শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট (supreme-court) মহারাষ্ট্রের কোলহাপুর জেলার বিশালগড় ফোর্টে অবস্থিত একটি দরগায় ঈদ-উল-আজহা এবং উরস উপলক্ষে পশুবলির অনুমতি দেওয়া বোম্বে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি আবেদনের জরুরি শুনানি প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিশালগড় ফোর্ট একটি সংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্মারক হওয়ায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই এলাকায় পশু ও পাখি জবাই নিষিদ্ধ করেছিল। তবে, বোম্বে হাইকোর্ট (supreme-court) গত ৩ জুন তারিখে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে পশুবলির অনুমতি দেয়, যা এখন সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এই আবেদনটি জরুরি শুনানির জন্য বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চের সামনে উপস্থাপিত হয়।
আবেদনকারীর আইনজীবী যুক্তি দেন যে, বিশালগড় ফোর্ট একটি সংরক্ষিত স্মারক এবং এখানে পশুবলি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে গত বছর এই ধরনের পশুবলি শুধুমাত্র বন্ধ জায়গায় অনুমোদিত হয়েছিল, কিন্তু এ বছর বোম্বে হাইকোর্টের (supreme-court) আদেশে এই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ঈদ-উল-আজহা ৭ জুন এবং উরস ৮ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত পালিত হবে, তাই এই বিষয়ে জরুরি শুনানির প্রয়োজন।
তবে, বিচারপতি কারোল বলেন, “এই বিষয়ে জরুরি শুনানির কী প্রয়োজন? এই আবেদন এমনিতেই অকার্যকর হয়ে যাবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ত্রিপুরায় তিনি পশুবলি নিষিদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পরে এই আদেশ সংশোধন করে বলেছিল যে পশুবলি বন্ধ জায়গায় করা যেতে পারে।
বোম্বে হাইকোর্টের (supreme-court) ৩ জুনের আদেশে বিচারপতি নীলা গোখলে এবং ফিরদোশ পুনিওয়ালার নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ হাজরত পীর মালিক রেহান মিরা সাহেব দরগা ট্রাস্টের একটি আবেদনের শুনানি করে। এই আবেদনে ফোর্টের এলাকায় পশুবলি নিষিদ্ধ করার জন্য আর্টিওলজি এবং মিউজিয়ামসের ডেপুটি ডিরেক্টরের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়।
ট্রাস্ট জানায়, দরগায় পশুবলি একটি প্রাচীন ঐতিহ্য এবং এটি সর্বজনীন স্থানে নয়, বরং ফোর্ট থেকে প্রায় ১.৪ কিলোমিটার দূরে একটি ব্যক্তিগত জমিতে বন্ধ জায়গায় সম্পন্ন হয়। হাইকোর্ট গত বছরের ১৪ জুনের একটি আদেশের উল্লেখ করে বলে যে, পূর্ববর্তী বেঞ্চ এই ধরনের পশুবলির অনুমতি দিয়েছিল, তবে শর্ত ছিল যে এটি শুধুমাত্র বন্ধ এবং ব্যক্তিগত জায়গায় করা যাবে। এই বছরও একই শর্তে পশুবলির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা শুধুমাত্র ট্রাস্ট নয়, দরগায় আগত ভক্তদের জন্যও প্রযোজ্য।
বিশালগড় ফোর্টে অবস্থিত হাজরত পীর মালিক রেহান মিরা সাহেব দরগা একটি ঐতিহাসিক স্থান, যা ১১শ শতাব্দীতে নির্মিত। এই দরগা হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শ্রদ্ধার স্থান। ট্রাস্টের দাবি, এখানে পশুবলি একটি অবিচ্ছেদ্য রীতি এবং এই বলিদানের মাধ্যমে প্রাপ্ত খাবার দরগায় আগত তীর্থযাত্রী এবং আশেপাশের গ্রামের দরিদ্র মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
তবে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মহারাষ্ট্র প্রাচীন স্মৃতিসৌধ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং অবশেষ নিয়ম, ১৯৬২ এবং ১৯৯৮ সালের একটি হাইকোর্টের আদেশের উল্লেখ করে বলে যে, সর্বজনীন স্থানে দেবতার নামে পশুবলি নিষিদ্ধ।
এই বিষয়ে বোম্বে হাইকোর্টে (supreme-court) দায়ের করা আবেদনে ট্রাস্ট অভিযোগ করে যে, পশুবলি নিষিদ্ধ করার নির্দেশটি কিছু ডানপন্থী সংগঠন এবং হিন্দু মৌলবাদী গোষ্ঠীর চাপে জারি করা হয়েছে। তারা দাবি করে, এই নিষেধাজ্ঞার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে এবং এটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়কে খুশি করার জন্য করা হয়েছে। তবে, হাইকোর্ট এই অভিযোগকে ‘সাম্প্রদায়িক রঙ’ দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করে এবং বলে যে, এই ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে আবেদন খারিজ করা যেতে পারে।
আজ Realme C73 5G-এর প্রথম সেল, 6000mAh ব্যাটারির ফোন কিনুন মাত্র 9,999 টাকায়
এদিকে, কোলহাপুরে কিছু ডানপন্থী সংগঠন, যেমন হিন্দু একতা আন্দোলন, বিশালগড় ফোর্টে উরস উৎসব এবং পশুবলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানিয়েছে। তারা বোম্বে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে (supreme-court) আপিল করার জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ফোর্টের আশেপাশে অবৈধ দখল এবং দরগার সম্প্রসারণ রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়াই করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের (supreme-court) এই সিদ্ধান্ত এবং বোম্বে হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে স্থানীয় এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তকে ধর্মীয় স্বাধীনতার জয় হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থানের নিয়ম লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করছেন। এই বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানির জন্য বোম্বে হাইকোর্টে পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১১ জুলাই, ২০২৪।
ততক্ষণ পর্যন্ত, পশুবলি বন্ধ এবং ব্যক্তিগত জায়গায় নিয়ন্ত্রিতভাবে সম্পন্ন করার শর্তে অনুমোদিত থাকবে। এই ঘটনা ভারতের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে ঐতিহাসিক স্মারক সংরক্ষণের মধ্যে একটি জটিল ভারসাম্যের প্রশ্ন তুলেছে। সামনের দিনগুলোতে এই বিষয়ে আরও আলোচনা এবং আইনি পদক্ষেপ প্রত্যাশিত।