থালাকে টপকে সাঙ্গাকারাকে ছুঁয়ে অনন্য রেকর্ড পন্থের

লিডসে চলছে ভারত বনাম ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্ট ম্যাচ আর তাতেই ঋষভ পন্থ (Rishabh-Pant) গড়লেন এক ঐতিহাসিক কীর্তি । শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, তিনি প্রাক্তন ভারতীয়…

Rishabh-Pant supresses dhoni record

লিডসে চলছে ভারত বনাম ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্ট ম্যাচ আর তাতেই ঋষভ পন্থ (Rishabh-Pant) গড়লেন এক ঐতিহাসিক কীর্তি । শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, তিনি প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ছাড়িয়ে ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটারদের মধ্যে সর্বাধিক টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। পান্ত তাঁর ১৭৮ বলে ১৩৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ১২টি চার এবং ছয়টি ছক্কার সাহায্যে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন।

তাঁর এই ইনিংসের (Rishabh-Pant) স্ট্রাইক রেট ছিল ৭৫-এর উপরে। এই সেঞ্চুরির মাধ্যমে পন্থের টেস্ট সেঞ্চুরির সংখ্যা দাঁড়ালো সাত, যা ধোনির ছয়টি সেঞ্চুরিকে ছাড়িয়ে গেছে। এই ইনিংসে তিনি শুধু ধোনিকেই নয়, এশিয়ার সবচেয়ে সফল উইকেটকিপার-ব্যাটার হিসেবেও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছেন।

   

পন্থের (Rishabh-Pant) এই সেঞ্চুরি তাঁর এশিয়ার বাইরে, বিশেষ করে ভারতের বাইরের (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া) দেশগুলোর কঠিন পিচে ব্যাটিংয়ের দক্ষতার আরেকটি প্রমাণ। এই সেঞ্চুরি তাঁর ভারতের বাইরে পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি, যা এশিয়ার যেকোনো ব্যাটারের মধ্যে সর্বাধিক। তাঁর এই পাঁচটি সেঞ্চুরির মধ্যে তিনটি এসেছে ইংল্যান্ডে এবং একটি করে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায়।

এছাড়াও, তিনি শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাক্কারার সঙ্গে (সাতটি সেঞ্চুরি) এশিয়ার মধ্যে নির্ধারিত উইকেটকিপার হিসেবে সর্বাধিক টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডে সমান হয়েছেন। পান্তের এই ইনিংস তাঁকে ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বাধিক টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডেও পৌঁছে দিয়েছে।

তিনি (Rishabh-Pant) প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে তিনটি করে সেঞ্চুরির রেকর্ডে সমান হয়েছেন। ইংল্যান্ডে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ড রাহুল দ্রাবিড়ের (ছয়টি), এরপর সচিন তেন্ডুলকর এবং দিলীপ ভেঙ্গসরকর (চারটি করে)। পন্থের এই সাফল্য তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং শৈলী এবং বিদেশের কঠিন পরিস্থিতিতে দলের জন্য রান করার ক্ষমতার প্রমাণ।

এই ম্যাচে পন্থ,(Rishabh-Pant) শুভমান গিল এবং যশস্বী জয়সওয়ালের সেঞ্চুরির সৌজন্যে ভারত এশিয়ার বাইরে এক ইনিংসে তিনজন ব্যাটারের সেঞ্চুরির চতুর্থ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগে এই কীর্তি ঘটেছিল ১৯৮৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে (সুনীল গাওস্কার, কৃষ্ণ শ্রীকান্ত, মোহিন্দর অমরনাথ), ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের লিডসে (রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দ্র সেহওয়াগ, সৌরভ গাঙ্গুলী) এবং ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্রস আইলেটে (সেহওয়াগ, দ্রাবিড়, মোহাম্মদ কাইফ)। এই ঘটনা ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের গভীরতা এবং তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনার প্রতিফলন।

পন্থের (Rishabh-Pant) এই সেঞ্চুরি তাঁর তৃতীয়বার ছক্কা মেরে টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করার ঘটনা, এবং তিনটিই এসেছে ইংলিশ স্পিনারদের (আদিল রশিদ, জো রুট এবং শোয়েব বশির) বিরুদ্ধে। ভারতীয়দের মধ্যে শুধুমাত্র সচিন তেন্ডুলকর (ছয়বার) এই কীর্তি বেশি বার করেছেন, যেখানে রোহিত শর্মার ও এই কীর্তি আছে মাত্র তিনবার। পন্থের এই আগ্রাসী শৈলী তাঁকে টেস্ট ক্রিকেটে এক অনন্য ব্যাটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এর আগে শুক্রবার, পান্ত তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩০০০ রান পূর্ণ করেন, এবং ধোনির পর দ্বিতীয় ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন। তিনি সেনা দেশগুলোতে এশিয়ার সবচেয়ে সফল উইকেটকিপার-ব্যাটার হিসেবে ধোনিকে ছাড়িয়ে গেছেন, রান সংখ্যার দিক থেকে। পান্তের এই কৃতিত্ব তাঁর ধারাবাহিকতা এবং বিদেশের কঠিন পিচে অবদান রাখার ক্ষমতার প্রমাণ।

Advertisements

ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশন শেষে ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে ৪৫৪/৭ স্কোরে পৌঁছায়। অধিনায়ক শুভমান গিল ২২৭ বলে ১৯টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ১৪৭ রান করেন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য ইনিংস। যশস্বী জয়সওয়াল ১৫৯ বলে ১৬টি চারের সাহায্যে ১০১ রান করে দলকে শক্ত ভিত্তি দেন। তবে, আট বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা করুণ নায়ার শূন্য রানে আউট হন, এবং শার্দূল ঠাকুরও ব্যর্থ হন। রবীন্দ্র জাদেজা ২ রানে অপরাজিত থাকেন।

সুইস ব্যাংক রিপোর্ট নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর, বলছে অর্থ মন্ত্রক

ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস বোলিংয়ে দলের নেতৃত্ব দেন, ৪/৬৬ রান দিয়ে চারটি উইকেট নিয়ে ভারতের ব্যাটিংয়ে চাপ সৃষ্টি করেন। তাঁর বোলিং এই সেশনে ইংল্যান্ডকে কিছুটা স্বস্তি দেয়। তবে, পান্ত, গিল এবং জয়সওয়ালের সেঞ্চুরির কারণে ভারত ম্যাচে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
পান্তের এই পারফরম্যান্স তাঁর ক্যারিয়ারের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

২০২২ সালে একটি মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনার পর তিনি দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন, কিন্তু তাঁর ফিরে আসা টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের জন্য একটি বড় সম্পদ হয়ে উঠেছে। তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং শৈলী এবং চাপের মুহূর্তে রান করার ক্ষমতা তাঁকে আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার-ব্যাটারে পরিণত করেছে।

এই ম্যাচে ভারতের তরুণ ব্যাটিং লাইনআপের প্রদর্শন ভবিষ্যতের জন্য আশা জাগায়। গিল এবং জয়সওয়ালের সেঞ্চুরি তাদের অধিনায়ক এবং ওপেনার হিসেবে ক্ষমতা প্রমাণ করে। পান্তের নেতৃত্বে মিডল অর্ডারের এই শক্তি ভারতকে টেস্ট ক্রিকেটে শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

এই টেস্ট সিরিজ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (ডব্লিউটিসি) অংশ। পন্থের এই ফর্ম অব্যাহত থাকলে তিনি ভারতের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁর এই কৃতিত্ব ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে এবং টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে।