মহারাষ্ট্রে হিন্দি ভাষা বিতর্কে উদ্ধব কে মিথ্যাচারী বলে কটাক্ষ রাম কদমের

মহারাষ্ট্রে (Maharashtra) হিন্দি ভাষাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে, যেখানে শিবসেনা…

maharsatra language controversy

মহারাষ্ট্রে (Maharashtra) হিন্দি ভাষাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে, যেখানে শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা উদ্ধব ঠাকরে এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে একসঙ্গে হিন্দি ‘আরোপ’ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতা রাম কদম তীব্র ভাষায় উদ্ধব ঠাকরের (Maharashtra) বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “উদ্ধব ঠাকরে এবং ইউবিটি-র লোকজন মিথ্যার উপর মিথ্যা বলছেন। জোর করে হিন্দি চালু করার সিদ্ধান্ত উদ্ধব ঠাকরেই নিয়েছিলেন। আমরা সব ভাষার সম্মান করি। দেবেন্দ্র ফড়নবীস জনগণের উপর সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছেন, শিশু এবং তাদের অভিভাবকরা ঠিক করবেন কোন ভাষা তারা পড়বে। উদ্ধব ঠাকরে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।”

   

মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস রবিবার (২৯ জুন, ২০২৫) ঘোষণা করেছেন যে রাজ্য মন্ত্রিসভা এপ্রিল ও জুন মাসে জারি করা দুটি সরকারি রেজোলিউশন (জিআর) বাতিল করেছে, যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে চালু করার কথা বলেছিল।

এই সিদ্ধান্ত এসেছে উদ্ধব ঠাকরে এবং রাজ ঠাকরের নেতৃত্বে পরিকল্পিত একটি বৃহৎ প্রতিবাদ মিছিলের প্রাক্কালে। ফড়নবীস আরও ঘোষণা করেছেন, শিক্ষাবিদ নরেন্দ্র জাধবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে, যা রাজ্যের ভাষা নীতি বাস্তবায়নের পথ প্রস্তাব করবে।

উদ্ধব ঠাকরে এই সিদ্ধান্তকে ‘মারাঠি (Maharashtra) জনগণের সামনে হাঁটু গেড়ে বসা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে এটি মারাঠি ভাষার সমর্থকদের জয়। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “আমরা হিন্দি ভাষার বিরোধী নই, কিন্তু এর জোরপূর্বক আরোপের বিরুদ্ধে।”

তিনি আরও বলেন, সরকারের এই জিআর মারাঠি ভাষার প্রাধান্যকে কমিয়ে দেয় এবং শিশুদের উপর অযৌক্তিক শিক্ষাগত চাপ সৃষ্টি করে। শিবসেনা (ইউবিটি) এবং এমএনএস ৫ জুলাইয়ের পরিকল্পিত প্রতিবাদ মিছিল বাতিল করে এর পরিবর্তে একটি ‘বিজয় মিছিল’ ঘোষণা করেছে।

ফড়নবীস দাবি করেছেন, তিন ভাষা নীতির প্রস্তাব ড. রঘুনাথ মাশেলকর কমিটির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, যা উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২০ এবং ২০২১ সালে গ্রহণ করেছিল। তিনি বলেন, “২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উদ্ধব ঠাকরে জাতীয় শিক্ষা নীতি (এনইপি) বাস্তবায়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের ঘোষণা করেছিলেন।”

এই রিপোর্ট ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জমা দেওয়া হয় এবং ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত হয়। (Maharashtra) তবে শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত এই দাবিকে ‘বিজেপির জাতীয় মিথ্যাচার নীতি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন, যদি উদ্ধব ঠাকরে মাশেলকর কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করতেন, তবে তা প্রকাশ্যে আনা উচিত।

Advertisements

বিজেপি নেতা রাম কদমের অভিযোগ, উদ্ধব ঠাকরে (Maharashtra) রাজনৈতিক স্বার্থে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। তিনি বলেন, “ফড়নবীস স্পষ্ট করেছেন যে হিন্দি বাধ্যতামূলক নয়, শিক্ষার্থীরা অন্য যেকোনো আঞ্চলিক ভাষা বেছে নিতে পারে। এটি জনগণের স্বাধীনতার প্রতি আমাদের সম্মানের প্রমাণ।” তিনি আরও বলেন, উদ্ধব ঠাকরের এই প্রতিবাদ কেবল ভোটের রাজনীতির জন্য এবং মারাঠি অস্মিতার নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।

এই বিতর্কে মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) ভাষা উপদেষ্টা কমিটিও সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তারা দাবি করেছে, পঞ্চম শ্রেণির আগে তৃতীয় ভাষা চালু করা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং রাজ্যের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। এই কমিটি ৫ জুলাইয়ের প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিতর্ক আসন্ন বিএমসি এবং স্থানীয় নির্বাচনের আগে মারাঠি অস্মিতার রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি কৌশল হতে পারে। উদ্ধব এবং রাজ ঠাকরের এই ঐক্য ২০ বছর পর তাদের রাজনৈতিক (Maharashtra) পুনর্মিলনের ইঙ্গিত দেয়, যা রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন গতিপ্রকৃতি আনতে পারে। তবে বিজেপি দাবি করছে, এটি কেবল বিরোধীদের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য একটি ‘ভাষা যুদ্ধ’ ছড়ানোর চেষ্টা।

ভারতের পাল্টা জোট? চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ মিলে ‘নতুন সার্ক’-এর ছক

এই ঘটনা মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রশ্নকে আবারও সামনে এনেছে। ফড়নবীসের নতুন কমিটি কী প্রস্তাব দেয় এবং এই বিতর্ক কীভাবে সমাধান হয়, তা আগামী দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।