উত্তরপ্রদেশ ২৯ সেপ্টেম্বর: কয়েকদিন আগে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বারেলিতে এক ভয়াবহ সহিংস ঘটনার সূত্রপাত হয়। কানপুরে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ নামক ধর্মীয় বার্তার পোস্টারকে ঘিরে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের পর বারেলির ইসলামিয়া ময়দানে বিশাল জমায়েত ঘটে। নামাজ শেষে শত শত মানুষ হাতে ধর্মীয় ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন, যা দ্রুত হিংসাত্মক রূপ নেয়।
প্রশাসনের বক্তব্য অনুযায়ী, এদিন বিকেলে ইসলামিয়া মাঠ সংলগ্ন এলাকায় বহু মানুষ একত্রিত হন। তারা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে রাস্তায় জমায়েত করেন ও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর পরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ দাবি করেছে, বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল ছোড়ে, গাড়ি ভাঙচুর করে এবং এমনকি গুলিও চালায়। এই ঘটনায় অন্তত ১০ জন পুলিশকর্মী আহত হন।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এর ফলে এক প্রকার হুড়োহুড়ি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক বিক্ষোভকারী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে।
পুলিশের জারি করা বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর পরিমাণে ইট, পাথর, জুতো-স্যান্ডেল, ভাঙা ব্যারিকেডের অংশ, ব্লেড, খালি ও জীবন্ত কার্তুজ, একটি ১২-বোর পিস্তল, অবৈধ ছুরি, লাঠি এবং পেট্রোলের গন্ধযুক্ত ভাঙা কাচের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও দুটি গাড়িকে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে এই বিক্ষোভ যে পূর্ব পরিকল্পিত এবং সহিংসতার উদ্দেশ্যেই সংগঠিত হয়েছিল, সেই সন্দেহও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এই ঘটনার পরপরই বারেলি জেলায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং জরুরি প্রয়োজনে ছাড়া বাজার ও দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। শহরের সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানানো হয়েছে, কোনো ধরনের গুজবে কান না দিতে এবং আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে।
ঘটনার নেপথ্যে থাকা কারণগুলো ঘিরে এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। একপক্ষ বলছে, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা ব্যানার ছিল এক নিরীহ ধর্মীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে, প্রশাসনের মতে, এটি ছিল একরকম প্ররোচনামূলক কাজ, যা আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাতে পারে। কানপুরে এই ব্যানার ঘিরে উত্তেজনা ছড়ানোর পর বারেলিতেও সেই উত্তেজনার ছায়া পড়ে।
রাজনৈতিক মহল থেকেও এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া আসছে। কেউ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, কেউ বা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। প্রশ্ন উঠছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জননিরাপত্তার ভারসাম্য কতটা রক্ষা করা হচ্ছে?