ট্রাম্প ট্যারিফে ক্ষতিগ্রস্থ সেক্টরদের পাশে দাঁড়াল RBI

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (Trump) গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্রা জানিয়েছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক নীতি কার্যকর হলে, আরবিআই অতীতের মতোই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলিকে আর্থিক…

Trump

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (Trump) গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্রা জানিয়েছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক নীতি কার্যকর হলে, আরবিআই অতীতের মতোই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে সংকটকালীন সময়ে সহায়তা করবে। মুম্বইয়ে ফিকি এবং ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) আয়োজিত ফিবাক ব্যাঙ্কিং সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মলহোত্রা উল্লেখ করেন যে, কোভিড মহামারীর সময় আরবিআই ঋণের উপর স্থগিতাদেশ এবং এমএসএমই-দের জন্য ঋণের সহজলভ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিকে সমর্থন করেছিল। তিনি বলেন, “৫০% শুল্ক এখনও কার্যকর হয়নি। আলোচনা চলছে এবং আমরা আশা করছি এর প্রভাব ন্যূনতম হবে।”

   

মালহোত্রা জানান, ভারত থেকে রফতানি হওয়া পণ্যের ৪৫% শুল্কমুক্ত এবং বাকি ৫৫%-এর মধ্যে কিছু খাত যেমন রত্ন ও গহনা, টেক্সটাইল, অটো পার্টস, চিংড়ি এবং এমএসএমই-র উপর সম্ভাব্য প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বলেন, “সরকার এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আমরা আরবিআই-এর পক্ষ থেকে রেপো রেট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে অর্থনীতিতে পর্যাপ্ত তারল্য সরবরাহ করেছি। যদি কোনো খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি রাখব না।”

এই সম্মেলনে মালহোত্রা ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধি এবং মূল্য স্থিতিশীলতার উপর জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের মুদ্রানীতি মূল্য স্থিতিশীলতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে সমর্থন করার লক্ষ্যে কাজ করে। ভারতের মৌলিক অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী রয়েছে, এবং আমরা আশা করছি আলোচনার মাধ্যমে শুল্কের প্রভাব কমানো সম্ভব হবে।”

তিনি আরও জানান, আরবিআই ইতিমধ্যে ১০০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমিয়েছে এবং অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। এপ্রিল ২০২৫-এ ট্রাম্প ঘোষিত ‘পারস্পরিক’ শুল্কের মধ্যে ভারতের পণ্যের উপর ২৬% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এই শুল্ক ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে, যা ভারতীয় রফতানিকারকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে রত্ন ও গহনা, টেক্সটাইল এবং অটো পার্টসের মতো খাতগুলি এই শুল্কের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মালহোত্রা জানিয়েছেন, এই শুল্কের প্রভাব এখনও পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি, এবং আলোচনার মাধ্যমে এর প্রভাব কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

আরবিআই গভর্নর আরও বলেন, ভারত সরকার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় শুল্কের প্রভাবকে কিছুটা কমিয়ে আনতে পারে। তবে, তিনি স্বীকার করেন যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং শুল্ক সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলি অর্থনীতির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

মলহোত্রা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের উপরও জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী গ্রামীণ এলাকায় বাস করে।

Advertisements

আমরা প্রায় সব গ্রামে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছি, তবে এটিকে আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে।” তিনি ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট (বিসি) নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন, যাতে দুর্গম এলাকায় আর্থিক পরিষেবার গুণমান এবং প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পায়।

প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মলহোত্রা বলেন, ব্যাঙ্কিং খাতে প্রযুক্তি এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং গ্রাহক পরিষেবার মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “আরবিআই তার সমস্ত কার্যক্রমে প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে।

অ্যাকাউন্ট অ্যাগ্রিগেটর (এএ) ইকোসিস্টেম গ্রাহকদের তাদের আর্থিক তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ দিচ্ছে, এবং ইউনিফাইড লেন্ডিং ইন্টারফেস (ইউএলআই) ঋণ প্রদানকে আরও সহজ করছে।” তিনি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলিকে প্রযুক্তি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং মেশিন লার্নিং (এমএল)-এ বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।

মলহোত্রা জোর দিয়ে বলেন, নিয়ন্ত্রক এবং নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলির লক্ষ্য একই। তিনি বলেন, “আমরা একই দলে রয়েছি, এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ও মূল্য স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য বাধা নয়, বরং টেকসই বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।” তিনি শিল্পকে সাহসী বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করেন এবং বলেন, ব্যাঙ্ক এবং কর্পোরেটদের ব্যালান্স শীট এখন শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে, যা বিনিয়োগ চক্র শুরু করার জন্য উপযুক্ত সময়।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বৈশ্বিক বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। ভারতের রফতানি খাত, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই), এই শুল্কের কারণে চাপের মুখে পড়তে পারে।

বিমান বসুকে নওশাদের কড়া বার্তা, বাম শিবিরে চাপা গুঞ্জন

তবে, আরবিআই-এর এই প্রতিশ্রুতি যে তারা প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে, মূর্তিকারদের মতো ঐতিহ্যবাহী পেশাজীবীদের জন্যও কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে।