ধর্মান্তরের বিষয়ে ফের বার্তা দিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) প্রধান মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat)। শনিবার গুজরাটের ভালসাড জেলার বারুমালে শ্রী ভাব ভবেশ্বর মহাদেব মন্দিরের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংঘ প্রধান বলেন, “লোভ, মোহ ও প্রলোভনের কারণে মানুষ ধর্ম থেকে সরে যেতে পারে, কিন্তু একমাত্র ধর্মই সবাইকে সুখের পথে এগিয়ে নিতে পারে।”
মোহন ভাগবতের কথায়, “কেউ যেন ভয় কিংবা লোভের বশবর্তী হয়ে ধর্ম পরিবর্তন না করে। আমাদের আত্মরক্ষার প্রাচীনকাল থেকেই নানা ব্যবস্থা রয়েছে, কারণ আজও কিছু শক্তি আছে যারা আমাদের ধর্মান্তরিত করতে চায়। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই রকম কোনো জোরজবরদস্তি না থাকলেও, প্রলোভনের ঘটনাগুলি ঘটে চলেছে।”
তিনি স্মরণ করান মহাভার“মহাভারতের সময় কেউ কাউকে ধর্মান্তরিত করছিল না। কিন্তু দুঃশাসনের লোভ, যা তাঁকে পাণ্ডবদের রাজ্য দখলে প্ররোচিত করেছিল,তের কথা। বলেন, সেটাই ছিল অধর্ম। আমরা যেন এই ধরণের লোভ বা মোহে পড়ে নিজের ধর্মচ্যুতি না ঘটাই। এ কারণেই এই ধরণের ধর্মীয় কেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “যখন এই কেন্দ্রগুলি ছিল না, তখন সন্ন্যাসীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধন-সত্সঙ্গের মাধ্যমে মানুষকে ধর্মপথে স্থির রাখতেন। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ধরণের সংগঠিত ধর্মকেন্দ্র গঠনের প্রয়োজন হয়েছিল, যেখানে সমাজের সমস্ত শ্রেণির মানুষ একত্রিত হয়ে পূজা, সাধনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারে।”
সংঘ প্রধান বলেন, “এই কেন্দ্রগুলি শুধুমাত্র পূজার জায়গা নয়, বরং সমাজের আত্মিক ও নৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্র। এখানে মানুষ ধর্ম পালন শেখে, আর্ট শেখে, সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি শুধু ব্যক্তির কল্যাণ নয়, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের পথ।”
তিনি বলেন, “যে সমস্ত সাধু-সন্তরা জঙ্গলে গিয়েও মানুষের জীবন গঠনে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তারা ধর্মান্তরের প্রচার করেন না। বরং মানুষ যেন নিজের ধর্মে স্থির থাকে, সেটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। ধর্মে স্থির থাকলে অনেক সমস্যা এমনিতেই দূর হয়ে যায়।”
মোহন ভাগবতের মতে, ভারতের আত্মা ধর্মে বাস করে। “ধর্মচর্চা যখন সমাজে প্রবাহিত হয়, তখন দেশও উন্নতির পথে এগিয়ে যায়। গোটা বিশ্ব তখন ভারতের দিকে তাকায়। সেই জন্যই আমাদের উচিত এই ধরণের ধর্মকেন্দ্রগুলিকে আরও শক্তিশালী করা।”
তিনি আরও বলেন, “ধর্মীয় উৎসব এবং নিত্য পূজা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অর্থনীতির জন্যও সহায়ক। যেমন মহাকুম্ভের সময় কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের কার্যক্রম হয়েছিল, যা বিশ্বকে দেখায় যে ধর্ম কেবল আস্থা নয়, অর্থনৈতিক শক্তিও।”
এছাড়াও তিনি বলেন, “লক্ষ লক্ষ মানুষ ত্রিবেণী সঙ্গমে কষ্ট সহ্য করেও স্নান করতে যান, কারণ এটিই ধর্মের প্রতি তাদের বিশ্বাস। ভারত ধর্মের দেশ। এখান থেকেই আধ্যাত্মিকতার সূচনা হয়। সেই কারণে আমাদের উচিত যথাযথ ধর্মাচরণ করে আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করা।”
শেষে মোহন ভাগবতের বার্তা ছিল স্পষ্ট — “ধর্মান্তরের চেয়ে নিজের ধর্মে স্থির থাকাই সঠিক পথ। লোভ, ভয় বা মোহের মধ্যে পড়ে নিজের শিকড় থেকে যেন আমরা সরে না যাই। সমাজের সার্বিক কল্যাণের জন্য ধর্মীয় কেন্দ্রগুলিকে আরও মজবুত করাই আজকের সময়ের চাহিদা।”