Police Boycott Holi: পদোন্নতি ও বেতন বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে রাজ্য পুলিশের হোলি বয়কট

রাজস্থানের বিভিন্ন জেলার পুলিশ কর্মীরা শনিবার হোলি উৎসব থেকে নিজেদের দূরে রেখেছেন। তাদের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের কিছু দাবি, যার মধ্যে রয়েছে পদোন্নতির মাধ্যমে…

Rajasthan Police Boycott Holi

short-samachar

রাজস্থানের বিভিন্ন জেলার পুলিশ কর্মীরা শনিবার হোলি উৎসব থেকে নিজেদের দূরে রেখেছেন। তাদের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের কিছু দাবি, যার মধ্যে রয়েছে পদোন্নতির মাধ্যমে ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটি (ডিপিসি), বেতন বৈষম্য দূর করা, সাপ্তাহিক ছুটি এবং মেস ভাতা বৃদ্ধির মতো বিষয়। এই ঘটনা রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষের একটি বড় চিত্র তুলে ধরেছে।

   

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলট এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মার কাছে আবেদন করেছেন যাতে পুলিশ কর্মীদের দাবিগুলির প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয় এবং তাদের হোলি উদযাপনের সুযোগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে, রাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্য কিরোদি লাল মীনাও পুলিশের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি এই বিষয়টি সরকারের সামনে তুলে ধরবেন এবং সমাধানের জন্য চেষ্টা করবেন।

রাজস্থানে পুলিশ কর্মীদের হোলি বয়কটের সিদ্ধান্তটি অভূতপূর্ব। প্রতি বছর সাধারণ মানুষের হোলি উৎসবের একদিন পর পুলিশ নিজেদের মধ্যে ‘পুলিশ হোলি’ উদযাপন করে থাকে। এই সময় তারা সাধারণত ডিউটিতে থাকে, যাতে জনগণ নিরাপদে উৎসব পালন করতে পারে। কিন্তু এবার, পদোন্নতি ও বেতন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে তারা এই উৎসব থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জয়পুর, জোধপুর, করৌলি, বাঁসওয়াড়া সহ একাধিক জেলায় পুলিশ লাইনে হোলি উৎসবের কোনও আয়োজন করা হয়নি। অনেক জায়গায় পুলিশ কর্মীরা প্রতীকীভাবে এই বয়কটের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

পুলিশের প্রধান দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে ডিপিসি-র মাধ্যমে সময়মতো পদোন্নতি, বেতনের গ্রেড পে ৩৬০০ টাকায় উন্নীত করা, কঠিন ডিউটির জন্য ভাতা এবং মেস ভাতা বৃদ্ধি। এছাড়াও, তারা সাপ্তাহিক ছুটি এবং নির্দিষ্ট ডিউটির সময়সীমার দাবিও তুলেছেন। পুলিশ কর্মীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই দাবিগুলি সরকারের কাছে উত্থাপিত হয়েছে, কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “প্রদেশে শান্তিপূর্ণ হোলি উদযাপনে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আজ তাদের দাবি অপূর্ণ থাকায় তারা হোলি বয়কট করছে। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, অবিলম্বে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে পুলিশের ন্যায্য দাবি মেনে নিন।” তিনি আরও বলেন, তাঁর শাসনকালে পুলিশের স্বার্থে বাজেটে বিভিন্ন ঘোষণা করা হতো এবং বিরোধী দল হিসেবে তারা এই দাবি বিধানসভায় তুলে ধরেছে। গেহলট পুলিশ কর্মীদের বয়কট পুনর্বিচার করে পরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে হোলি উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।

মন্ত্রী কিরোদি লাল মীনা, যিনি বিজেপি সরকারের একজন প্রভাবশালী নেতা, পুলিশের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “পুলিশ আমাদের নিরাপত্তার জন্য সবসময় মাঠে থাকে। তাদের দাবি ন্যায্য। আমি সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করব।” তাঁর এই সমর্থন পুলিশ কর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।

জোধপুরে পুলিশ লাইনে সিনিয়র অফিসাররা হোলি উদযাপনের জন্য উপস্থিত হলেও, কনস্টেবলরা এতে অংশ নেননি। করৌলির হিন্ডৌন সিটিতে পুলিশ কর্মীরা সরকারের প্রতি তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একজন পুলিশ কর্মী বলেন, “আমরা সবসময় জনগণের সেবায় থাকি। কিন্তু আমাদের নিজেদের অধিকারের কথা কে ভাববে? সরকার আমাদের দাবি শুনছে না।” বাঁসওয়াড়ায় পুলিশ কর্মীরা হোলির জন্য প্রস্তুত করা অনুষ্ঠানস্থল থেকে কর্মকর্তাদের ফিরে যেতে বাধ্য করেছেন।

এই বয়কট রাজস্থানে একটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন জয়পুরের বাসিন্দা বলেন, “পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা দেয়। তাদের দাবি পূরণ করা উচিত।” অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, হোলির মতো উৎসব বয়কট করা সমাধান নয়।

এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মার পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। তবে, মন্ত্রী মীনার সমর্থন সরকারের মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। পুলিশ কর্মীরা আশা করছেন, তাদের এই আন্দোলন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং দ্রুত সমাধানের পথ খুলবে।

রাজস্থান পুলিশের এই হোলি বয়কট তাদের দীর্ঘদিনের অসন্তোষের প্রকাশ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বাহিনীর দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলনের আশঙ্কা রয়েছে। গেহলট এবং মীনার মতো নেতারা এই বিষয়ে সরব হওয়ায় সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং পুলিশের ন্যায্য দাবি পূরণে কী পদক্ষেপ নেয়।