পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রবিনা ট্যান্ডন মিসাইল ছোঁড়ে ভারতীয় সেনা!

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এখন সারা দেশে আলোচনার বিষয়। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে,…

Raveena Tandon Missile Message to Nawaz Sharif During Kargil War

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এখন সারা দেশে আলোচনার বিষয়। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে, যার ফলে ১০০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে খবর। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে, পাকিস্তান ও বলিউড অভিনেত্রী রবিনা ট্যান্ডনের (Raveena Tandon) সঙ্গে সম্পর্কিত একটি পুরনো ঘটনা আবার সামনে এসেছে। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা ভারতীয় সৈনিকদের মৃতদেহের বিনিময়ে রবিনা ট্যান্ডন ও মাধুরী দীক্ষিতকে পাঠানোর দাবি জানিয়েছিল।

দৈনিক ভাস্করকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রবিনা ট্যান্ডন জানিয়েছেন, কার্গিল যুদ্ধের সময় তাঁর নামে একটি মিসাইল পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছিল। এই ঘটনা ঘটেছিল যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধে শহিদ সৈনিকদের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার জন্য পাকিস্তানের কাছে অনুরোধ জানায়। জবাবে পাকিস্তানি পক্ষ থেকে বলা হয়, “রবিনা ট্যান্ডন এবং মাধুরী দীক্ষিতকে পাকিস্তানে পাঠান, তাহলে আমরা মৃতদেহ ফিরিয়ে দেব।” এই অশোভন দাবির জবাবে ভারতীয় বিমান বাহিনী কার্গিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের দিকে একটি মিসাইল নিক্ষেপ করে, যার উপর লেখা ছিল ‘রবিনা ট্যান্ডন পক্ষ থেকে নওয়াজ শরিফের জন্য’। এছাড়া, মিসাইলের উপর একটি তীর-বিদ্ধ হৃদয়ের চিহ্নও আঁকা ছিল।

   

রবিনার গর্বের মুহূর্ত
দৈনিক ভাস্করকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রবিনা এই ঘটনা সম্পর্কে বলেন, “আমি সেনাবাহিনীকে সমর্থন জানাতে কার্গিলে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার অনেক ভক্ত ছিলেন, তাই আমার নাম মিসাইলে লেখা হয়। এই ইতিহাসের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। শুনেছি, গুলমার্গ এবং লেহ-এর মিউজিয়ামে এর ছবি রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি যুদ্ধের পক্ষে নই। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তবে যতদূর সম্ভব এড়ানো উচিত। আমি বুঝি, সীমান্তে দুই পক্ষের মানুষই একই রকম ত্যাগ স্বীকার করে। তাদেরও পরিবার রয়েছে, আমাদের শিরায় যে রক্ত প্রবাহিত হয় তা লাল, যদিও আমাদের বিশ্বাস বা নাম ভিন্ন হতে পারে।”

কার্গিল যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংঘাত ছিল। পাকিস্তানি সেনা ও সমর্থিত জঙ্গিরা কার্গিলের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করেছিল, যার জবাবে ভারত ‘অপারেশন বিজয়’ শুরু করে। এই যুদ্ধে বহু ভারতীয় সৈনিক শহিদ হন। পাকিস্তানের এই অশোভন দাবি এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া সেই সময়ে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছিল। রবিনার নামে মিসাইল পাঠানোর ঘটনা ভারতের দৃঢ় অবস্থান এবং জাতীয় গর্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

বর্তমান উত্তেজনা ও অপারেশন সিঁদুর
বর্তমানে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে। পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে ভারতীয় বাহিনী লস্কর-ই-তৈয়বা, জৈশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি সংগঠনের ৯টি আস্তানা ধ্বংস করেছে এবং প্রায় ১০০ জন জঙ্গিকে নিহত করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। এই অভিযানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জঙ্গিদের পক্ষ নিয়ে হস্তক্ষেপ করলে ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানে। এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে।

রবিনার বক্তব্যে শান্তির বার্তা
রবিনা ট্যান্ডন তাঁর সাক্ষাৎকারে শান্তির পক্ষে বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ কখনো সমাধান নয়। সীমান্তের দুই পক্ষের সৈনিক এবং তাদের পরিবার একই ধরনের কষ্টের মধ্য দিয়ে যায়। তিনি জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি দৃঢ় অবস্থানের পক্ষে থাকলেও অপ্রয়োজনীয় সংঘাত এড়ানোর পরামর্শ দেন। তাঁর এই বক্তব্য ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় গর্বের সঙ্গে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি সমন্বয় প্রকাশ করে।

Advertisements

ইতিহাসের অংশ হিসেবে রবিনা
রবিনার নামে মিসাইল পাঠানোর ঘটনা কেবল একটি প্রতিক্রিয়াই নয়, বরং ভারতের সামরিক ইতিহাসের একটি অংশ। গুলমার্গ এবং লেহ-এর মিউজিয়ামে এই ঘটনার ছবি সংরক্ষিত আছে বলে জানা গেছে। এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর দৃঢ়তা এবং দেশবাসীর মনোবলের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। রবিনা নিজেও এই ঘটনায় গর্বিত, তবে তিনি যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি ও সংলাপের পক্ষে।

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বর্তমান প্রেক্ষাপট
অপারেশন সিঁদুর এবং সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তাকে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং পাঞ্জাবে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলো দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

কার্গিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের অশোভন দাবি এবং রবিনা ট্যান্ডনের নামে মিসাইল পাঠানোর ঘটনা ভারতের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত। এটি ভারতের সামরিক শক্তি এবং জাতীয় গর্বের প্রতীক। রবিনার শান্তির বার্তা এবং তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এই ঘটনাকে আরও গভীরতা দিয়েছে। বর্তমানে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনার মধ্যে এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শান্তি ও সংলাপই দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ।