নয়াদিল্লি: দিল্লি এবং জম্মু–কাশ্মীরে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে তীব্র জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত। লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণের (Red Fort Blast) ঘটনা এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে—প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখা হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তদন্তকারীরা এটিকে ক্রমশ সন্ত্রাসযোগ সন্দেহে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত কোনো সরকারি বিবৃতি প্রকাশ্যে আসেনি, তবে তদন্তে যুক্ত শীর্ষস্তরের কর্মকর্তাদের ভাষায়—“সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার পর থেকেই বিশেষ টিম গঠন করে দিল্লি পুলিশ, স্পেশাল সেল, এনআইএ এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে কাজ করছে। লালকেল্লা ভারতের অন্যতম প্রতীকী ঐতিহাসিক স্থাপনা, রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী—সব গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান এখানেই হয়। তার সামনে বিস্ফোরণ ঘটায় তদন্তকারীরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
মঙ্গলবার রাতভর দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলেছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ধারাবাহিকভাবে। দিল্লির পাশাপাশি ফারিদাবাদ, নয়ডা, গাজিয়াবাদ এবং এনসিআর অঞ্চলে বিশেষ নজরদারি বজায় রাখা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়ানো হয়েছে সিকিউরিটি চেকিং।
জম্মু–কাশ্মীরেও তদন্ত চলছে জোরেশোরে। কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে পুলিশ জানতে চাইছে, বিশেষত গত কয়েক মাসে দিল্লি–ফারিদাবাদ–কাশ্মীর সংযোগ নিয়ে। উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, এই সংযোগটিকেই সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার গুরুতর দিক হলো—এর কয়েক দিন আগে ফারিদাবাদ থেকে ৭ জন জইশ-ই-মহম্মদের সন্দেহভাজন অপারেটিভকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক তৈরির উপাদান এবং ২০টি টাইমার। এই ঘটনাগুলি পরপর ঘটায় তদন্তকারী সংস্থাগুলি এখন দৃশ্যত আরও সতর্ক।
তদন্তকারীদের মতে, বিস্ফোরণের প্রকৃতি এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। গাড়িটি কীভাবে বিস্ফোরিত হলো, তা ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা সম্ভব। বিস্ফোরণ যে ছিল, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই—তবে তা কতটা তীব্র ছিল, উদ্দেশ্য কী ছিল, এবং পরিকল্পনা ছিল কি না—সব বিষয়ই তদন্তাধীন।
দিল্লি পুলিশ ইতিমধ্যেই একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। এলাকায় পাওয়া ছোট ছোট ধাতব অংশ, পোড়া অবশিষ্ট, রাসায়নিকের চিহ্ন—সবই ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। বিশেষ করে বিস্ফোরণের ধরন বিশ্লেষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা, যাতে জানা যায়—এটি দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত বিস্ফোরণ।
এদিকে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দিল্লির মতো নিরাপত্তা ঘন এলাকায় এমন ঘটনা ঘটায় ভবিষ্যতে নিরাপত্তা আরও কঠোর হতে পারে। লালকেল্লা এলাকার দোকানদাররা জানান, বিস্ফোরণের পর রাতেই পুলিশ এসে দোকানদারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কোনো ভুল তথ্য যাতে প্রচারিত না হয়, সেজন্য সরকারি বিবৃতিও অপেক্ষায় রাখা হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “দেশের রাজধানীতে বিস্ফোরণ—এটা আকস্মিক বলার মতো নয়। এটা অত্যন্ত সংবেদনশীল ঘটনা।”
সূত্রের দাবি, তদন্তকারীরা এখন কয়েকটি সম্ভাব্য দিক খতিয়ে দেখছেন—
• বিস্ফোরণটি ছিল কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?
• কারা জড়িত থাকতে পারে?
• সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী গ্রেফতারদের সঙ্গে কোনো যোগ আছে কি?
• গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের ইতিহাসে কোনও অস্বাভাবিকতা আছে কি?
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কোনো দিক বাদ দিচ্ছি না। প্রতিটি তথ্য যাচাই, প্রতিটি ক্লু মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।”
সরকারি ঘোষণা আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে, কারণ এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য ভুল বিশ্লেষণও তদন্তকে ভুল পথে নিতে পারে।
এখন নজর একটাই—তদন্ত শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। দেশজুড়ে মানুষের কৌতূহল বাড়ছে, আর প্রশাসন চাইছে নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া কিছুই প্রকাশ না করতে। চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য এখন অপেক্ষাই একমাত্র পথ।


