Sunday, December 7, 2025
HomeBharatরাজস্থানে উট পরিবহন নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হলো

রাজস্থানে উট পরিবহন নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হলো

- Advertisement -

উট—যাকে দীর্ঘকাল ধরে ‘মরুভূমির জাহাজ’ বলা হয়ে এসেছে—শুধু একটি প্রাণী নয়, এটি রাজস্থানের (Rajasthan) অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বহনকারী। উটের সাহায্যে হাজার হাজার পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত, আর উটের ব্যবসা ও মেলা ছিল মরু অঞ্চলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের অপরিহার্য অংশ।

কিন্তু সময়ের পরিবর্তন এবং নীতিগত কারণে এই জীবন্ত সংস্কৃতির সুতা ধীরে ধীরে ছিঁড়তে শুরু করে। ২০১৪ সালে রাজ্য সরকার উটকে রাজস্থানের রাজ্য প্রাণী ঘোষণা করে। পরের বছর আসে রাজস্থান উট (কসাই থেকে বাঁচানো এবং অস্থায়ী স্থানান্তর বা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৫, যা উটকে রাজ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়া বা রপ্তানি নিষিদ্ধ করে, এমনকি নন-স্লটার উদ্দেশ্যে হলেও, সরকারি অনুমতি ছাড়া। উদ্দেশ্যটি যথাযথ এবং ন্যায়সঙ্গত ছিল: কমে আসা উটের সংখ্যা রক্ষা করা, অবৈধ বাণিজ্য ঠেকানো এবং মরুভূমির সংবেদনশীল প্রাণী সংরক্ষণ করা।

   

কাগজে সবকিছু সুন্দর দেখালেও বাস্তবে এই আইন উট পালনের জীবিকা ধ্বংসের পথে আরও বাধা সৃষ্টি করল। ইতিমধ্যেই উট সংস্কৃতি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছিল—যন্ত্রচালিত পরিবহন ব্যবহার বৃদ্ধি, ইন্দিরা গান্ধী খাল যে প্রথাগত রুটগুলো পরিবর্তন করেছে, চারণভূমি হারানো এবং চাহিদার পতন সব মিলিয়ে উট পালনের প্রথাগত জীবনযাত্রাকে দুর্বল করে তুলেছিল।

উটের সংখ্যা হ্রাসের ইতিহাস উদ্বেগজনক: ১৯৯২ সালে রাজস্থানে ৭,৫৬,০০০ উট ছিল, যা ২০০৪ সালে ৪,৯৮,০০০, ২০১২ সালে ৩,২৫,০০০ এবং ২০১৯ সালে মাত্র ২,১৩,০০০ এ নেমে আসে। এনজিও এবং মরুভূমির মেলার হিসেব অনুযায়ী, বর্তমান উটের সংখ্যা মাত্র প্রায় ১,৩০,০০০। অর্থাৎ, ২০১৫ সালের আইন, যদিও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত, উট পালকদের মূল জীবিকা—বাজার—কেই বন্ধ করে দিয়েছিল।

বাজারের অভাবে, উট পালকেরা আর নিজের উট বিক্রি করতে পারছিল না। ফলে তাদের জীবিকা সংকুচিত হলো, এবং অনেকেই অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হল। মেলার ঘাটতি ও বাণিজ্যের সংকোচন উটকে শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে নয়, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। উটের মেলা আর নয়; মরুভূমির জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হারিয়ে যাচ্ছিল।

কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য সরকার একটি নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে—উটকে আবার মুক্তভাবে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলো। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য শুধু সংরক্ষণ নয়, বরং উট পালকদের পুনরুজ্জীবিত করা এবং ঐতিহ্য রক্ষা করা। উটরা এখন আবার মরুভূমির পথে ঘুরতে পারবে, বাজারে তাদের প্রয়োজনীয়তা ফিরবে এবং উট পালকেরা নিজ জীবিকায় ফিরে আসবে।

এই পদক্ষেপকে কেবল পশুপালন বা ব্যবসার জন্য নয়, রাজস্থানের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ** হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে সংরক্ষণ নীতি এবং মানুষের জীবিকা একসাথে চলতে পারে। উটেরা পুনরায় মরুভূমির জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে, আর লোকজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যও এই প্রাণীদের সঙ্গে বেঁচে থাকবে।

রাজস্থানের এই উদ্যোগ শুধু উটের সংখ্যা বাড়ানোই নয়, বরং এক পুরনো সংস্কৃতি ও জীবিকার পুনর্জীবনের প্রতীক। এটি দেখায় যে সঠিক নীতি এবং বাজারের সমন্বয় দিয়ে একটি প্রাচীন জীবিকা ও পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব।

 

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular