রাশিয়ার বিজয় দিবস প্যারেডে না যাওয়ার সম্ভাবনা রাজনাথের

একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সিদ্ধান্তে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) আগামী ৯ মে, ২০২৫-এ রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিতব্য বিজয় দিবসের প্যারেডে অংশ নেবেন না। এই…

Rajnath Singh Likely to Skip Russia's Victory Day Parade

একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সিদ্ধান্তে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) আগামী ৯ মে, ২০২৫-এ রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিতব্য বিজয় দিবসের প্যারেডে অংশ নেবেন না। এই প্যারেডটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাজি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য আয়োজিত হচ্ছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, রাজনাথ সিংয়ের পরিবর্তে প্রতিরক্ষা দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সঞ্জয় সেঠ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি একটি প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

পহেলগাঁও হামলা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন হিন্দু পুরুষ। এই হামলা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের সম্ভাব্য ভূমিকার ইঙ্গিত দিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই হামলার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতির সংবেদনশীলতার কারণে রাজনাথ সিংয়ের মস্কো সফর বাতিল করা হয়েছে। একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বিজয় দিবসের উৎসবে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারত সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রমন্ত্রী সঞ্জয় সেঠ এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।”

   

মোদীর অনুপস্থিতি এবং কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই বিজয় দিবসের প্যারেডে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে, পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে মোদী তার সফর বাতিল করেন। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয় যে, রাজনাথ সিং ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কিন্তু বর্তমানে বাড়তে থাকা ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে সিংও এই সফর থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এই পরিবর্তন কূটনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, অনেকে এটিকে পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের কঠোর অবস্থানের প্রতিফলন বলে মনে করছেন।

রাশিয়া এই বছরের প্যারেডে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-সহ প্রায় ২০টি দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পুতিন নিজেও এই বছরের শেষের দিকে ভারত সফরে আসার পরিকল্পনা করছেন, যা ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে। ২০২৪ সালে মোদী দু’বার রাশিয়া সফর করেছিলেন—একবার পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের জন্য এবং আরেকবার কাজানে ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নিতে।

বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য

৯ মে রাশিয়ার বিজয় দিবস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উৎসব, যা ১৯৪৫ সালে নাজি জার্মানির উপর সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়কে স্মরণ করে। মস্কোর রেড স্কোয়ারে আয়োজিত এই প্যারেড রাশিয়ার সামরিক শক্তি এবং জাতীয় গর্বের প্রতীক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা এবং সামরিক প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এই বছর ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের কারণে এটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক প্রভাব

রাজনাথ সিংয়ের পরিবর্তে সঞ্জয় সেঠকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ভারতের বর্তমান নিরাপত্তা উদ্বেগের সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরে। পহেলগাঁও হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিদের এবং তাদের সমর্থকদের “পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে” খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে “সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” প্রদান করেছেন, যা পাকিস্তানের মধ্যে ভারতের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

Advertisements

পাকিস্তান এই পরিস্থিতিতে ভারতের সম্ভাব্য “সামরিক হামলার” আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ভারত ইতিমধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করেছে, পাকিস্তানি জাহাজের জন্য বন্দরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে এবং পাকিস্তানি এয়ারলাইন্সের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা বন্ধ করেছে। এই পদক্ষেপগুলি ভারতের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া এবং সমর্থন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন, এটিকে “নৃশংস অপরাধ” আখ্যা দিয়ে ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এই অপরাধের কোনো ন্যায্যতা নেই। আমরা আশা করি, এর পেছনে যারা রয়েছে তারা যথাযথ শাস্তি পাবে।” রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপভও ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। এই সমর্থন ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরে, যদিও ভারতের উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বের অনুপস্থিতি কূটনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

এই সিদ্ধান্ত সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ পহেলগাঁও হামলার পর মোদী এবং রাজনাথ সিংয়ের রাশিয়া সফর বাতিল ভারতের নিরাপত্তার প্রতি অগ্রাধিকারের প্রমাণ।” আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, “সঞ্জয় সেঠের প্রতিনিধিত্ব ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টা, তবে উচ্চ-পর্যায়ের অনুপস্থিতি লক্ষণীয়।” এই পোস্টগুলি জনসাধারণের মধ্যে এই সিদ্ধান্তের গুরুত্ব তুলে ধরে।

রাজনাথ সিংয়ের বিজয় দিবসের প্যারেডে অনুপস্থিতি এবং সঞ্জয় সেঠের প্রতিনিধিত্ব ভারতের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং কূটনৈতিক ভারসাম্যের প্রতিফলন। পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রতি অগ্রাধিকার এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। তবে, সঞ্জয় সেঠের অংশগ্রহণ ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে। এই ঘটনা ভারতের কঠিন কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যে সতর্ক ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে।