নয়াদিল্লি: লালকেল্লার কাছে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণ (Red Fort blast) কাণ্ডে তদন্তে বড়সড় মোড়। ঘটনার মূল সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসা ড. উমর উন্ নবী (ওরফে উমর মোহাম্মদ)-এর সঙ্গে যোগসূত্র থাকা একটি লাল ফোর্ড ইকোস্পোর্ট গাড়ি হরিয়ানা ফরিদাবাদের খান্ডাওয়ালি গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গাড়িটির নম্বর DL 10 CK 0458। এটি উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই তদন্তে সম্ভাব্য বৃহত্তর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত মিলছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর।
দিল্লি পুলিশ, NIA, হরিয়ানা পুলিশ, ইউপি ATS এবং জম্মু–কাশ্মীরের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এক বিপুল তল্লাশি অভিযানে এই গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। সূত্রের দাবি, সন্দেহভাজন উমরের পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়ির বাইরে গাড়িটি পার্ক করে রাখা ছিল। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে— গাড়িটি একটি ভুয়ো ঠিকানা ব্যবহার করে কেনা হয়েছিল, যা তদন্তকারীদের চোখে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
যে লোকেশন থেকে গাড়িটি উদ্ধার হয়েছে, সেটি আল–ফালাহ ইউনিভার্সিটি থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে, যেখানে আগেই তল্লাশি চালিয়ে একাধিক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক ও ধর্মীয় উপদেশকও রয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে জইশ-ই-মহম্মদ এবং আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দ নামক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগাযোগ থাকার সম্ভাব্য প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গাড়িটি উদ্ধারের পর মুহূর্তেই সেটিকে নিরাপত্তা বাহিনী সিল করে ঘিরে ফেলে। বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণ স্কোয়াড, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, বোমা ডিটেকশন দল এবং ডগ স্কোয়াড ঘটনাস্থলে পৌঁছে পূর্ণাঙ্গ স্ক্যান শুরু করে। তদন্তকারীরা গাড়িটির ভিতরে বিস্ফোরকের অবশিষ্টাংশ (explosive residue), ডিজিটাল ডিভাইস, সন্দেহজনক নথি, ম্যাপিং, যোগাযোগ সূত্র, ডেটা ডাম্পের মতো প্রমাণের খোঁজ করছে। গাড়িটির ইঞ্জিন, ড্যাশবোর্ড, স্টেপনি কেস, সিট কভার পর্যন্ত খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লার নিকটবর্তী ব্যস্ত রাস্তার সিগন্যালে একটি ধীরগতির গাড়ির ভেতর উচ্চক্ষমতার বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে এখন পর্যন্ত ১২ জন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে আশপাশের একাধিক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজধানী জুড়ে। গোয়েন্দাদের অনুমান, এটি কেবল একক ঘটনা নয়, বরং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, লজিস্টিক সাপোর্ট, রুট ম্যাপিং ও এস্কেপ মডিউলসহ চালানো এক সংগঠিত হামলা।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়ি ছাড়াও একটি Hyundai i20 গাড়ি-র অস্তিত্ব মিলেছে, যা থেকে গোয়েন্দাদের ধারণা হামলা চালানোর জন্য ছিল একটি গাড়ি, পালানোর বা ব্যাকআপ লজিস্টিকের জন্য ছিল আরেকটি এবং পুরো অভিযান পরিচালিত হয়েছে একটি মাল্টি-লেয়ার টেরর মডিউলের মাধ্যমে।
NIA–এর এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, “এটি শুধু এক জায়গার কেস নয়, এটি বহু রাজ্যজুড়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্কের তদন্ত। ফোন কল রেকর্ড, ব্যাঙ্কিং লেনদেন, IP ডেটা, ডিভাইস ফরেনসিক এবং সিসিটিভি ফুটেজ মিলিয়ে পুরো চিত্র বোঝার চেষ্টা চলছে।”
সন্দেহভাজন উমর উন্ নবী পেশায় চিকিৎসক ও মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তদন্তকারীদের মতে, শিক্ষিত ও সমাজে সম্মানীয় পেশার আড়াল ব্যবহার করেই নেটওয়ার্ক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে কি না, সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনার পর দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবে হাই এলার্ট জারি করা হয়েছে। রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, মেট্রো, জনবহুল বাজার, সীমান্ত চেকপোস্টে নজরদারি আরও কঠোর করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক সন্দেহভাজন লোকেশনে একযোগে ‘সার্ভেইলেন্স ও রেইড অপারেশন’ চালানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ‘প্রচলিত বন্দুক-বোমা মডিউল’-এর বাইরে গিয়ে শিক্ষিত ও প্রযুক্তি-দক্ষ লোকজনকে নিয়োগ করে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করছে, যা নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


