কলকাতা: ভাষাগত বৈষম্য ও বিদ্বেষের বিতর্কে দেশজুড়ে যখন রাজনীতি উত্তপ্ত, তখন স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রাখি বন্ধনের দিন যেন নতুন করে একতার বার্তা বয়ে আনল। দেশের নানা প্রান্তে আজ দেখা গেল ভাষা, অঞ্চল ও ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে মানুষ একে অপরের হাতে রাখি বাঁধছেন৷ শুধু ভাই-বোনের সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে নয়, বরং সহাবস্থানের অঙ্গীকার হিসেবে (Rakhi festival message of unity)।
কলকাতা থেকে কেরল, অসম থেকে মহারাষ্ট্র, যেখানে ভাষাগত পরিচয়কে ঘিরে বিতর্ক ও রাজনৈতিক মেরুকরণ বাড়ছে, সেখানে রাখির সুতোর মতো সরল অথচ দৃঢ় এক বন্ধন মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বহু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ বিভিন্ন শহরে ‘ভ্রাতৃত্ব যাত্রা’ ও ‘রাখি উৎসব’-এর আয়োজন করে, যেখানে ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ একে অপরের হাতে রাখি বেঁধে ভাষা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ঐক্যের প্রতীক গড়ে তুলেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা এবং বিভাজনের আবহের মধ্যে এই প্রতীকী পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাখি শুধু পারিবারিক বন্ধন নয়, তা বহন করে সামাজিক ঐক্যের গভীর বার্তা।
রাখি উৎসব শুধু ভাই–বোনের সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়, বন্ধুত্ব, প্রতিবেশী সম্পর্ক কিংবা সামাজিক সৌহার্দ্যের প্রতীক হিসেবেও আজ বহু মানুষ রাখি বিনিময় করেন। আজ দেশের প্রতিটি প্রান্তে মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে রক্ষাবন্ধন বা রাখি উৎসব৷
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাখি পূর্ণিমার উৎপত্তি নিয়ে নানা কাহিনি রয়েছে। পুরাণে বলা হয়, দেবরাজ ইন্দ্রকে অসুরবাহিনী থেকে রক্ষা করতে ইন্দ্রাণী ঋষি বশিষ্ঠের নির্দেশে তাঁর হাতে পবিত্র সূত্র বেঁধেছিলেন। মহাভারতে দ্রৌপদী কৃষ্ণের আঙুলে আঘাত লাগলে নিজের শাড়ির একটি অংশ ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন; পরে কৃষ্ণ দ্রৌপদীর অসহায় মুহূর্তে তাঁকে রক্ষা করেন, এই ঘটনাকেও রক্ষাবন্ধনের এক প্রতীকী সূচনা হিসেবে দেখা হয়। আবার মধ্যযুগে বলা হয়, মেওয়াড়ের রানী কর্ণাবতী দিল্লির সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠিয়ে সুরক্ষার আবেদন করেছিলেন, আর হুমায়ুন তাঁর সম্মান রক্ষায় সেনা নিয়ে এগিয়ে আসেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাখি পূর্ণিমা শুধু পারিবারিক ভালোবাসার নয়, বরং মানবিক সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করারও এক অনন্য উপলক্ষ হয়ে উঠেছে। রক্তের সম্পর্কের বাইরেও বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা ও নিরাপত্তার যে প্রতিশ্রুতি এই উৎসব বহন করে, তা-ই রাখি পূর্ণিমার আসল তাৎপর্য। এদিন যেন মনে করিয়ে দেয়, মানুষে মানুষে আস্থা, সুরক্ষা ও ভালোবাসার বন্ধনই জীবনের আসল শক্তি।