ভারতের সংসদের রাজ্যসভায় ‘প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫’ পাস হয়েছে, যা দেশের অনলাইন গেমিং (Online Gaming Bill) শিল্পের জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই বিলটি গতকাল লোকসভায় ভয়েস ভোটের মাধ্যমে পাস হওয়ার পর আজ রাজ্যসভায় অনুমোদিত হয়েছে।
ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটির মূল উদ্দেশ্য হলো রিয়েল মানি গেমিং (অর্থের বিনিময়ে খেলা গেম) নিষিদ্ধ করা এবং ই-স্পোর্টস, শিক্ষামূলক ও সামাজিক গেমিংয়ের প্রচার ও নিয়ন্ত্রণ করা। এই আইনের মাধ্যমে ভারতের ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের গেমিং শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে।
এই বিলে ‘অনলাইন মানি গেম’কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এমন গেম হিসেবে, যেখানে খেলোয়াড়দের প্রবেশ ফি বা আর্থিক আমানত জমা দিতে হয়, তা দক্ষতাভিত্তিক হোক বা সুযোগভিত্তিক। এই ধরনের গেম অফার করা, প্রচার করা বা এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকেও এই ধরনের গেমের জন্য অর্থ স্থানান্তর বা সুবিধা প্রদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে। আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয়ই। পুনরাবৃত্তি অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তি আরও কঠোর, যেখানে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, “অনলাইন মানি গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলি প্রায়ই আর্থিক প্রতারণা, মানি লন্ডারিং এবং এমনকি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠেছে। এই গেমগুলির আসক্তির কারণে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়েছে, এমনকি আত্মহত্যার মতো চরম পরিণতিও দেখা গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই বিলের মাধ্যমে আমরা ই-স্পোর্টস এবং শিক্ষামূলক গেমিংকে উৎসাহিত করতে চাই, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর নয়।” তিনি জানান, খেলোয়াড়দের শাস্তি দেওয়া হবে না, কারণ তারা এই প্ল্যাটফর্মগুলির শিকার। শাস্তি কেবলমাত্র পরিষেবা প্রদানকারী, বিজ্ঞাপনদাতা এবং আর্থিক সহায়তাকারীদের জন্য।
বিলটি একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করেছে, যা ই-স্পোর্টস, শিক্ষামূলক গেম এবং সামাজিক গেমিংয়ের নীতি প্রণয়ন, সম্মতি তদারকি এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে। এই সংস্থা গঠনের জন্য প্রাথমিক মূলধন ব্যয় হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা এবং বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা।
ই-স্পোর্টসকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এবং এর জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমি, গবেষণা কেন্দ্র এবং প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের জন্য সরকারি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
তবে, এই বিলটি শিল্পের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অল ইন্ডিয়া গেমিং ফেডারেশন (এআইজিএফ), ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ফ্যান্টাসি স্পোর্টস (এফআইএফএস) এবং ই-গেমিং ফেডারেশন (ইজিএফ)-এর মতো শিল্প সংগঠনগুলি এই বিলের তীব্র সমালোচনা করেছে।
তারা জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ৪০০টিরও বেশি কোম্পানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, প্রায় ২ লক্ষ চাকরি হারিয়ে যেতে পারে এবং ২০,০০০ কোটি টাকার জিএসটি ও টিডিএস রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা আরও সতর্ক করে বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞা ব্যবহারকারীদের অবৈধ অফশোর প্ল্যাটফর্মের দিকে ঠেলে দেবে, যা মানি লন্ডারিং এবং ডেটা চুরির ঝুঁকি বাড়াবে।
কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদাম্বরম এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “এই বিলটি শিল্পের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই উত্থাপিত হয়েছে। এটি একটি অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত, যা বিপরীতমুখী হতে পারে।” তিনি বিলটিকে একটি নির্বাচিত কমিটিতে পাঠানোর এবং জনসাধারণের শুনানির মাধ্যমে সুষ্ঠু পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্ক খড়গে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
এশিয়ার কাপের আগে আগরকরকে নিয়ে সিদ্ধান্ত বোর্ডের, ছাঁটাইয়ের পথে ১!
বিলটি এখন রাষ্ট্রপতির সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে। পাস হলে, এটি ভারতের গেমিং শিল্পকে নতুনভাবে গড়ে তুলবে, তবে শিল্পের অংশীদাররা এর বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বিল ভারতকে নিয়ন্ত্রিত অনলাইন গেমিংয়ে বিশ্বনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তবে এর অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সমাজের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনও পর্যবেক্ষণের বিষয়।