পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে জগন্নাথ (jagannath) মন্দিরের উদ্বোধনের পাশাপাশি বিজেপির উদ্যোগে মহাসমারোহে সনাতনী যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে। এই যজ্ঞে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। এই দুই ঘটনা একই দিনে ঘটায় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ‘আমরা-ওরা’র ধর্মীয় প্রতিযোগিতার আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে।
দিঘার জগন্নাথ মন্দির (jagannath)
অন্যদিকে দিঘার জগন্নাথ (jagannath) মন্দির যা পুরীর জগন্নাথ ধামের আদলে তৈরী করা হয়েছে তা এই অঞ্চলের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু। এই মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার পূজা এবং প্রাণ প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এবার অক্ষয় তৃতীয়ায় মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য বিশেষ পুজো, ভোগ বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং মন্দির কমিটির তত্ত্বাবধানে এই অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটেছে।
সনাতনী যজ্ঞ
অন্যদিকে, কাঁথির একটি পৃথক স্থানে বিজেপির উদ্যোগে সনাতনী যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই যজ্ঞে শুভেন্দু অধিকারী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন এবং তাঁর উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে আরও উল্লেখযোগ্য করে তুলেছে। যজ্ঞের উদ্দেশ্য হিসেবে সনাতন ধর্মের প্রচার, সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা এবং হিন্দু ঐক্যকে জোরদার করার কথা বলা হয়েছে।
যজ্ঞের জন্য বিশেষভাবে একটি বড় যজ্ঞবেদী নির্মাণ করা হয়েছে, এবং প্রাচীন বৈদিক রীতি মেনে পণ্ডিত ও ব্রাহ্মণরা হোমাগ্নি প্রজ্জ্বলন করেছেন। যজ্ঞে অংশ নিতে কাঁথি, দিঘা এবং আশপাশের এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব এই অনুষ্ঠানকে একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জাগরণের অংশ হিসেবে প্রচার করছে। শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “সনাতন ধর্ম আমাদের ঐতিহ্য ও পরিচয়ের মূল। এই যজ্ঞের মাধ্যমে আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করছি এবং সমাজে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছি।”
রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কে
তবে, এই দুই অনুষ্ঠান একই দিনে আয়োজিত হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে এক্স-এ, অনেকে এই যজ্ঞকে জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের ‘পাল্টা’ অনুষ্ঠান হিসেবে দেখছেন।
এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “যিনি নিজেকে হিন্দুদের রক্ষাকর্তা বলে দাবি করেন, তিনি জগন্নাথ (jagannath) মন্দিরের উদ্বোধনের দিন পাল্টা ধর্মীয় সভা করছেন। জগন্নাথ কি হিন্দুদের দেবতা নন?” এই ধরনের পোস্টগুলি রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের রাজনৈতিক ব্যবহার নিয়ে বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। যদিও দিঘা জগন্নাথ ধামে আমন্ত্রিত ছিলেন শুভেন্দু ও।
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন , বিজেপি ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়, “শুভেন্দু অধিকারী একদিকে জগন্নাথ (jagannath) মন্দিরের নকশা মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝাচ্ছিলেন, আর আজ তিনিই এর বিরোধিতা করছেন।
রাজনীতির জন্য ধর্মকেও জলাঞ্জলি দিতে পারেন তিনি।” এই অভিযোগের জবাবে বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, যজ্ঞের আয়োজন জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের বিরোধিতা নয়, বরং এটি সনাতন ধর্মের প্রচারের একটি স্বাধীন উদ্যোগ।
মুম্বাই ম্যাচ নিয়ে কী বললেন আত্মবিশ্বাসী আলবিনো?
কঠোর নিরাপত্তা
এই যজ্ঞের আয়োজন নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, এবং যজ্ঞস্থলের আশপাশে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। এছাড়া, যজ্ঞের সমাপ্তিতে একটি বিশাল ভোজের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য যজ্ঞের অংশ হিসেবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে।
নতুন বিতর্ক
জগন্নাথ (jagannath) মন্দিরের উদ্বোধন এবং সনাতনী যজ্ঞ—দুটি অনুষ্ঠানই কাঁথির ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে, এই দুই ঘটনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতি এই অঞ্চলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের রাজনৈতিক মাত্রা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ কেউ এই যজ্ঞকে সনাতন ধর্মের উৎসব হিসেবে দেখলেও, অনেকে এটিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছেন।
এই ঘটনা কাঁথির সামাজিক ও রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। যজ্ঞের মাধ্যমে বিজেপি তাদের হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অন্যদিকে, জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন স্থানীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। এই দুই ঘটনার মধ্যে ধর্ম ও রাজনীতির সংঘাত কাঁথির জনমানসে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।