লাওসে রাজনাথের সঙ্গে বৈঠক চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা দুপক্ষের

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ (Rajnath Singh) সম্প্রতি লাওসে অনুষ্ঠিত আসিয়ান (ASEAN) প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছেন। এই সফর চলাকালীন, তিনি সেখানে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী…

Indian Defence minister Rajnath Singh meating with Chinese DM Dong June in Laos, talk over LAC disengagement.

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ (Rajnath Singh) সম্প্রতি লাওসে অনুষ্ঠিত আসিয়ান (ASEAN) প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছেন। এই সফর চলাকালীন, তিনি সেখানে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুনের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে উভয়পক্ষ (India China border row) সীমান্তে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, বিশেষ করে গলওয়ানের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

আমেরিকায় ঘুষকাণ্ড! আদানীকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব রাহুল গান্ধী

   

২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চিনা সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে অত্যন্ত খারাপ করে তোলে। এই সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হন এবং চিনা পক্ষেরও কিছু সেনা হতাহত হয়। গলওয়ানের এই ঘটনা কূটনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ভারত সরকার চিনের সঙ্গে সীমান্তে সংঘর্ষের পরিস্থিতি এড়াতে একাধিকবার সতর্কতা জারি করেছে।

রাজনাথ সিংহের সঙ্গে ডং জুনের এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করা এবং সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা। ভারত সরকার সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়েছে যে, সীমান্তে কোনো ধরনের সংঘর্ষের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য চিনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনাথ সিংহ জানিয়েছেন, “আমরা চাই না যে গলওয়ানের মতো পরিস্থিতি পুনরায় ঘটুক। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সামনের দিকে এগোতে চাই।”

বৈঠকে, উভয়পক্ষ তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির জন্যও আলোচনা করেন। রাজনাথ সিংহ বলেন, “শান্তি এবং স্থিতিশীলতা দুই দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করা গেলে, তা কেবল আমাদের দেশগুলোর জন্যই নয়, বরং গোটা অঞ্চলের জন্য উপকারী হবে।”

মোদি সরকার ৬ কোটি রেশন কার্ড বাতিল করেছে, জানুন কীভাবে প্রভাবিত হবে আপনার রেশন সুবিধা

বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। রাজনাথ সিংহ চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জানান যে, সীমান্তে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি না হয়। তিনি বলেন, “সীমান্তের নিরাপত্তা বজায় রাখতে আমাদের উভয় দেশের সেনাবাহিনীকে একসাথে কাজ করতে হবে।”

ভারত এবং চিনের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ, কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এদের মধ্যে সংঘাত ও বৈরিতাও দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিককালে, কূটনৈতিক আলোচনাগুলোতে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে, কিন্তু দুই দেশের মধ্যে আস্থা এবং সম্পর্কের ভিত্তি এখনও সংকটের মুখে। রাজনাথ সিংহের বৈঠককে তাই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

রাজনাথ সিংহ এবং ডং জুনের মধ্যে আলোচনা কেবল সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়েই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রেও কথাবার্তা হয়। উভয়পক্ষই নিজেদের নিরাপত্তা সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধানের উপর আলোচনা করেন। রাজনাথ সিংহ উল্লেখ করেন, “আমরা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত। আমাদের লক্ষ্য হল দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করা।” 
আজকের বদলে আগামীকাল ছাড়বে ট্রেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা দেরির কারণ জানাল না রেল

ভারত ও চিনের এই বৈঠক আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-চিন সম্পর্কের প্রভাব শুধু এ অঞ্চলে নয়, বরং গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। যেহেতু চিন দক্ষিণ চিন সাগর এবং ভারত মহাসাগরে তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, সেহেতু ভারত তার সীমান্ত নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বন করছে।

রাজনাথ সিংহের এই সফর ও বৈঠক উভয় পক্ষের জন্য একটি সুযোগ প্রদান করেছে পরস্পরের মতামত শোনার এবং সীমান্তে সংঘাত এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার। ভবিষ্যতে, ভারত-চিন সম্পর্কের উন্নতির জন্য এ ধরনের বৈঠক আরও বেশি প্রয়োজন।