নয়াদিল্লি: লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রকাশ্যে এল প্রথম সন্দেহভাজনের ছবি। সোমবার রাতের সেই বিস্ফোরণের মুহূর্তের কিছু আগেই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, একজন ব্যক্তি হুন্ডাই i20 গাড়িটি চালাচ্ছেন, যার মুখ পরিস্কারভাবে ধরা পড়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি হলেন মোহাম্মদ উমর, রিদাবাদের আল ফালাহ মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত এক ডাক্তার, যিনি সন্দেহভাজন এক সন্ত্রাসী মডিউলের সদস্য।
উমর ও ফরিদাবাদ মডিউলের যোগ
সূত্রের খবর, উমর হলেন কাশ্মীরের অনন্তনাগের সরকারি মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার আদিল আহমদ রাথারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। রাথারকে গত সপ্তাহেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সোমবার ফরিদাবাদে অভিযান চালায় পুলিশ, আর তার কিছু ঘণ্টা পরেই ঘটে লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
তদন্তকারীদের দাবি, উমর ও তাঁর দুই সহযোগী মিলেই গাড়িতে ডেটোনেটর বসিয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটান। আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করে তারা এই হামলা চালায় বলে ধারণা। বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছিল Ammonium Nitrate Fuel Oil (ANFO), যা একটি উচ্চতীব্র বিস্ফোরক মিশ্রণ। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে ঘটে ওই বিস্ফোরণ, যখন এলাকাটি পর্যটক ও স্থানীয় মানুষে ভরপুর ছিল।
সিসিটিভি ফুটেজে মিলল স্পষ্ট প্রমাণ Red Fort Blast Suspect Identified
ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বিকেল ৩টা ১৯ মিনিটে গাড়িটি সুনেহরি মসজিদের কাছে পার্কিং লটে ঢোকে এবং সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে সেখান থেকে বেরোয়—বিস্ফোরণ ঘটে তার পরপরই। গাড়ির চালকের মুখ প্রথমে স্পষ্ট দেখা গেলেও পরে মুখোশ পরিহিত একজনকে গাড়ি চালাতে দেখা যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, গাড়িটি শেষবার দেখা গিয়েছিল বাদারপুর বর্ডার দিয়ে শহরে প্রবেশ করতে। এখন পর্যন্ত তদন্তকারীরা ১০০-রও বেশি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন, যাতে গাড়ির সম্পূর্ণ রুট ট্রেস করা যায়।
গাড়ির মালিকানা নিয়ে জটিলতা
ফরিদাবাদের সূত্র জানাচ্ছে, হুন্ডাই i20 গাড়িটি প্রথমে মোহাম্মদ সালমান নামে এক ব্যক্তির নামে ছিল, যিনি সোমবার রাতে গ্রেফতার হয়েছেন। পরে গাড়িটি একাধিকবার হাতবদল হয়, নাদিম, এরপর ফরিদাবাদের সেক্টর ৩৭-এর ‘রয়্যাল কার জোন’ নামের একটি ব্যবহৃত গাড়ির দোকানে। দোকানের মালিকদের খোঁজে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সব নম্বরই এখন বন্ধ।
তারিকের নামে রেজিস্ট্রেশন হয়
তারপর গাড়িটি বিক্রি হয় আমিরের কাছে, তারপর তারিকের নামে রেজিস্ট্রেশন হয়, যিনি ফরিদাবাদ সন্ত্রাস মডিউলেরও সদস্য বলে সন্দেহ। অবশেষে গাড়িটি কেনেন মোহাম্মদ উমর। বিস্ফোরণের আগেই তারিক ও আমির দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, ২,৯০০ কেজি আইইডি তৈরির উপাদানসহ ধৃত ডাক্তার মুজামিল শাকিলের গ্রেফতারের পর উমর ভয় পেয়ে যায় এবং তড়িঘড়ি এই হামলা চালায়, যা সম্ভবত এক আত্মঘাতী অভিযান ছিল।
গাড়িটি ২০ সেপ্টেম্বর ফরিদাবাদে বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য চালান করা হয়েছিল। এখনো পর্যন্ত তার রেজিস্ট্রেশন সালমানের নামেই রয়েছে।
বিস্ফোরকের বিশ্লেষণ ও ফরেনসিক তদন্ত
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরিদাবাদ ক্রাইম ব্রাঞ্চ ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কাছ থেকে বিস্ফোরক সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের উপস্থিতি মিলেছে। আজ ফরেনসিক রিপোর্টে বিস্ফোরকের ধরন ও উপাদান চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হবে।
৯ মৃত, বহু আহত — পরিচয় অজানা অনেকেরই
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নয়টি মৃতদেহের মধ্যে এখন পর্যন্ত দুইজনের পরিচয় মিলেছে। বাকিদের দেহ ও দেহাংশ ফরেনসিক ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
UAPA-র ধারায় মামলা, রাজধানীতে হাই অ্যালার্ট
পুলিশ ইতিমধ্যে Unlawful Activities (Prevention) Act (UAPA)-এর ধারা ১৬ ও ১৮, Explosive Substances Act-এর ধারা ৩ ও ৪, এবং খুন ও খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা দায়ের করেছে। গোটা রাজধানী জুড়ে জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট। শহরের সীমান্তে গাড়ি তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে, মেট্রো ও বিমানবন্দর এলাকায় মোতায়েন অতিরিক্ত বাহিনী।
সাক্ষীদের বয়ান অনুযায়ী, বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই প্রবল ছিল যে দুই কিলোমিটার দূরের আইটিও এলাকাতেও শোনা গিয়েছে। লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাঁচ ভেঙে গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পার্কিংয়ের একাধিক গাড়ি। মঙ্গলবার চাঁদনি চক মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
লালকেল্লার পাদদেশে এই রক্তাক্ত বিস্ফোরণ এখন গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে, আর তদন্তকারীরা খুঁজছেন, কে বা কারা এর নেপথ্যে ছিল এই আতঙ্কের খেলা।


