রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মা (Bhajan Lal Sharma) বুধবার (৩০ এপ্রিল ২০২৫) রাজ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের (Illegal Bangladeshi Immigrants) বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি রাজ্যে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের চিহ্নিত করে তাদের নির্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনা একাধিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর দেওয়া হয়েছে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পর্যালোচনা করেছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানা গেছে, “মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি কর্মকর্তাদের এই ধরনের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে এবং নির্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছেন।”
অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশনা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের চিহ্নিতকরণ এবং নির্বাসনের জন্য তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজস্থানও এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে। গত জানুয়ারিতে রাজস্থানে ৫০০ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৩৯৪ জন ছিলেন রোহিঙ্গা এবং ১০৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি। এছাড়া, গত বছরের অক্টোবর এবং নভেম্বরে জয়পুরে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের আটক করা হয়, যাদের মধ্যে ১১ জনকে ইতিমধ্যে নির্বাসন করা হয়েছে।
এই অভিযানের অংশ হিসেবে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা অবৈধভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা তথ্য এবং স্থানীয় সহায়তার উপর নির্ভর করবে। এই অভিবাসীরা প্রায়ই জাল নথি ব্যবহার করে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেয়, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মার নির্দেশনা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে অবৈধ অভিবাসনকে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে অন্যান্য নির্দেশনা
অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের নির্দেশ ছাড়াও, মুখ্যমন্ত্রী শর্মা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পর্যালোচনা বৈঠকে তিনি রাজ্যের কৃষকদের জন্য ২০২৭ সালের মধ্যে দিনের বেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন। শিল্প খাতের জন্যও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থাকে দূরদর্শী পরিকল্পনার মাধ্যমে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন। রবি মরসুমে কৃষকদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নিকট ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনায় বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস প্রস্তুত করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (এডিবি) একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে রাজ্যের সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নতিকরণ এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এডিবি-র সঙ্গে এই সহযোগিতা রাজস্থানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য এই ধরনের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতার উপর জোর দিয়েছেন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
মুখ্যমন্ত্রী শর্মার এই নির্দেশনা রাজস্থানে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত পোস্ট অনুসারে, রাজ্য সরকার অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে তাদের নির্বাসনের প্রক্রিয়া জোরদার করছে। জয়পুরে পুলিশ ইতিমধ্যে জাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের আটক করেছে, এবং তদন্তে জানা গেছে যে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের জাল নথি সরবরাহে সহায়তা করছিল।
এই অভিযান জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার এবং আইনি নীতি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। অভিবাসীদের নির্বাসনের আগে তাদের পরিচয় এবং নাগরিকত্ব যাচাইয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অন্যান্য রাজ্যের প্রেক্ষাপট
রাজস্থান ছাড়াও গুজরাট, দিল্লি, তেলেঙ্গানা এবং ওড়িশার মতো রাজ্যগুলিতে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চলছে। গুজরাটে সম্প্রতি ১,০০০-এর বেশি বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে জাল নথি ব্যবহার করে বসবাস করছিল। দিল্লিতে পুলিশ গত কয়েক মাসে শতাধিক অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে, এবং তাদের নির্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই অভিযানগুলি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অংশ, যা গত ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে শুরু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মার নির্দেশনা রাজস্থানে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। এই অভিযান জাতীয় নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংবেদনশীলভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কৃষকদের কল্যাণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। রাজস্থান সরকারের এই বহুমুখী পদক্ষেপ রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।