চলচ্চিত্র- টেলিভিশন জগতে শোকের ছায়া! প্রয়াত রামায়ণের প্রযোজক

ভারতীয় টেলিভিশনের ইতিহাসে যুগান্তকারী ধারাবাহিক ‘রামায়ণ’-এর (Ramayan) নির্মাতা রামানন্দ সাগরের পুত্র এবং প্রখ্যাত প্রযোজক ও সিনেমাটোগ্রাফার প্রেম সাগর রবিবার সকাল ১০টায় প্রয়াত হয়েছেন। ৮৪ বছর…

Ramayan producer prem sagar passes away

ভারতীয় টেলিভিশনের ইতিহাসে যুগান্তকারী ধারাবাহিক ‘রামায়ণ’-এর (Ramayan) নির্মাতা রামানন্দ সাগরের পুত্র এবং প্রখ্যাত প্রযোজক ও সিনেমাটোগ্রাফার প্রেম সাগর রবিবার সকাল ১০টায় প্রয়াত হয়েছেন। ৮৪ বছর বয়সে তিনি মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে রবিবার সকালে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুতে বলিউড এবং টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রেম সাগরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া রবিবার বিকেল ৩টায় মুম্বইয়ের পবন হংস শ্মশানঘাটে সম্পন্ন হবে।

   

প্রেম সাগর ছিলেন রামানন্দ সাগরের প্রতিষ্ঠিত প্রযোজনা সংস্থা সাগর আর্টস-এর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি শুধুমাত্র একজন প্রযোজকই ছিলেন না, একজন দক্ষ সিনেমাটোগ্রাফার এবং পরিচালক হিসেবেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৮ সালে পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এফটিআইআই) থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি ফটোগ্রাফি এবং সিনেমাটোগ্রাফিতে শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন।

এই প্রশিক্ষণ তাঁকে সাগর আর্টসের অধীনে বহু প্রকল্পের দৃশ্যমান পরিচয় গঠনে সহায়তা করেছিল। তিনি ‘রামায়ণ’, ‘শ্রীকৃষ্ণ’, ‘বিক্রম অউর বেতাল’ এবং ‘আলিফ লায়লা’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

এছাড়া, তিনি ধর্মেন্দ্র ও হেমা মালিনী অভিনীত ‘লালকার’, ‘আঁখেন’ এবং ‘চরস’ এবং জিতেন্দ্র ও হেমা মালিনী অভিনীত ‘হাম তেরে আশিক হ্যায়’-এর মতো চলচ্চিত্রে সিনেমাটোগ্রাফার এবং পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।

প্রেম সাগরের জন্ম এমন একটি পরিবারে, যেখানে গল্প বলার শিল্প, চলচ্চিত্র এবং ভক্তির মিশ্রণ ছিল। তাঁর পিতা রামানন্দ সাগর ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে ভারতীয় টেলিভিশনে পৌরাণিক কাহিনী ও আধ্যাত্মিকতাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। প্রেম সাগর ক্যামেরার পিছনে থেকে এই প্রকল্পগুলির দৃশ্যমান সৌন্দর্য এবং প্রযুক্তিগত দিক নিশ্চিত করেছেন, যা দর্শকদের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল।

তিনি সাগর আর্টসের মাধ্যমে তাঁর পিতার দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং ভারতীয় বিনোদন জগতে একটি অমর কীর্তি রেখে গেছেন। তাঁর কাজ সবসময় সাধারণ দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।

Advertisements

প্রেম সাগরের মৃত্যুতে টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র জগতের বহু শিল্পী শোক প্রকাশ করেছেন। ‘রামায়ণ’-এ লক্ষ্মণের ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেতা সুনীল লাহরী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “প্রেম সাগরজির প্রয়াণের খবর শুনে আমি গভীরভাবে মর্মাহত।

তিনি রামানন্দ সাগরজির পুত্র এবং আমাদের ‘রামায়ণ’ পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ওঁ শান্তি।” এছাড়া, ‘রামায়ণ’-এ রামের ভূমিকায় অভিনয় করা অরুণ গোভিলও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রির অনেকে তাঁকে একজন নম্র, নিবেদিতপ্রাণ এবং সৃজনশীল ব্যক্তি হিসেবে স্মরণ করছেন।

প্রেম সাগরের অবদান শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি তাঁর পিতার সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ঐতিহ্যবাহী গল্প বলার শৈলীকে আধুনিক মাধ্যমে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি ‘আদিপুরুষ’ চলচ্চিত্রের বিতর্ক নিয়েও মত প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “রামায়ণের মতো পবিত্র গল্প নিয়ে কাজ করতে গেলে ভক্তির সঙ্গে সততা বজায় রাখতে হবে।” এই বক্তব্য তাঁর গল্প বলার প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।

প্রেম সাগরের প্রয়াণ ভারতীয় টেলিভিশনের একটি স্বর্ণযুগের অবসানের ইঙ্গিত দেয়। তাঁর পুত্র শিব সাগর, যিনি নিজেও একজন প্রযোজক, তাঁর পিতার ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে, প্রেম সাগরের অবদান ভারতীয় বিনোদন জগতে চিরস্মরণীয় থাকবে।

ট্রাম্পের শুল্ক-ত্রাসের প্রত্যাঘাত, Pepsi, Coca-Cola বয়কটের ডাক!

তাঁর কাজ দর্শকদের হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখেছে এবং তাঁর নির্মিত দৃশ্যগুলি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রশংসিত হবে। তাঁর মৃত্যুতে সাগর আর্টস এবং তাঁর সহকর্মীরা একজন প্রতিভাবান শিল্পীকে হারিয়েছেন, যিনি নিভৃতে থেকেও ভারতীয় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের জগতে অমর কীর্তি রেখে গেছেন।