাইগ্রেন্ট শ্রমিক ছিলেন, যিনি এই অঞ্চলে কাজ করার জন্য এসেছিলেন। তিনি কয়েকজন ৬ থেকে ৮ বছর বয়সী নাবালিক মেয়ের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার হন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর ১৫ জুলাই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ঘটনার পর পুলিশের দ্বারা কোনো গ্রেফতারি করা হয়নি, যা আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে।
সামাজিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ
ভারতের জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (NCRB) ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে মোব ভায়োলেন্সের ক্ষেত্রে ২৮% বৃদ্ধি ঘটেছে। এই পরিসংখ্যান দূরবর্তী এলাকায় আইন প্রয়োগ এবং জনতার স্বতন্ত্র বিচারের চ্যালেঞ্জের দিকে ইঙ্গিত করে। রোইং-এর মতো স্থানে পুলিশ এই কেসটি সংবেদনশীল বলে বিবেচনা করে সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা আইনের শাসনকে জনগণের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।
গেরুয়া রাজ্যে গণপ্রহারে মৃত রিজাউল করিম, জারি কারফিউ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব
মাউন্ট কর্মেল স্কুলের বন্ধ ঘোষণা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। এই ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শিশু সুরক্ষার প্রশ্ন তুলে ধরেছে। জেলা পুলিশ সুপার রিঙ্গু নগুপোক জানিয়েছেন যে প্রশাসন এবং পুলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।
রোইং-এর এই ঘটনা একটি গভীর সামাজিক এবং আইনি সংকটের পরিচয় দেয়। জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং আইনের হাতে বিচারের পরিবর্তে স্বতন্ত্র বিচারের দিকে যাওয়া ভবিষ্যতে আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন, সমাজ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা জরুরি, যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে এবং শিশুদের