কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা জয়রাম রমেশ (ramesh) সোমবার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি যোগী আদিত্যনাথের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০১৪-১৫ সালে প্রকাশিত একটি পুরনো নিবন্ধের উল্লেখ করে বলেন, এই নিবন্ধে সংরক্ষণ নীতির সমালোচনা করা হয়েছে, যা ‘বাবাসাহেব আম্বেদকরের সংবিধানের উপর আক্রমণ’।
“আরক্ষণ কি আগ মে সুলগতা দেশ”
রমেশ (ramesh) একটি স্ব-নির্মিত ভিডিওর মাধ্যমে এই নিবন্ধ, যার শিরোনাম “আরক্ষণ কি আগ মে সুলগতা দেশ” (সংরক্ষণের আগুনে জ্বলছে দেশ), তুলে ধরেন এবং বলেন, এতে ব্যবহৃত শব্দগুলি সংরক্ষণকে “দেশের বিভাজনকারী রাজনীতি” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রমেশ অভিযোগ করেন, শুধু যোগী আদিত্যনাথই নন, যিনি সংরক্ষণের বিরুদ্ধে এমন ভাষা ব্যবহার করেছেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও একই ধরনের চিন্তাভাবনা পোষণ করেন।
তিনি (ramesh)বলেন, “নিবন্ধে যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা বাবাসাহেবের সংবিধানের উপর আক্রমণ। যেমন ‘নিকম্মা বানানা ওয়ালা আরক্ষণ’। তিনি সংরক্ষণকে ‘দেশ কি বিভাজনকারী রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীই একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি সংরক্ষণের বিরুদ্ধে এমন ভাষা ব্যবহার করেন। আমি জানি, আরএসএস এবং প্রধানমন্ত্রীও এভাবে চিন্তা করেন। তারা বাবাসাহেবের রচিত সংবিধান বাতিল করতে চান।”
রমেশ অভিযোগ করেন (ramesh)
রমেশ (ramesh) আরও অভিযোগ করেন, আরএসএস এবং বিজেপি কখনোই বাবাসাহেব আম্বেদকরের সংবিধানের সঙ্গে একমত ছিল না। তিনি উল্লেখ করেন, ৩০ নভেম্বর ১৯৪৯-এ আরএসএস-এর মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’ প্রকাশ করেছিল যে আম্বেদকরের সংবিধানে মনুবাদী আদর্শের কোনও চিহ্ন নেই। তিনি বলেন, “২০২৪ সালে আমরা (কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া ব্লক) এই সংবিধান রক্ষার জন্য লড়াই করছি।”
রমেশ (ramesh) এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী জাতি গণনাকে একটি শহুরে নকশাল ধারণা বলেছেন। এখন ভাবুন, অজয় সিং বিষ্ট (যোগী আদিত্যনাথ), যিনি ৭৫ বছর বয়সে মোদীর চেয়ার দখল করতে আগ্রহী, তিনি জাতি গণনা সম্পর্কে কী ভাবেন? তিনি তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং পশ্চাদপদ শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের বিরুদ্ধে তার পুরনো কঠোর বক্তব্য শুনুন।”
সংরক্ষণ নীতি এবং সংবিধানের গুরুত্ব
এই বিতর্ক ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে সংরক্ষণ নীতি এবং সংবিধানের গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে। সংরক্ষণ নীতি ভারতের সামাজিক ন্যায়বিচারের একটি মূল ভিত্তি, যা তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণির জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে সুযোগ নিশ্চিত করে। আম্বেদকরের সংবিধান এই নীতিকে শক্তিশালী করেছে, এবং এটি দেশের সামাজিক কাঠামোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
যোগী আদিত্যনাথের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধটি সংরক্ষণকে “দেশের বিভাজনকারী রাজনীতি” হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং এটিকে “নিকম্মা” তৈরির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই শব্দগুলি সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি তীব্র সমালোচনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, যা আম্বেদকরের সংবিধানের মূল আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রমেশের (ramesh) মতে, এই ধরনের মনোভাব শুধু যোগী আদিত্যনাথের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আরএসএস এবং বিজেপির একটি বৃহত্তর চিন্তাধারার প্রতিফলন। তিনি বলেন, “আরএসএস এবং বিজেপি সংবিধানের মূল মর্মকে কখনোই মেনে নেয়নি। তারা এটিকে পরিবর্তন বা বাতিল করার পক্ষে।”
আচমকা কেন বাতিল দোভালের রাশিয়া সফর ?
আমরা বাবাসাহেবের সংবিধান রক্ষার জন্য লড়াই করছি
কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া ব্লক সংবিধান রক্ষার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। রমেশ (ramesh)জোর দিয়ে বলেন, “আমরা বাবাসাহেবের সংবিধান রক্ষার জন্য লড়াই করছি। এটি কেবল একটি দলিল নয়, এটি ভারতের সামাজিক ন্যায় ও সমতার ভিত্তি।” তিনি আরও বলেন, জাতি গণনা এবং সংরক্ষণ নীতি সমাজের পশ্চাদপদ শ্রেণির ক্ষমতায়নের জন্য অপরিহার্য।
এই বিতর্কের প্রেক্ষাপটে, যোগী আদিত্যনাথ এবং বিজেপির পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে, এই অভিযোগ রাজনৈতিক মঞ্চে তীব্র বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছেন, বিজেপি এবং আরএসএস সংরক্ষণ নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে একটি এজেন্ডা চালাচ্ছে, যা সংবিধানের মূল আদর্শের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনা যোগ করেছে। সংরক্ষণ নীতি এবং জাতি গণনার মতো বিষয়গুলি ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোচনায় সবসময়ই সংবেদনশীল। রমেশের অভিযোগ যোগী আদিত্যনাথ এবং বিজেপির নেতৃত্বকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বাধ্য করতে পারে।
জয়রাম রমেশের (ramesh)এই অভিযোগ ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের সূচনা করেছে। সংরক্ষণ নীতি এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরের সংবিধানের প্রতি বিজেপি এবং আরএসএস-এর মনোভাব নিয়ে কংগ্রেসের এই আক্রমণ রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করতে পারে। আগামী দিনে এই বিষয়ে বিজেপির প্রতিক্রিয়া এবং জাতি গণনা ও সংরক্ষণ নীতির ভবিষ্যৎ ভারতের সামাজিক ন্যায়ের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।