নতুন বছর শুরু হতে না হতেই ভারতের অর্থনৈতিক পরিসরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (RBI)। আজ, ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন একটি নিয়ম, যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে (RBI) থাকা লক্ষাধিক নিষ্ক্রিয় এবং জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট (RBI) বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে (RBI) যে সকল লেনদেন নেই এবং দীর্ঘদিন ধরে নিস্ক্রিয় হয়ে রয়েছে, সেগুলির মাধ্যমে প্রতারণার ঘটনা রোধ করা।
নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে আরবিআই (RBI)-এর পদক্ষেপ
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুটি বা তার বেশি বছর ধরে যে সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোনও লেনদেন হয় না, সেগুলি নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট (RBI) হিসেবে গণ্য হবে। এই নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে বহু প্রতারণামূলক কাজ করা হচ্ছে, যার ফলে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সেই কারণেই, এখন থেকে এই ধরনের অ্যাকাউন্টগুলিকে (RBI) বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলি এসব অ্যাকাউন্টের (RBI) মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং তাদেরকে অ্যাকাউন্টটি (RBI) পুনরায় সক্রিয় করার জন্য অনুরোধ করবে। তবে, যদি গ্রাহকরা কোন কারণে সেই অ্যাকাউন্টটি (RBI) সক্রিয় না করেন, তবে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
কোন কোন অ্যাকাউন্ট (RBI) বন্ধ হবে?
১. নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট: যে সমস্ত অ্যাকাউন্ট (RBI) এক বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। আরবিআই-এর (RBI) নির্দেশ অনুযায়ী, এ ধরনের অ্যাকাউন্টগুলোতে গ্রাহকদের লেনদেন না থাকার কারণে তা বন্ধ হবে। ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের যোগাযোগ করে ওই অ্যাকাউন্টে লেনদেন শুরু করতে বলবে। যদি গ্রাহকরা পুনরায় অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় করতে চান, তবে তারা ব্যাংকেও গিয়ে এটি করতে পারবেন।
জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট: এমন অ্যাকাউন্ট যেগুলির কোনও টাকা নেই, অর্থাৎ জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট, সেগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হবে। ব্যাংকগুলি গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দেবে, এর মধ্যে যদি অ্যাকাউন্টে কোনও লেনদেন না হয় বা পরিমাণ না বৃদ্ধি পায়, তবে সেই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
কেওয়াইসি আপডেট না করা অ্যাকাউন্ট: কেওয়াইসি (Know Your Customer) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে গ্রাহকের পরিচয় যাচাই করা হয়। যদি কোনও গ্রাহক তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কেওয়াইসি আপডেট না করেন, তবে সেই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করা হবে। তবে, যদি গ্রাহক কেওয়াইসি আপডেট করে, তাহলে সেই অ্যাকাউন্টটি আবার চালু করা হবে। কিন্তু যদি কেওয়াইসি আপডেট করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থাকে বা ভুল তথ্য জমা দেওয়া হয়, তবে ব্যাঙ্ক সেই অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে।
এই উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিষ্ক্রিয়তা এবং প্রতারণা রোধ করা। অনেক সময় দেখা যায়, নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলি হ্যাক হয়ে যায় এবং তার মাধ্যমে প্রতারকরা গ্রাহকদের টাকা তুলে নেয়। এছাড়াও, কিছু অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেআইনি কাজ বা টাকার লেনদেনও হয়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আরবিআই ওই সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে এমন ধরনের অসুবিধা থেকে জনগণ নিরাপদ থাকতে পারে।
যারা এই নিয়মের আওতায় পড়ছেন, তাদের জন্য কিছু পরামর্শ রয়েছে। প্রথমত, গ্রাহকদের উচিত নিয়মিত তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন করা, যাতে অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে না যায়। যদি কোনও অ্যাকাউন্টে দীর্ঘদিন কোনও লেনদেন না হয়, তবে সেটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন, তারা তাদের অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা জমা দিতে পারেন, যাতে সেই অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় না হয়ে যায়। তৃতীয়ত, কেওয়াইসি আপডেটের জন্য যারা অগোচরে আছেন, তাদের উচিত দ্রুত কেওয়াইসি আপডেট করা, যাতে ভবিষ্যতে তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে না যায়।