রামসেতু ‘পুরান’ নাকি বিজ্ঞান কি বলছেন বিদ্দজনেরা

ramsetu: Mythology or Science? What Experts Say ভারতের তামিলনাড়ুর ধনুষ্কোড়ি এবং শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপের মধ্যে বিস্তৃত রামসেতু (ramsetu) বহু শতাব্দী ধরে আস্থা ও বিজ্ঞানের মিলনস্থল…

ramsetu science or mythology

ramsetu: Mythology or Science? What Experts Say

   

ভারতের তামিলনাড়ুর ধনুষ্কোড়ি এবং শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপের মধ্যে বিস্তৃত রামসেতু (ramsetu) বহু শতাব্দী ধরে আস্থা ও বিজ্ঞানের মিলনস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এটি ভগবান রামের নির্দেশে বানর সেনার দ্বারা নির্মিত একটি সেতু, যা তাঁর স্ত্রী সীতাকে রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করতে সাহায্য করেছিল। অন্যদিকে, বিজ্ঞান এটিকে একটি প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক গঠন বলে বর্ণনা করে। এই দুই দৃষ্টিভঙ্গির সংমিশ্রণ রামসেতুকে একটি অনন্য বিষয় করে তুলেছে, যা আজও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।

রামায়ণে বর্ণিত রামসেতু (ramsetu)

রামায়ণে বর্ণিত রামসেতুকে ভক্তরা শ্রী রামের অলৌকিক ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে দেখেন। পৌরাণিক কথা অনুসারে, বানর সেনাপতি নল ও নীলের নেতৃত্বে এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল, যিনি তৈরি পাথর দিয়ে সমুদ্রের উপর দিয়ে পথ তৈরি করেছিলেন। এই কাহিনি ভারতীয় সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত এবং প্রতি বছর রাম নবমীতে ভক্তরা এই ঘটনাকে স্মরণ করেন। আজও, ধনুষ্কোড়িতে এই সেতুর অবশেষ দেখতে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী ভিড় জমান।

ভূতত্ত্ববিদদের মতে

কিন্তু বিজ্ঞান এই সেতুকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, রামসেতু, যিনি অ্যাডামস ব্রিজ নামেও পরিচিত, একটি প্রাকৃতিক চুনাপাথরের গঠন। এটি প্রায় ৭,০০০ থেকে ১৮,০০০ বছর আগে শেষ হিমযুগের সময়ে সৃষ্টি হয়েছিল, যখন সমুদ্রের জলস্তর কম ছিল এবং ভূমি সংযোগ স্থাপন করেছিল। নাসার উপগ্রহ চিত্রে এই গঠনটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সরু শৈলশিরা। ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সার্ভে (এএসআই) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফির গবেষণায় এটি কোনও মানব নির্মিত কাঠামো নয় বলে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সেতুতে যে চুনাপাথর এবং প্রবাল পাওয়া যায়, তা ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ফল। তবে, এর মধ্যে একটি আশ্চর্যজনক তথ্য হল, এই পাথরগুলির মধ্যে কিছু অংশ এমনভাবে ভাসমান যা জলের তুলনায় হালকা। এটি পৌরাণিক কাহিনির সঙ্গে মিলে যায়, যেখানে বলা হয়েছে যে, নল-নীল তৈরি পাথরগুলি জলে ভাসছিল। এই সমন্বয়ই রামসেতুকে আস্থা ও বিজ্ঞানের এক অপূর্ব সংমিশ্রণে পরিণত করেছে।

রামসেতু নিয়ে বিতর্ক

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, রামসেতু (ramsetu) নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। ২০০৭ সালে, সেতু সমুদ্রম প্রকল্পের সময় এই গঠনটি ভাঙার প্রস্তাব এলে ধর্মীয় সংগঠনগুলি তীব্র বিরোধিতা করেছিল। ভক্তদের দাবি ছিল, এটি তাদের আস্থার অংশ এবং এর সঙ্গে তামাশা করা যাবে না। অন্যদিকে, প্রকল্পের সমর্থকরা বলেছিলেন, এটি একটি প্রাকৃতিক গঠন এবং এর ধ্বংসে কোনও ধর্মীয় ক্ষতি হবে না। এই দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল এবং এখনও এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়।

রামসেতু শুধু একটি ভূতাত্ত্বিক গঠন বা পৌরাণিক প্রতীক নয়, এটি ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতু হিসেবেও কাজ করে। এর ঐতিহাসিক ও পরিবেশগত গুরুত্বও কম নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অঞ্চলটি সমুদ্রের জলস্তর পরিবর্তনের ইতিহাস বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রাচীন ভূগোল ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাক্ষী।

Advertisements

অপারেশন ব্রহ্মার অধীনে মায়ানমারে বড় ত্রাণ পাঠাল ভারত, রঙ্গুনে পৌঁছল INS ঘড়িয়াল

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, রামসেতু (ramsetu) ভক্তদের কাছে একটি পবিত্র স্থান। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ধনুষ্কোড়িতে এসে এর দর্শন করেন এবং প্রার্থনা করেন। এটি তাদের কাছে শ্রী রামের ভক্তি ও সাহসের প্রতীক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আস্থা ও বিজ্ঞানের এই মিলন রামসেতুকে একটি বিরল উদাহরণ করে তুলেছে, যেখানে পৌরাণিক কাহিনি এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য একসঙ্গে বিরাজ করে।

সামাজিক মাধ্যমে রামসেতু নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “রামসেতু আমাদের সংস্কৃতির গর্ব। বিজ্ঞান যাই বলুক, এটি আমাদের আস্থার প্রতীক।” আরেকজন লিখেছেন, “এটি প্রকৃতির অলৌকিক সৃষ্টি। আমাদের এর বৈজ্ঞানিক গুরুত্বও বোঝা উচিত।” এই দ্বৈত দৃষ্টিভঙ্গি রামসেতুকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।

রাম নবমীর দিনে, যখন গোটা দেশ শ্রী রামের জন্ম উদযাপন করছে, রামসেতু নিয়ে আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এটি শুধু একটি সেতু নয়, বরং আস্থা ও বিজ্ঞানের মধ্যে একটি সংযোগস্থল। ভক্তরা এটিকে অলৌকিক বলে মানেন, আর বিজ্ঞানীরা এটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গুরুত্বের কথা বলেন। এই দুইয়ের মিলনে রামসেতু আজও সকলের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে।