জয়পুর: মরু রাজ্যের বুকে আবারও বাজল সোনার ঢাক। রাজস্থানের বানসওয়াড়া জেলায় খোঁজ মিলেছে এক বিশাল সোনার খনির, যা ভারতের অর্থনৈতিক মানচিত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। সরকারি ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা সংস্থা (GSI)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ১১৩ মিলিয়ন টন আকরিকের মধ্যে ২২২ টন খাঁটি সোনার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। এই আবিষ্কার ভারতের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম সোনার মজুত, জগপুরা ও ভূকিয়া খনির পরেই এর স্থান।
এই আবিষ্কারের ফলে বানসওয়াড়া এখন দেশের নতুন ‘গোল্ড হাব’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, একমাত্র এই খনি থেকেই আগামী দশকগুলিতে ভারতের বার্ষিক সোনার চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হবে। গোল্ড, ভারতীয় সমাজে শুধু অলঙ্কার নয় এটি আর্থিক স্থিতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক।
UPSC মেডিকেল অফিসার পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড প্রকাশ, ডাউনলোডের সরাসরি লিঙ্ক সক্রিয়
কিন্তু ভারতের সোনার প্রয়োজনের প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ আমদানি করতে হয়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডারে চাপ ফেলে। ফলে বানসওয়াড়ার এই নতুন সোনার ভান্ডার দেশের অর্থনীতিকে আমদানি নির্ভরতা থেকে কিছুটা মুক্ত করতে বড় ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
রাজস্থানের ভূতাত্ত্বিক দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এটি কেবল একটি সাধারণ খনি নয়, এটি ভারতের ভবিষ্যতের অন্যতম কৌশলগত সম্পদ হতে চলেছে। এখানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খনন শুরু হলে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত খুলবে।”
বানসওয়াড়ার স্থানীয় মানুষদের মধ্যেও দেখা গেছে উচ্ছ্বাস। বহু বছর ধরে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত এই অঞ্চলের মানুষদের কাছে নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, খনি প্রকল্পটি পূর্ণমাত্রায় চালু হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২৫,০০০-৩০,000 কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
অন্যদিকে, পরিবেশবিদদের একাংশ সতর্ক করেছেন “খনন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত না হলে জলস্তর নেমে যাওয়া ও বনাঞ্চলের ক্ষতি হতে পারে।” তাঁদের মতে, উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশ রক্ষা দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই আবিষ্কারের ফলে রাজস্থান এখন দেশের ‘খনিজ শক্তি কেন্দ্র’ হিসেবে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। জগপুরা, ভূকিয়া এবং বানসওয়াড়া এই তিনটি অঞ্চল মিলে এখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলকে পরিণত করছে এক নতুন স্বর্ণভূমিতে।
ভারত সরকারের খনিজ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বাণিজ্যিক খনন প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি হবে। কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথভাবে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। বিদেশি খনন সংস্থাগুলিও ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী এই আবিষ্কারকে “রাজ্যের গৌরব ও দেশের অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরতার প্রতীক” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ রমেশ গৌতমের কথায়, “ভারতে বছরে প্রায় ৮০০ টনের বেশি সোনা ব্যবহৃত হয়। তার এক-চতুর্থাংশ যদি দেশের মাটিতেই উৎপন্ন হয়, তাহলে সেটি ভারতের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে।” সব মিলিয়ে মরুর রাজ্যে এই ‘সোনার বিপ্লব’ শুধু রাজস্থানের নয়, গোটা ভারতের জন্যই এক নতুন সূচনা হতে চলেছে যেখানে অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান একসঙ্গে গড়ে তুলবে ভারতের সোনালি ভবিষ্যৎ।


