ভারত-চীন বিরোধ সমধানের চার দফা পরিকল্পনা রাজনাথের

ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সীমান্ত বিরোধ সমাধানের লক্ষ্যে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath) চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাডমিরাল ডং জুনের সঙ্গে একটি চার-দফা পরিকল্পনা…

Rajnath new china policy

ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সীমান্ত বিরোধ সমাধানের লক্ষ্যে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath) চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাডমিরাল ডং জুনের সঙ্গে একটি চার-দফা পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন। এই বৈঠক চীনের কিংদাওতে শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনের পাশাপাশি ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হয়।

এটি ২০২৪ সালের অক্টোবরে পূর্ব লাদাখের ডেমচক এবং দেপসাং সমভূমিতে সৈন্য প্রত্যাহার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ভারত ও চীনের মধ্যে (Rajnath) প্রথম উচ্চ-পর্যায়ের সামরিক বৈঠক। রাজনাথ সিং এই বৈঠকে ভারত-চীন সম্পর্কের ‘ইতিবাচক গতি’ বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছেন এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একটি কাঠামোগত রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।

   

চার-দফা পরিকল্পনার বিবরণ

রাজনাথ সিং-(Rajnath)এর প্রস্তাবিত চার-দফা পরিকল্পনার প্রথম পরিকল্পনা,

২০২৪ সালের প্রত্যাহার চুক্তির কঠোর প্রতিপালন

ভারত ও চীনকে ২০২৪ সালের অক্টোবরে স্বাক্ষরিত সৈন্য প্রত্যাহার চুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই চুক্তি পূর্ব লাদাখের ডেমচক এবং দেপসাং-এর বাকি উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।

অব্যাহত উত্তেজনা হ্রাসের প্রচেষ্টা

রাজনাথ সিং (Rajnath) বাস্তব নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর ভবিষ্যৎ উত্তেজনা রোধে অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। এটি নিশ্চিত করবে যে সীমান্তে কোনও নতুন সংঘর্ষ বা ঘর্ষণের ঘটনা ঘটবে না।

সীমানা নির্ধারণ ও সীমাঙ্কন ত্বরান্বিত করা

সীমানা নির্ধারণ ও সীমাঙ্কন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য তিনি দ্রুত আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বিদ্যমান বিশেষ প্রতিনিধি পর্যায়ের প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে সীমানা ব্যবস্থাপনা এবং স্থায়ী সমাধানের উপর জোর দিয়েছেন।

বিশ্বাসের ঘাটতি পূরণ (Rajnath)

২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষের পর সৃষ্ট বিশ্বাসের ঘাটতি দূর করার জন্য রাজনাথ সিং উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। এটি এশিয়া এবং বিশ্বে স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কলেজে গণধর্ষণ ইস্যুতে আইন কলেজের সামনে ডিওয়াইএফআই এর প্রতিবাদ

বৈঠকের পটভূমি

এই বৈঠকটি ২০২০ সালের মে মাসে পূর্ব লাদাখে সামরিক সংঘর্ষের পর থেকে ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতির প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হন, এবং চীনা পক্ষেও হতাহতের ঘটনা ঘটে।

Advertisements

২০২৪ সালের অক্টোবরে ডেমচক এবং দেপসাং-এ সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার পর এবং গত বছর রাশিয়ার ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বৈঠকের পর সম্পর্কের উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। রাজনাথ সিং বৈঠকে কৈলাস মানসরোভর যাত্রা ছয় বছর পর পুনরায় শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের উপর জোর

বৈঠকে রাজনাথ সিং (Rajnath) পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি উত্থাপন করেন, বিশেষ করে ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন, যাতে ২৬ জন নাগরিক নিহত হন। তিনি ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরের’-এর কথা উল্লেখ করেন, যা পাকিস্তানের জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল। তিনি এসসিও সদস্যদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানান এবং দ্বিমুখী নীতি প্রত্যাখ্যান করেন।

এসসিও সম্মেলন ও ভারতের অবস্থান

এসসিও সম্মেলনে রাজনাথ সিং (Rajnath) পহেলগাঁও হামলার উল্লেখ বাদ দেওয়ায় যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন, যা ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, “কিছু দেশ সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়। এই ধরনের দ্বৈত মানদণ্ডের কোনও স্থান থাকা উচিত নয়।”

ভারত-চীন সম্পর্কের গুরুত্ব

রাজনাথ সিং (Rajnath) জোর দিয়ে বলেন, ভারত-চীন সম্পর্ক শুধুমাত্র দুই দেশের জনগণের জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সংবেদনশীলতা আমাদের সম্পর্ককে নির্দেশ করবে।” প্রধানমন্ত্রী মোদীও ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে শি জিনপিং-এর সঙ্গে বৈঠকে একই কথা বলেছিলেন।

চীনের প্রতিক্রিয়া

চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত বেইজিং-এর সঙ্গে কোনও সংঘাত চায় না এবং পারস্পরিক বিশ্বাস ও যোগাযোগ বাড়াতে কাজ করছে। তবে, ভারত থেকে এই বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এখনও প্রকাশিত হয়নি।

রাজনাথ সিং-(Rajnath) এর চার-দফা পরিকল্পনা ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ সমাধানের জন্য একটি কাঠামোগত পন্থা প্রদান করে। এটি সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা, বিশ্বাসের ঘাটতি দূর করা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করে।

গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতির পথে হলেও, এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন উভয় পক্ষের অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করবে। এই বৈঠক এবং প্রস্তাবিত পরিকল্পনা ভারত-চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।