ভারতের পশ্চিম সেনা কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ (GOC-in-C) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মনোজ কুমার কাটিয়ার (Lt Gen Manoj Kumar Katiyar) সম্প্রতি বলেছেন যে ভারত সাইবার, রাসায়নিক, পারমাণবিক এবং জৈবিক যুদ্ধ সহ সব ধরনের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তার এই মন্তব্য ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সামরিক প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যুদ্ধ প্রস্তুতি: সব ডোমেনে সক্ষমতা বৃদ্ধি
ভারতীয় সেনাবাহিনী কেবল প্রচলিত যুদ্ধেই নয়, বরং আধুনিক যুদ্ধের সব ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। লে. জেনারেল কাটিয়ারের বক্তব্য অনুযায়ী, এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- সাইবার যুদ্ধ: ডিজিটাল যুগে সাইবার নিরাপত্তা এবং সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি।
- রাসায়নিক ও জৈবিক প্রতিরক্ষা: সম্ভাব্য রাসায়নিক বা জৈবিক হামলার বিরুদ্ধে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা।
- পারমাণবিক প্রস্তুতি: পারমাণবিক যুদ্ধের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক মতবাদ এবং সক্ষমতা।
- ভূখণ্ড দখল: তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ভূখণ্ড দখল না করা পর্যন্ত পাকিস্তান সম্ভবত ভারতের বিজয় মেনে নেবে না, তাই সব ডোমেনে যুদ্ধ প্রস্তুতি চলছে।
‘রাম প্রহার’ মহড়া: সামরিক সক্ষমতার প্রদর্শন
এই উচ্চ সতর্কতার আবহে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘রাম প্রহার’ (Ram Prahar) নামে একটি বৃহৎ মহড়া পরিচালনা করেছে। এই মহড়ায় পর্বতীয় সেনা, সাঁজোয়া ইউনিট, আর্টিলারি, বিশেষ বাহিনী এবং বিমান ইউনিট সমন্বিতভাবে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মহড়ার মূল লক্ষ্য ছিল শত্রুপক্ষের অবস্থানে গভীর আঘাত হানা এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু দখল করা। লে. জেনারেল কাটিয়ার এই মহড়া পর্যালোচনা করে operacional doctrine এবং পদ্ধতিগুলি বৈধতা দিয়েছেন। এই মহড়ার মাধ্যমে ভারতের সামরিক বাহিনী তাদের ক্ষিপ্রতা, সহনশীলতা এবং ভবিষ্যৎমুখী প্রস্তুতির বার্তা দিয়েছে।
প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ ও দেশীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
আধুনিক যুদ্ধের চাহিদা মেটাতে ভারত দেশীয় প্রযুক্তির উপর জোর দিচ্ছে। ড্রোন এবং কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেমের মতো নতুন প্রযুক্তি অর্জনে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। লে. জেনারেল কাটিয়ার উল্লেখ করেছেন যে, বিদেশি আমদানির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা স্কেলেবিলিটি এবং যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই, দেশীয় প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন এবং অপারেশনাল প্রস্তুতি বজায় রাখা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।
ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা
লে. জেনারেল কাটিয়ারের এই বার্তা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির একটি প্রতিচ্ছবি। তার বক্তব্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তাদের নিজস্ব স্বার্থে ভারতকে উস্কে দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) বরাবর এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনী উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। তিনি স্থানীয় জনগণ এবং প্রাক্তন সেনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
লে. জেনারেল মনোজ কুমার কাটিয়ারের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলি থেকে স্পষ্ট যে ভারত তার জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যেকোনো ধরনের আগ্রাসন বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কঠোর জবাব দেওয়ার জন্য ভারতীয় সামরিক বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারতের এই সামরিক সক্ষমতা ও সতর্ক অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
