যুদ্ধ প্রস্তুতিতে টাইগার ডিভিশনের মনোভাব দেখে ‘বিস্ফোরক’ জিওসি

rising-star-corps-goc-operational-review-tiger-division-indian-army

ভারতের উত্তর ও পশ্চিম সীমানায় নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর (Indian Army) টাইগার ডিভিশন। এই ডিভিশনের অপারেশনাল সামর্থ্য ও প্রস্তুতি মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে সম্প্রতি পরিদর্শনে যান রাইজিং স্টার কর্পসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (GOC)। তিনি পুরো টিমের যুদ্ধ-প্রস্তুতি, কৌশলগত মোতায়েন, আধুনিক যুদ্ধবিধি অনুসরণ, অস্ত্র ব্যবস্থাপনা এবং ট্যাকটিক্যাল প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।

Advertisements

পরিদর্শনের শেষে জিওসি ডিভিশনের জওয়ান ও অফিসারদের উচ্চমানের পেশাদারিত্ব, দায়িত্ববোধ এবং অবিচল শৃঙ্খলা-র জন্য বিশেষভাবে প্রশংসা করেন। তাঁর মন্তব্য অনুযায়ী, টাইগার ডিভিশন যেভাবে কঠিন পরিবেশেও অপারেশনাল প্রস্তুতি ধরে রেখেছে, তা দেশের নিরাপত্তার প্রতি তাদের অটুট প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

   

🔶 টাইগার ডিভিশনের ভূমিকাই বা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

ভারতীয় সেনার টাইগার ডিভিশন দেশের সীমান্তবর্তী সংবেদনশীল অঞ্চলগুলিতে কার্যরত অন্যতম এলিট ডিভিশন। তাদের দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • সীমান্তে ক্রমাগত নজরদারি

  • শত্রুপক্ষের গতিবিধির গোয়েন্দা বিশ্লেষণ

  • সন্ত্রাসবাদ-প্রতিরোধ প্রস্তুতি

  • সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা

  • হাই-অ্যাল্টিটিউড এলাকায় দ্রুত মোতায়েন

  • জরুরি পরিস্থিতিতে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা

এই ডিভিশনের সৈনিকরা কঠিন জলবায়ু, শূন্যের নিচে তাপমাত্রা, দুর্গম ভূখণ্ড এবং উচ্চ সামরিক চাপের মধ্যেও নিজেদের প্রস্তুত রাখেন। ফলে তাদের সামরিক সক্ষমতা ভারতের প্রতিরক্ষা-বলয়ের একটি শক্ত ভিত।

🔶 অপারেশনাল রিভিউতে কী কী দেখা হয়?

GOC সাধারণত পর্যালোচনা করেন—

  • ট্যাকটিক্যাল ফিটনেস ও ট্রেনিং

  • মোবিলাইজেশন স্পিড (সেনা কত দ্রুত মোতায়েন হতে পারে)

  • যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আধুনিক প্রযুক্তি

  • অস্ত্রশস্ত্রের কার্যক্ষমতা

  • বাস্তব যুদ্ধ-সিমুলেশন অনুশীলন

  • রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ও লজিস্টিক সাপোর্ট

এই মূল্যায়নের মাধ্যমে তিনি বুঝতে চেষ্টা করেন যে জরুরি পরিস্থিতিতে টাইগার ডিভিশন কতটা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে মাঠে নামতে পারবে।

যে সব রিপোর্ট সামনে এসেছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক। টাইগার ডিভিশন শুধু প্রস্তুতই নয়, বরং উচ্চমানের দক্ষতা প্রদর্শন করেছে—যা সাম্প্রতিক সামরিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

🔶 জিওসির প্রশংসা: শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বাস্তব মূল্যায়ন

রাইজিং স্টার কর্পসের জিওসি স্পষ্ট বলেন যে,

“টাইগার ডিভিশনের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ মান বজায় রেখেছে।”

তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে—

Advertisements
  • সৈনিকদের কঠোর পরিশ্রম

  • কঠিন পরিবেশেও শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি

  • রাত-দিন অবিচ্ছিন্ন নজরদারি

  • শত্রুর সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়ার সক্ষমতা

তিনি আরও বলেন, দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সেনারা যে “high operational readiness” বজায় রেখেছেন, তা যথেষ্ট প্রশংসনীয় এবং ভবিষ্যৎ সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকর।

🔶 ভারতীয় সেনাবাহিনীর বর্তমান নীতি: Anytime, Anywhere

ভারতীয় সেনাবাহিনী বিগত কয়েক বছর ধরে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা ও আধুনিকীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

  • অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা

  • প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি

  • ড্রোন, ISR সিস্টেম, নাইট ভিশন

  • রিয়েল-টাইম গোয়েন্দা ইনপুট

  • নতুন যুদ্ধবিধি

টাইগার ডিভিশন সেই আধুনিকীকরণের প্রথম সারির অন্যতম ইউনিট। ফলে তাদের প্রস্তুতি পর্যালোচনা দেশের সমগ্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মান নির্ধারণে সাহায্য করে।

🔶 স্থানীয় জনসাধারণের নিরাপত্তাতেও তাদের ভূমিকা

সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে নিরাপত্তা বজায় রাখা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করাও টাইগার ডিভিশনের কাজের অংশ। সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের পাশাপাশি মানবিক সহায়তা প্রদান, উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তারা বিশেষ ভূমিকা রাখে।

এ কারণে ডিভিশনটি শুধু সামরিক নয়—সামাজিকভাবে‌ও এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ।

🔶 সামগ্রিক মূল্যায়ন

টাইগার ডিভিশন পুনরায় প্রমাণ করলো যে ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ প্রস্তুত ও সর্বদা সতর্ক। রাইজিং স্টার কর্পসের জিওসি যে প্রশংসা করেছেন, তা সম্পূর্ণ প্রাপ্য।

এই পর্যালোচনা স্পষ্ট দেখিয়ে দিল—

  • সীমান্তের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হাতে

  • সেনার আধুনিকীকরণ সঠিক পথে

  • ভারতীয় সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার জন্য সদা প্রস্তুত

টাইগার ডিভিশনের প্রস্তুতি ভারতের সামরিক শক্তির মেরুদণ্ডকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।